ঠাকুরবাড়িতে রান্না নিয়েও নিত্যনতুন চর্চা হত, সাবেকী এবং অত্যাধুনিক খাবার তৈরির প্রচলন ছিল। যার শুরু প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর হাত ধরে। ঠাকুরবাড়ির কন্যা প্রজ্ঞাসুন্দরী, হেমেন্দ্রনাথের সন্তান, বিবাহসূত্রে অসমের সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়ার পত্নী। রান্নাকে তিনি শিল্প হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। রন্ধনচর্চা তাঁর কাছে ছিল সৃজনশীল এক কর্মেরই সুশৃঙ্খল অনুশীলন। সেই সৃষ্টির আনন্দযজ্ঞে বসুধাকুটুম্বকে আমন্ত্রণ জানাতেই সেযুগে হাতে কলমও তুলে নিয়েছিলেন প্রজ্ঞাসুন্দরী।
এরপর ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, তিনি যে রন্ধনপটিয়সী ছিলেন এমনটা নয়। তবে যেখানেই যেতেন কোনো রান্না ভালো লাগলে লিখে রাখতেন খাতায়। তার সারা জীবনের অমূল্য সংগ্রহ তিনি দিয়ে যান পূর্নিমা ঠাকুরকে।
ঠাকুরবাড়ির বাকী মেয়ে-বৌ রাও সাহিত্যচর্চা, সাজগোজের পাশাপাশি রান্নাতেও পারদর্শী ছিলেন। মৃণালিনীদেবী রান্না করছেন আর পাশে একটা মোড়ায় বসে রবীন্দ্রনাথ নতুন রান্নার ফরমায়েশ করে তার মালমশলা হাতে হাতে এগিয়ে দিচ্ছেন এ ছিল ঠাকুরবাড়ির পরিচিত ছবি।
কাসুন্দি দিয়ে পাটপাতার ঝোল, ছোলা ও ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুর শাক, পুঁইপিটুলির চচ্চড়ি, সজনে শাকভাজা রসুন দিয়ে, কচি লাউয়ের ডগা দিয়ে মটর ডাল, মুসুরি ডালের বড়া দিয়ে মোচাঘণ্ট, ডুমুর আলুর রসা, বকফুল আর পাটপাতার বড়া, কাঁচা ইলিশের ঝোল জাতীয় মহার্ঘ সব পদ রান্না করা হত।
আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী, আপামর বাঙালির কাছে এক বিশেষ দিন, উৎসবের দিন। কবিগুরুর পছন্দের ৬ টি রান্না রইলো আজ আপনাদের জন্য।
আদার মাছ
কী কী লাগবে
রুই মাছের পেটি চারটে
মাঝারি সাইজের আলু দুটো ডুমো করে কাটা
মাঝারি সাইজের বেগুন একটি ডুমো করে কাটা
বড় সাইজের পিঁয়াজ দুটি কুচনো
হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ
লঙ্কাগুঁড়ো ১ চা চামচ
ধনে বাটা ১ চা চামচ
চিরে রাখা কাঁচালঙ্কা চারটি
সাদা তেল ২ টেবিল চামচ
ঘি ১ টেবিল চামচ
তেজপাতা দুটো
আদা বাটা ১.৫ চা চামচ
কিভাবে বানাবেন
মাছ নুন হলুদ মাখিয়ে ভেজে কাঁটা ছাড়িয়ে রাখুন।
তেল গরম করে পেঁয়াজ দিয়ে হালকা সোনালী হওয়া অব্দি ভাজুন। এতে আলু দিন। আলু সিদ্ধ হয়ে এলে বেগুন দিন। বেগুন ভাজা ভাজা হয়ে এলে হলুদ, লঙ্কা, ধনে বাটা একসঙ্গে জলে গুলে দিয়ে কষে নিন। চিনি, নুন ও কাঁচা লঙ্কা দিন। সবকিছু ভাজা ভাজা হয়ে এলে মাছটি দিয়ে দিন। ভালো করে ঘেঁটে সবজি সঙ্গে মাছটি মিশিয়ে নিন। একটু জলের ছিটে দিন।
অন্য একটি প্যানে ঘি গরম করুন। তেজপাতা ও আদাবাটা ফোড়ন দিন। এইটি সবজিটি ভাজা ভাজা হয়ে এলে ওপর থেকে ছড়িয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
মুরগির রসল্লা
কী কী লাগবে
মুরগির মাংস ৭৫০ গ্রাম
টক দই ৩৫০ গ্রাম
রসুন বাটা ১.৫ চা চামচ
শুকনো লঙ্কা বাটা ১.৫ চা চামচ
আটটি চিরে নেওয়া কাঁচা লঙ্কা
চারটি বড় পেঁয়াজ কুচিয়ে রাখা
৪ খানা তেজপাতা
ঘি ১০০ গ্রাম
কিভাবে বানাবেন
একটি পাত্রে মুরগির মাংস, ঘি, টক দই, পেঁয়াজ কুচি, চিরে রাখা কাঁচালঙ্কা, রসুন বাটা, শুকনো লঙ্কা বাটা, নুন, তেজপাতা সবকিছু একসঙ্গে মেখে নিয়ে দু'ঘণ্টা রেখে দিন।
কড়াই তে সামান্য ঘি আলাদা করে গরম করে এই মিশ্রণটি ঠেলে দিয়ে চাপা দিন। চাপা যেন আলগা না থাকে। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে একটু নেড়ে দিন। দই এবং মুরগির মাংসের জলেই রান্নাটি হয়ে যাবে। জল মরে গেলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
বেগুন বড়ার সুক্তানি
কী কী লাগবে
বড় বেগুন ফালি করে কেটে রাখা ১
মটর ডাল হাফ কাপ
কচি নিমপাতা আট থেকে দশটা
আদা বাটা ১ টেবিল চামচ
পোস্ত বাটা ১.৫ টেবিল চামচ
নুন ও চিনি স্বাদ অনুসারে
ঘি ১ টেবিল চামচ
বড়া ও বেগুন ভাজার জন্য সাদা তেল
কিভাবে বানাবেন
মটর ডাল আগের রাত্রে ভিজিয়ে রাখুন সকালে ভালো করে বেটে সামান্য আদা নুন চিনি দিয়ে ফেটিয়ে ছোট ছোট বড়া ভেজে রাখুন। বেগুন তেলে ভেজে নিন। নিম পাতা ভেজে তুলে রাখুন।
ঘি গরম করে এতে পোস্তবাটা দিয়ে সামান্য নেড়ে চেড়ে বেশি করে জল দিয়ে দিন। গ্রেভিটা ফুটে উঠলে বড়াগুলো ছেড়ে দিন। বড়াগুলোতে জল ঢুকে নরম হয়ে গেলে বেগুন গুলি দিয়ে দিন। আদা বাটা মিশিয়ে নিন। নিম পাতা উপর থেকে আধ গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিন। সামান্য ঘি উপরে ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
শসা ও নারকোল দুধ দিয়ে চিংড়ি মাছ
কী কী লাগবে
আড়াইশো গ্রাম মাঝারি চিংড়ি
দুটি বড় শশা
একটি বড় পেঁয়াজ কুচি করে কাটা
পাতলা নারকোল দুধ এক কাপ
ঘন নারকোল দুধ 3/4 কাপ
ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ
আদা কুচি ১ টেবিল চামচ
রসুন কুচি ১.৫ টেবিল চামচ
লাল লঙ্কা বাটা ১ চা চামচ
ঘি ১ চা চামচ
কিভাবে বানাবেন
পাতলা নারকোল দুধে ঘি এবং ঘন নারকোল দুধ ছাড়া অন্যান্য সব উপকরণ মিশিয়ে নিন। কড়াইয়ে কি গরম করে এই মিশ্রণটি ঢেলে দিয়ে ধীমে আছে ঢাকা দিয়ে এটিকে রেখে দিন। আধঘন্টা পরে এটিতে ঘন নারকোল দুধ নুন ও মিষ্টি মিশিয়ে নিন। এই সময় ঢাকনা খুলে রাখবেন। কিছুক্ষণ পরে শসা এবং চিংড়ি মাছ সেদ্ধ হয়ে গেলে পরিবেশন করুন।
দইয়ের মালপোয়া
কী কী লাগবে
মিষ্টি দই আড়াইশো গ্রাম
ময়দা 50 গ্রাম
ঘি এক চা চামচ
মৌরি এক চা চামচ
ঘন চিনির রস
কিভাবে বানাবেন
দই খুব ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। ময়দায় ঘি দিয়ে ময়ান দিয়ে নিতে হবে। অল্প অল্প করে ময়দা দইয়ে মিশিয়ে ভালো করে ফেটাতে হবে।
এতে মৌরি দিন। চাইলে একটু কাজু অথবা পেস্তা কুচিও দিতে পারেন। কড়াইতে তেল গরম করুন। গোল হাতা করে কিছুটা করে গোলা তেলে ছাড়ুন। লাল লাল এবং গোল হয়ে ফুলে উঠলে চিনির রসে ফেলুন। কিছুক্ষণ পরে তুলে নিন।
মেটের ফেরিজি
কী কী লাগবে
মুরগির মেটে ২৫০ গ্রাম
বড় সাইজের আলু তিনটি
বড় পেঁয়াজ দুইটি
গোল মরিচ গুড়ো ১ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা আটটি
ঘি ২ টেবিল চামচ
নুন স্বাদ মতন
কিভাবে বানাবেন
মেটে জলে সেদ্ধ করে নিন। এর পরে মেটে এবং আলু ফিঙ্গার চিপসের মত সাইজে কেটে নিন পেঁয়াজ সরু লম্বা করে কেটে নিন।
পেঁয়াজগুলিতে গোল মরিচ গুঁড়ো, নুন এবং অর্ধেক পরিমাণে কাঁচা লঙ্কা কুচি মেখে রাখুন।
একটি ফ্রাইং প্যানে ঘি গরম করুন। ঘি গরম হয়ে এলে আলু গুলি ছেড়ে দিন। আলু গুলি হালকা ভাজা ভাজা হয়ে এলে মসলা মাখা পেঁয়াজ টি দিয়ে দিন। পেঁয়াজ নরম হয়ে গেলে মেটে দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ ভেজে কিছু টি জল দিয়ে ফুটতে দিন। জল শুকিয়ে গিয়ে ভাজা ভাজা হয়ে তেল ছেড়ে দিলে পরিবেশন করুন।
Comentários