পুরোনো হেঁশেলের রান্নার গল্প..
খাঁটি বাঙালি রান্না বলে কিছু হয় কি? পুরোপুরি খাঁটি না হলেও বেশ কিছু রান্না আছে, যা চট করে রেস্তরাঁর মেনুতে আপনি পাবেন না। মা-ঠাকুমার হেঁশেলে সেই রান্নার চল থাকলেও এখনকার গৃহিণীরা সেই রান্না প্রায় ভুলতে বসেছেন। ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে। সেই জন্য সময়কে খানিকটা দায়ী করা যায় বটে। ব্যস্ত জীবনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সব রান্নার অতুলনীয় স্বাদ। এমনই পাঁচটি রেসিপির সন্ধান দিলেন রন্ধন বিশেষজ্ঞা শর্মিষ্ঠা দে।
শতাব্দী প্রাচীন গোলাপ সরবৎ
কী কী লাগবে
ছোট এলাচ ২-৩ টি, টকদই ৫০০ গ্রাম, গোলাপের সিরাপ ১/২ কাপ, গোলাপ এসেন্স সামান্য (প্রাচীন কালে গোলাপ জলের মধ্যে গোলাপের পাপড়ি ভিজিয়ে বেটে তাই দিয়ে সরবৎ হত)
কীভাবে বানাবেন
টক দই, গোলাপ সিরাপ, ছোট এলাচ, গোলাপ এসেন্স সমস্ত মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ফেটিয়ে নিন। এবার একটি লম্বা গ্লাসে ঢেলে দিন। ওপরে বরফ কচি দিয়ে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
আনারসী মুরগি
কী কী লাগবে
মুরগির মাংস ১ কেজি, আনারস বাটা ১ কাপ, পেঁয়াজ আদা রসুন বাটা ১/২ কাপ, নুন, কাঁচালঙ্কা ৬-৭ টি চেরা, Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ৪ টেবিল চামচ, গোটা গরম মশলা ৫ টি, সরষে বাটা ২ টেবিল চামচ, পোস্ত বাটা ২ চা চামচ, টমেটো ২ টো, আনারসের স্লাইস কয়েকটা, মাটির হাঁড়ি ১ টি
কীভাবে বানাবেন
আনারসের টুকরো ছাড়া সমস্ত উপকরণ মাংসের সঙ্গে মেখে ১ ঘন্টা রেখে দিন। একটি মাটির হাঁড়ি আগে থেকে ধুয়ে শুকিয়ে রাখুন। এই হাঁড়িতে সরষের তেল মাখিয়ে নিয়ে মেখে রাখা মাংস ঢেলে মুখ আটা দিয়ে বন্ধ করে দমে বসিয়ে রান্না করুন। আটা শুকিয়ে গেলে ঢাকনা খুলে দিন। অন্য প্যানে আনারসের টুকরো গুলো ভেজে ওপরে ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
মাংসের পাশ বালিশ
কী কী লাগবে
মাংসের কিমা ২৫০ গ্রাম, নুন, Shalimar's লঙ্কার গুঁড়ো ১ চামচ, Shalimar's গরম মশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনেপাতা ১ আঁটি, পেঁয়াজ আদা রসুন বাটা ১/২ কাপ, কাঁচালঙ্কা ৪-৫ টি, ব্রেড ২ টি, আলু সেদ্ধ ২ টি, ব্রেড ক্রাম্ব, ডিম
কীভাবে বানাবেন
মাংসের কিমা, নুন, লঙ্কার গুঁড়ো, গরম মশলা, পেঁয়াজ আদা রসুন বাটা দিয়ে মেখে ১ ঘন্টা রেখে দিন। এবার প্যানে তেল দিয়ে ঐ কিমা কষে নিন। নামিয়ে ঠান্ডা হলে ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা, ব্রেড, আলু সিদ্ধ একসাথে মেখে নিন। এবার এর থেকে লেচি কেটে পাশ বালিশের আকারে গড়ে নিন। ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে ব্রেড ক্রাম্বে গড়িয়ে নিন। ডুবো তেলে সোনালী করে ভেজে স্যালাড আর সস সহ পরিবেশন করুন।
কাঁচা আম আর সরষে দিয়ে কাতলা মাছ
কী কী লাগবে
কাতলা মাছ ১/২ কেজি, কাঁচা আম ১ টি, সরষে বাটা ১/২ কাপ, কাঁচালঙ্কা ৫-৬ টি, Shalimar's সরষের তেল ১/২ কাপ, Shalimar's হলুদ, নুন, ধনেপাতা, সরষে ১/২ চা চামচ, চিনি সামান্য
কীভাবে বানাবেন
কাতলা মাছ, নুন, হলুদ মাখিয়ে রাখুন। তেল গরম করে মাছ ভেজে তুলে নিন। আম, সরষে বাটা, কাঁচালঙ্কা, হলুদ, নুন দিয়ে কষে নিন। তেল ছেড়ে এলে এতে মাছ দিন। অল্প চিনি আর জল দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। অন্য প্যানে অল্প তেল গরম করে সরষে ফোড়ন দিয়ে মাছের ওপর ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
দিলখুশ পোলাও
কী কী লাগবে
বাসমতী চাল ৩ কাপ, ঘি ১/২ কাপ, নুন, সামান্য Shalimar's হলুদ/ জাফরান, গোটা গরম মশলা ৬-৭ টি, কেওড়া জল সামান্য, চিনি ১/২ কাপ, দুধ, ছানা ২৫০ গ্রাম, ময়দা প্রয়োজন অনুযায়ী, কাজুবাদাম, কিশমিশ
কীভাবে বানাবেন
ছানা তিনভাগে ভাগ করুন। এক ভাগে ময়দা দিয়ে মেখে নিন। এক ভাগ সাদা থাকবে, অন্য ভাগে হলুদ দিয়ে মেখে নেবেন। ময়দা দিয়ে যেটা মেখেছেন, সেটা থেকে বল তৈরী করে ভেজে তুলে চিনির রসে ফেলুন। বাকি ছানার ছোট্ট ছোট্ট বল বানিয়ে চিনির রসে ফুটিয়ে রসগোল্লা বানিয়ে নিন। একটি বড় প্যানে চাল ভেজে নিন। এতে দিন গোটা গরম মশলা, চিনি, নুন, জাফরান, দুধ, অল্প জল দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। পোলাও হয়ে গেলে কেওরা জল, ভাজা কাজুবাদাম কিশমিশ মেশান। উপরে সাদা হলুদ রসগোল্লা ও লাল মিষ্টি দিয়ে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
ছট লক্ষী ও সূর্য পুজো..
কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে হয় ছট পুজো।প্রথম দিন স্নান, দ্বিতীয় দিন খরনা, তৃতীয় দিন সন্ধ্যা অর্ঘ্য এবং চতুর্থ দিন ঊষা অর্ঘ্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চার দিনব্যাপী উৎসব। ছট মহাপর্ব সূর্য পূজার সবচেয়ে বড় উৎসব। সূর্যদেবের মধ্যেই নিহিত থাকে প্রাণশক্তি। এ ছাড়াও তার ভীষণ তেজে ধ্বংস হয় রোগ জীবাণু। তাই সূর্যদেবের প্রভাবে পরিবারের লোকজনকে সুস্থ রাখতেই এই পুজো করা হয়। সূর্যদেবের সঙ্গে সঙ্গে পূজিতা হন ছঠি মাইয়াও। তাঁকে আবার ছট লক্ষ্মী বলা হয়। মতপার্থক্যে, ছঠি মাইয়া মা ষষ্ঠীর রূপ, আবার সূর্যদেবের বোনও বটে। তাই পুজো করা হয় সূর্যদেবের। ষষ্ঠী পুজোর দিনে সন্ধ্যায় দান করা হয় সান্ধ্য অর্ঘ্য। কথিত, রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয় করে ফিরে এসে পুজো করেন কুলদেবতা সূর্যের। সেই পুজো নাকি হয়েছিল ছট পুজোর সময়েই। কার্তিক শুক্লা চর্তুথী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী অবধি চলে এই পুজো। এই ব্রতে রয়েছে টানা ৩৬ ঘণ্টা উপোসের উপাচারও। নারী পুরুষ নির্বিশেষে পালন করেন এই ব্রত।
এবছর ছট পুজো কবে?
ষষ্ঠী তিথি ৭ নভেম্বর, ২০২৪ বেলা ১২টা ৪১ মিনিট থেকে শুরু করে ৮ নভেম্বর, ২০২৪ বেলা ১২টা ৩৪ মিনিটে সমাপ্ত হবে। উদয়া তিথি অনুসারে, ছটপুজো ৭ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার পালন হবে।
স্নান-খাওয়া ৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার
খরনা ৬ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার
সন্ধ্যা অর্ঘ্য ৭ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার
ঊষা অর্ঘ্য ৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার
চারদিনের এই ব্রত তে কী কী হয়?
প্রথম দিন- ছটপুজোর প্রথম দিনকে নহায়-খায় বলে। এই দিনে ব্রত রাখেন যাঁরা তাঁরা একবেলা খাবার খান। সবজি হিসেবে খাঁটি ঘিতে ছোলার ডাল ও করলা তৈরি করে খেয়ে থাকেন। শুধু উপবাসকারীই নয়, পরিবারের সকলেই এই খাবার খেতে পারে।
দ্বিতীয় দিন- ছটপুজোর দ্বিতীয় দিন খরনা বলা হয়। এই দিনে ছটমাতার জন্য ভক্তরা ভোগ নিবেদন করেন। সন্ধেবেলা মিষ্টিভাত এবং লাউয়ের খিচুড়ি খাওয়ার পরম্পরা রয়েছে। খরনার অর্থ হল শুদ্ধিকরণ। এদিন সন্ধ্যের সময়য় প্রসাদ হিসেবে গুড়ের ক্ষীর তৈরি করা হয়। সারাদিন ধরে উপবাস রাখার পর সন্ধ্যের সময় এই সুস্বাদু খাবারটি খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করা যায়। এরপর সেই প্রসাদ সকলের কাছে বিতরণ করা হয়। এই প্রসাদ খাওয়ার পর মোট ৩৬ ঘণ্টা নির্জলা উপবাস রাখা নিয়ম। এই দিন যা যা নৈবেদ্য তৈরি হবে, তা একটি নতুন মাটির উনুন গড়ে, তারপর রান্না করা হয়।
তৃতীয় দিন- সন্ধে অর্ঘ্য- ভক্তরা সন্ধেবেলা সূর্যদেবতাকে অর্ঘ্য দেন। একে সন্ধ্যে অর্ঘ্যও বলা হয়। এদিন থেকে নির্জলা উপবাস রাখা উচিত। উপোস রেখেছেন যাঁরা, তাঁরা সূর্য ওঠার আগের রাতে রাখা চিনি-মিছরির জল খেতে পারেন। এরপর সন্ধ্যের সময় বা সূর্যাস্তের পর সূর্যদেবকে পুজো করে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এদিন ঠেকুয়া, মরসুমি ফল, আখ, কলা ইত্যাদি ফল ও সবজি দিয়ে সূর্যদেবকে নিবেদন করা হয়।
চতুর্থ দিন- ঊষা অর্ঘ্য আর পারণ- সকালে ভক্তরা সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন এবং পারণ অনুষ্ঠান করেন। এদিন সকলেই ছঠি মাইয়া ও সূর্যদেবের কাছে সন্তানসুখ ও পরিবারের সুখ-শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রার্থনা করে থাকেন। সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের দিকে মুখ করে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। তারপর উপবাস ভঙ্গ করা যায়।
মাহাত্ম্য এবং ব্রতকথা:
প্রথম মনু স্বয়ম্ভুর পুত্র রাজা প্রিয়ব্রতের কোন সন্তান ছিল না। এ কারণে তিনি মন খারাপ করতেন। মহর্ষি কাশ্যপ রাজাকে পুত্র লাভের জন্য যজ্ঞ করতে বললেন। মহর্ষির আদেশ অনুসারে রাজা যজ্ঞ করলেন। এর পরে, রানী মালিনী একটি পুত্রের জন্ম দেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শিশুটি মৃত জন্মগ্রহণ করে। এতে রাজা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গভীরভাবে শোকাহত হন। তারপর আকাশ থেকে একটি রথ মাটিতে অবতরণ করল যাতে মাতা ষষ্ঠী বসেছিলেন। রাজা তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন- আমি ব্রহ্মার মানস কন্যা ষষ্ঠী দেবী। আমি পৃথিবীর সকল শিশুকে রক্ষা করি এবং নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান লাভের বর দিই। এর পরে, দেবী মৃত শিশুর দিকে তার হাত বাড়িয়ে,তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, যা তাকে জীবিত করেছিল। দেবীর এই কৃপায় রাজা খুব খুশি হলেন এবং তিনি ষষ্ঠী দেবীর পূজা প্রচলন করলেন। এর পরেই ধীরে ধীরে এই পূজা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হয়।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
ছট পূজা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের একটি জনপ্রিয় উৎসব। এটিই একমাত্র উৎসব যেখানে সূর্য দেবতার পূজা করা হয় এবং তাকে অর্ঘ্য নিবেদন করা হয়। হিন্দু ধর্মে সূর্য পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তিনিই একমাত্র দেবতা যাকে সরাসরি দেখা যায়। বেদে সূর্যকে জগতের আত্মা বলা হয়েছে। সূর্যের আলোর অনেক রোগ ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। সূর্যের শুভ প্রভাবে ব্যক্তি স্বাস্থ্য, গতি এবং আত্মবিশ্বাস লাভ করে। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে সূর্যকে আত্মা, পিতা, পূর্বপুরুষ, সম্মান এবং উচ্চ সরকারি চাকরির কারক বলা হয়েছে। ছট পূজায় সূর্য দেবতা ও ছটি মাতা অর্থাত্ ষষ্ঠী দেবীর পূজা করলে সন্তান, সুখ ও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়। সাংস্কৃতিকভাবে ছট উৎসবের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর সরলতা, পবিত্রতা এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা।
পুজোর ডালাতে কী কী থাকে?
ছট পুজোর ডালাতে থাকে হলুদ গাছ, আম পল্লব, নারকেল, কলার কাঁদি, বিভিন্ন ফল, ঠেকুয়া ও খাস্তা টিকরি। নদীর ঘাটে বসে একমনে সূর্যদেবের আরাধনা করার পর নামতে হয় কোমর জলে। নদীর বুকে দাঁড়িয়ে পুজোর ডালা সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করে, ধূপ ধুনো দেখিয়ে হয় আরতি। অবশেষে পরিবারের সকলের নাম করে একটা একটা করে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীর বুকে। এটাই এই পুজোর নিয়মরীতি। ডালার প্রসাদ বাড়িতে নিয়ে যান সকলে। বাড়ি ফেরার পরও কিন্তু উপোস ভাঙা হয় না।
প্রসাদের জন্য কী কী বানাতে পারেন?
ছট পুজোর প্রসাদে ঠেকুয়া, ৫টি পাতা সহ আখ, বাতাবি লেবু, ন্যাশপাতি, কলা, পানিফল, মূলো, আদা, কাঁচা হলুদ, নারকেল, মিষ্টি, গুড়, ঘি, রাঙা আলু, মধু, আটা এই সব সাজিয়ে দেওয়ার রীতি রয়েছে। রবিবার রাত থেকেই ছটের হরেক প্রসাদ তৈরি হচ্ছে বাড়িতে। ঠেকুয়ার কথা তো সকলে জানেন, তবে আর কী কী থাকে জানেন কি? রইলো দুখানি রেসিপি।
হারা চানা
কী কী লাগবে
সবুজ মুগ- ১ কাপ
টমেটো- ১ টা
কাঁচালঙ্কা- ৩ টে
ধনে গুঁড়ো- ১ চামচ
গোটা জিরে- ১ চামচ
আদা কুচি- ১ চামচ
সৈন্ধব নুন
হলুদ
ঘি
ধনেপাতা কুচি
কীভাবে বানাবেন
প্যানে ঘি গরম করে ওর মধ্যে গোটা জিরে, গ্রেট করা আদা, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নাড়তে থাকুন। এবার ওর মধ্যে টমেটো কুচি মিশিয়ে নিন। অল্প আঁচে ৫ মিনিট রান্না করুন। টমেটো সিদ্ধ হয়ে এলে হলুদ, জিরে গুঁড়ো আর সৈন্ধব নুন নিয়ে নাড়তে থাকুন। এবার ওর মধ্যে ভেজানো মুগ দিয়ে নাড়তে থাকুন। ৪-৫ মিনিটের জন্যে তা ঢেকে রাখুন। এরপর এর মধ্যে ১ কাপ গরম জল মিশিয়ে দিন। উপর থেকে ধনেপাতা ছড়িয়ে দিলেই তৈরি হারা চানা।
চালের লাড্ডু
ছট পুজোয় নানা রকম মিষ্টি বানানো হয়। সেই তালিকায় যেমন ঠেকুয়া, পায়েস রয়েছে তেমনই আছে চালের লাড্ডু। খুব কম সময়ের মধ্যেই বানিয়ে ফেলা যায় এই মিষ্টি। মূলত চালের গুঁড়ো দিয়ে বানানো হয়।
কী কী লাগবে
গুঁড়ো করা আতপ চাল- ১ কেজি
পাটালি গুড়- ৫০০ গ্রাম
ঘি- হাফ কেজি
মৌরি- ৩ চামচ
কীভাবে বানাবেন
কড়াইতে ঘি গরম করে ওর মধ্যে চালের গুঁড়ো, গুড়, মৌরি মিশিয়ে খুব ভাল করে পাক করে নিতে হবে। এবার ওই মিশ্রণ থেকেই গোল শেপের লাড্ডু পাকিয়ে নিন। তাহলেই তৈরি।
ভাইফোঁটার মিষ্টিমুখ..
পূর্বিতা মন্ডল
আম ক্ষীর
কী কী লাগবে
দুধ-১ লিটার
চিনি -১/২ কাপ
এলাচ গুঁড়ো -১/২ চা চামচ
গ্রেট করা খোয়া-২ টেবিল চামচ
কেশর-১ চিমটে
পাকা আমের পাল্প-১ কাপ
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে মিডিয়াম আঁচে দুধ জ্বাল দিতে হবে এবং ১/২ কাপ চিনি দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে হবে। গরম দুধের কড়াই থেকে দুচামচ মত দুধ একটা বাটিতে তুলে নিয়ে তার মধ্যে ১ চিমটে কেশর ভিজিয়ে সরিয়ে রাখতে হবে।
দুধ মিডিয়াম থেকে হাই হিটে ঘন ঘন নাড়ার পর কমে ৩০০ মিলি লিটার হলে,একে একে কেশর ভেজানো দুধ,এলাচ গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে পুরোপুরি ঠান্ডা করে নিতে হবে। এবারে ১ কাপ আমের পাল্প ভালো করে মিশিয়ে বাদাম কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
মতিচুর লাড্ডু
কী কী লাগবে
বেসন-১ কাপ
কেশর রং-১/২ চা চামচ
চিনি -১ কাপ
লেবুর রস -১ চা চামচ
জল-১/২ কাপ
গোটা এলাচ -৩ টি
গোলাপ জল -১/২ চা চামচ
চারমগজ-১ টেবিল চামচ
কাজুবাদাম কুচি-১/২ টেবিল চামচ
কিসমিস -১ টেবিল চামচ
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে চিনির সিরাপ বানানোর জন্য ১ কাপ চিনি,১/২ কাপ জল, তিনটি গোটা এলাচ (হালকা থেঁতলে নেওয়া), এক চিমটে কেশর ফুড কালার দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে,যতক্ষণ চ্যাটচ্যাটে না হচ্ছে। চ্যাটচ্যাটে হলে আঁচ থেকে নামিয়ে দিতে হবে ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে। এখন ১ কাপ বেসন, ১/৪ চা চামচ কেশর ফুড কালার দিয়ে, পরিমাণ মতো জল দিয়ে একটা ব্যাটার বানাতে হবে। খুব ঘন বা মোটা ব্যাটার হবে না। এবারে কড়াই এ ডালডা তেল দিয়ে (না থাকলে ভেজিটেবল অয়েল) আঁচ মিডিয়াম এ রেখে, কড়াই এর উপর একটি ঝাঁঝরি রেখে, অল্প করে ব্যাটার ঝাঁঝরি র উপর দিয়ে তেলে ১ থেকে ২ মিনিটের জন্য দানা গুলো ভেজে নিতে হবে মিডিয়াম আঁচে। সমস্ত দানা ভাজা হয়ে গেলে গরম রসে ফেলতে হবে। একে একে বাদাম কুচি, চারমগজ, কিসমিস, ১চা চামচ গাওয়া ঘি এর মধ্যে দিয়ে আঁচের উপর চাপিয়ে মিডিয়াম আঁচে রান্না করতে হবে যতক্ষণ না সমস্ত রস টেনে না নিচ্ছে। পুরো মিশ্রণ চ্যাটচ্যাটে হলে ও রস পুরো শুকিয়ে গেলে গ্যাস থেকে নামিয়ে হালকা গরম অবস্থায় গোল গোল করে পাকিয়ে নিলে তৈরি মোতিচুর লাড্ডু।
কেশর পেস্তা শ্রীখন্ড
কী কী লাগবে
ভালো করে জল ঝরানো টক দই -৩০০ গ্রাম
কনডেন্সড মিল্ক -১/৪ কাপ
গুঁড়ো চিনি -১ টেবিল চামচ
পেস্তা এসেন্স-২ ফোঁটা
পেস্তা বাদাম কুচি -১ টেবিল চামচ
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা ধরে জল ঝড়িয়ে রাখা টক দই -৩০০ গ্রাম, ভালো করে হুইস্কার করে ফেটিয়ে নিতে হবে , যাতে দানা না থাকে। এবারে একেএকে গুঁড়ো চিনি, কনডেন্সড মিল্ক, পেস্তা এসেন্স দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে উপরে সামান্য কেশর,পেস্তা বাদাম কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
ইন্সট্যান্ট কালাকাঁদ
কী কী লাগবে
দুধ -২ লিটার
চিনি -১ কাপ(১২০ গ্রাম)
মাওয়া বা খোয়া-১০০ গ্রাম
ভিনিগার -১ টেবিল চামচ
এলাচ গুঁড়া -১ চা চামচ
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে ২ লিটার দুধ, একটি কড়াই এ নিয়ে গরম করে, তাতে ১/২ কাপ মতো চিনি যোগ করতে হবে।
চিনি ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে দুধ উচ্চ তাপমাত্রায় ঘন করে নিতে হবে।
ক্রমাগত নাড়তে নাড়তে দুধ যখন ৪০০ মি.লি.হবে,তখন ১ টেবিল চামচ ভিনেগার মিশিয়ে নিতে হবে। ভিনিগার দেওয়ার সাথে সাথে দুধ হালকা ছানা কাটা হবে, তখন আরও ৫ মিনিট লো থেকে মিডিয়াম আঁচে ভালো করে নেড়ে নিয়ে ১০০ গ্রাম কোরানো খোয়া ও এলাচ গুঁড়ো যোগ করে একটা জমাট বাঁধা মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।
একদম শেষে তৈরি হওয়া মিশ্রণ টা একটা ঘি মাখানো থালার উপর ছড়িয়ে, হালকা গরম অবস্থায় চৌকাকারে কেটে রেখে দিতে হবে। পুরোপুরি ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন ইনস্ট্যান্ট কালাকাঁদ।
নরম পাকের সন্দেশ
কী কী লাগবে
১.৫ কেজি ফুল ফ্যাট দুধ ।
চিনি -১ কাপ(১২০ গ্রাম)
এলাচ গুঁড়া -১ চা চামচ
ভিনিগার -৪ টেবিল চামচ
জল-১/২ কাপ
কীভাবে বানাবেন -
প্রথমে ভিনিগার ও জল মিশিয়ে পাশে সরিয়ে রাখতে হবে।
এবারে,১.৫ কেজি দুধ গরম করে নিয়ে,ফুটে উঠলে এর মধ্যে ভিনিগার মিশ্রিত জল দিতে হবে। ছানা কেটে গেলে,জল ঝরতে দিতে হবে।
১ ঘন্টা ভালো করে জল ঝরিয়ে নেওয়ার পর, ছানা ভালো করে হাতে মাখিয়ে নিতে হবে, যেন দানা না থাকে।
এবারে একটা কড়াই এ ছানা ও চিনি ভালো করে মিশিয়ে আঁচে বসিয়ে মিডিয়াম আঁচে ৪ থেকে ৫ মিনিট ধরে নেড়ে নিতে হবে। একদম শেষে এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে ভালো করে নেড়ে নিয়ে বেশ মাখামাখা হলে আঁচ থেকে নামিয়ে দিতে হবে, পছন্দের শেপ দিলেই তৈরি নরম পাকের সন্দেশ।
দই বড়া
কী কী লাগবে
বিউলির ডাল – ২৫০ গ্রাম
নুন – ২ চামচ
বিটনুন – ১ চামচ
টক দই – ৬০০ গ্রাম
মৌরি – ১ চামচ
জিরে – ১ চামচ
সাদা তেল – ৫০০ গ্রাম
চিনি – ৩ চামচ
কাঁচা লঙ্কা – ৫ টি
আদা বাটা – ১ চামচ
ধনে পাতা কুচি – ১ কাপ
ঝুড়ি ভাজা – ১ কাপ
গ্রীন চাটনি – ১/২ কাপ
তেতুলের রেড চাটনি – ১/২ কাপ
ভাজা মসলা(জিরে, মৌরি, ধনে, শুকনো লঙ্কা ড্রাই রোস্ট করে গুঁড়ো) – ১ চামচ
কীভাবে বানাবেন
বিউলির ডাল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সারারাত জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরেরদিন ডালের জল ভালো করে ঝরিয়ে নিন। এবারে একটি মিক্সিং জারে ডাল, কাঁচা লঙ্কা ও আদা বাটা দিয়ে খুব ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে। এরপরে ডাল বাটার মিশ্রণ ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। তারজন্যে একটি পাত্রে নেবো বাটা ডাল, ১/২ চামচ মৌরি, ১/২ চামচ জিরে, ২ চামচ টক দই, ১/২ চামচ নুন ও ১/২ চামচ বিটনুন। এবার সব উপকরণগুলো হাত দিয়ে বেশ খানিকক্ষন ধরে ফেটিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি গোল গোল করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফেটাতে থাকলে ডালের রং বেশ সাদা হয়ে আসবে। তবে পুরোপুরি ফেটানো হয়েছে কিনা তা জানার জন্যে একটি পাত্রে কিছুটা জল নিয়ে ফেটানো ডালের মিশ্রণ একটু দিয়ে দিতে হবে। যদি ডালের মিশ্রণ সাথে সাথে ভেসে ওঠে তাহলে ডাল ভালো করে ফেটানো হয়ে গেছে। এরপরে একটি কড়াইতে বেশ খানিকটা তেল মিডিয়াম আঁচে গরম করে তাতে ফেটানো ডালের মিশ্রণ ছোট ছোট বলের মতো করে ভেজে নিতে হবে। বড়াগুলো হালকা সোনালি রঙের করে ভেজে তুলে নিতে হবে। এবার একটি বড়ো পাত্রে বেশ খানিকটা জল দিয়ে তারমধ্যে ১/২ চামচ নুন ও ১/২ চামচ চিনি ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে ভেজে রাখা বড়াগুলো দিয়ে ডুবিয়ে রেখে দেব ২০ মিনিট। ২০ মিনিট পর জল থেকে বড়াগুলো তুলে নিয়ে আলতো করে চেপে অতিরিক্ত জল বের করে নিতে হবে। এরপরে একটি পাত্রের মধ্যে টক দই, ২ চামচ চিনি, ১ চামচ নুন ও কিছু আইস কিউব দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে। এবারে মিশ্রণটির মধ্যে ২ কাপ জল মিশিয়ে মিশ্রণটিকে একটু বাড়িয়ে নিতে হবে। এই দইয়ের মধ্যে বড়াগুলো ভালো করে ডুবিয়ে কিছুক্ষন ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এবারে বড়াগুলো ফ্রিজ থেকে বের করে একটি প্লেটের মধ্যে দিয়ে ওপর থেকে গ্রীন চাটনি, তেতুলের চাটনি, বিটনুন, ধনে পাতা কুচি, ঝুরি ভাজা ও ভাজা মসলা ছরিয়ে পরিবেশন করুন সুস্বাদু দই বড়া।
অন্দর সজ্জায় রং এবং মোটিফ..
যেকোনো সাজ বা সজ্জার মতই অন্দর সজ্জার একটা আবেদন আছে আমাদের চোখে। অন্দর সজ্জা অনেকখানি নির্ভর করে রংয়ের উপর। কারণ রঙের মাধ্যমে আমরা আমাদের আবেগ প্রকাশ করতে পারি। যা মানুষ দেখতে পায়। তবে অন্দরসজ্জা কেবলমাত্র দেখতে ভালো লাগার জন্যই যে করা হয় তেমনটা কিন্তু নয়। ঘর সাজানোর সময় তার ব্যবহারিকতার কথা এবং আমাদের রুচি পছন্দের কথা মাথায় রাখতে হবে। ঘরে থাকা মানুষের রুচি, পছন্দ, ব্যক্তিত্ব, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আমাদের একটা সম্যক ধারণা হয় সেই বাড়ির অন্দর সজ্জা থেকে।
রং বলতে মূলত এখানে আমরা দেওয়ালের রং নিয়ে আলোচনা করলেও মনে রাখতে হবে রং কিন্তু ঘরের আসবাব পত্র আপহোলস্ট্রি থেকে শুরু সমস্ত ব্যবহারের জিনিসেও থাকে। সেক্ষেত্রে কোন রঙের ব্যবহার কোথায় করা উচিৎ বা অনুচিৎ সেটা দেওয়ালের রঙের ওপর নির্ভর করে ঠিক করতে হবে।
আজকাল বাড়ির দেওয়াল রং করার সময় তার ওপর বিভিন্ন ধরনের সেপ বা মোটিফ তৈরি করা হয়। কিন্তু একটা ছোট ফ্ল্যাটের ছোট ঘরে যদি অহেতুক অনেক বড় মোটিফ কিংবা অনেক বেশি উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয়, সেই ফ্ল্যাট বা বাড়ি টি খুব একটা ব্যবহারযোগ্য হবে না। তাই মোটিফ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ব্যবহরিকতার কথা মনে রাখতে হবে। এই কারণে আজকাল অনেক মানুষের পুরো ফ্ল্যাট একটাই মাত্র রঙে রং করেন যেমন, অফ হোয়াইট, লাইট গ্রে, আইভরি রং বা ক্রিম কালার দিয়ে অনেকেই সম্পূর্ণ বাড়ি বা ফ্ল্যাট রং করে থাকেন। তার সঙ্গে ব্যবহার করেন হাইলাইটার। তবে বড় বাড়ি বা ফ্ল্যাট হলে ঘরের মেঝে, ছাদ এবং বিভিন্ন দেওয়ালে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে কালার কম্বিনেশন এর কথা। ছোট বা বড় ফ্ল্যাট কিংবা বাড়িতে আজকাল মোটিফ এর ব্যবহার চোখে পড়ে সে মোটিফ যেমনই হোক, ফ্লোরাল, অ্যাবস্ট্রাক্ট, লিফ কিংবা জিওমেট্রিক, মাথায় রাখা দরকার যে ছোট ঘরে র জন্য ছোট মোটিফ এবং বড় ঘরের জন্য বড় মোটিফ মানানসই হবে। ছোট ঘরের ক্ষেত্রে মোটিফ কে শুধু হাইলাইটার হিসেবে ও ব্যবহার করা যেতে পারে। দেওয়ালের ওপর মোটিফ বানানোর সহজ উপায় হল স্টিকার ব্যবহার করা। আজকাল অনেকেই দেওয়াল সাজানোর জন্য স্টিকার ব্যবহার করে থাকেন। যেটা খুব সহজে অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায়। স্টেনসিল ও ব্যবহার করছেন অনেকে। এছাড়াও বড় বাড়ির ক্ষেত্রে পেইন্টিং কিংবা ম্যুরালের ব্যবহার ও চোখে পড়ছে আজকাল। অনেকে আবার দেওয়ালের ওপর ক্রিয়েট করছেন টেক্সচার কেউ কেউ অবশ্য ওয়ালপেপার ও ব্যবহার করেন।
আমরা যেহেতু রং আর মোটিফ নিয়েই আজ আলোচনা করছি তাই কোন ঘরএ কোন রং ব্যবহার করা যায় কিংবা যায় না তার একটা উদাহরণ রাখলাম। যদিও নিয়মের বাইরে অনেকেই অনেক রং ব্যবহার করে থাকেন তাদের রুচি পছন্দ কিংবা স্টাইলিং এর আইডিয়ার ওপর তবুও সব জিনিসের যেমন একটা ব্যাকরণ হয় তেমনি অন্দর সজ্জার ব্যাকরণ মেনে এখানে কিছু ঘরের উপযোগী রঙের সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
লিভিং রুম বা বসার ঘর- ঘর যদি খুব ছোট না হয়, তাহলে একাধিক রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত দেখা যায় ছোট ফ্ল্যাটেও লিভিং কাম ডাইনিং রুম টি সবচাইতে বড় হয়। সেক্ষেত্রে ডাইনিং এর দেয়ালে লাল, হলুদ ,কমলা জাতীয় রংয়ের ব্যবহার করা যেতে পারে। ফ্ল্যাট বা বাড়ি ছোট হলে ,অন্যান্য দেওয়াল গুলোতে হালকা রং করা যায়। বড় বাড়ির ক্ষেত্রে অবশ্য একাধিক গাঢ় রং এর ব্যবহার ও সম্ভব। বসার ঘর ছোট হলে গাঢ় রং যেমন কালো, গাঢ় নীল এড়িয়ে চলা ভালো।
শোয়ার ঘর- শোয়ার ঘরের জন্য সবচাইতে ভালো রং গুলি হল নীল, সবুজ, বেজ,অফ হোয়াইট,হালকা গোলাপি অথবা ধূসর। যেই রং গুলি শোয়ার ঘরের জন্য অনুপযোগী সেগুলি হলো লাল, কালো, গাড়ো খয়েরি, গাঢ় বেগুনি, কমলা এবং উজ্জ্বল হলুদ।
রান্না ঘর- এর জন্য উপযোগী হল ওয়ার্ম কালার, যেমন হলুদ, সেজ গ্রীন, বেজ এবং ক্রিম কালার। রান্নাঘরের দেওয়াল রং করার ক্ষেত্রে গাড়ো রং এবং কুল কালার ব্যবহার না করাই ভালো। এক্ষেত্রে কালো, স্লেট কালার, নীল এই রং গুলো রান্নাঘর রং করার জন্য উপযোগী নয়। রান্না ঘরে সাদা রং এড়িয়ে চলুন কারণ এক্ষেত্রে রান্না করার সময় যেমন অসুবিধে হতে পারে তেমনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ক্ষেত্রেও অসুবিধে হতে পারে।
বাথরুম- স্নানের ঘর এর দেওয়াল রং করার জন্য সবচেয়ে উপযোগী রং হল হালকা ধূসর, হালকা নীল, স্টোন কালার, সি ব্লু বা টার্কিশ ব্লু ,সবুজ ইত্যাদি। অনুপযোগী রং গুলির মধ্যে রয়েছে পিচ, সাদা, কালো, হলুদ, গাড়ো লাল, গোলাপি এবং সোনালী রং এই রং গুলো আপনার ত্বকের রং পরিবর্তন করে দেখাবে আয়নায়।
ছোটদের ঘর- কিডস রুম রং করার ক্ষেত্রে ছোটদের পছন্দের কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে এক্ষেত্রে ছোট ঘর হলে তুলনামূলকভাবে হালকা রং এবং বড় ঘর হলে গাড়ো রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিছু রং কোথায় ব্যবহার করা উপযোগী সে প্রসঙ্গে একটা ধারণা রইল-
লাল -গাঢ় লাল রং শোয়ার ঘরের পক্ষে অনুপযোগী হলেও খাওয়ার ঘরের জন্য উপযোগী, অন্তত খাওয়ার ঘরের একটা দেওয়াল লাল রঙের করাই যেতে পারে। লক্ষ্য করে দেখবেন অনেক রেষ্টুরাতে দেওয়াল লাল রংয়ের রং করা হয়। কারণ লাল রং খিদে বাড়াতে সাহায্য করে কথোপকথন এর ইচ্ছে বাড়ায় কিন্তু খুব বেশি লাল রঙের ব্যবহার অবশ্যই এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ মানুষের উত্তেজনা বা ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ হতে পারে এই রং।
গোলাপি- এই রং হোম অফিসের জন্য খুব ভালো, কারণ গোলাপি রং যথেষ্ট চিয়ারফুল অথচ কাম ফিলিং দেয় । শোয়ার ঘরে ও হালকা গোলাপি রঙের ব্যবহার করা চলতে পারে।
কমলা - এই রঙকে আমরা আনন্দের রং বলে থাকি, কমলা রঙের ব্যবহার ক্রিয়েটিভিটি বাড়ায়। কাজের ঘরের জন্য বা হোম অফিসের জন্য কমলা রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে ছোটদের ঘর রং করার ক্ষেত্রেও কমলা রঙের ব্যবহার চলতে পারে।
হলুদ- খুবই পজিটিভ এবং ব্রাইট একটা কালার রান্নাঘর বা খাওয়ার ঘরের জন্য এই রঙটি ভালো পড়ার ঘরেও ব্যবহার করা চলতে পারে।
বেগুনি- এই রংটি আধ্যাত্মিক, ক্রিয়েটিভিটি, লাক্সারি, ঐশ্বর্য্য এর অনুভূতি দেয়।এই রংটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার না করে অন্যান্য রঙের সঙ্গে হাইলাইট হিসেবে ( যেমন হালকা গোলাপীর স্যাথে শোয়ার ঘরে, অথবা হালকা ল্যাভেন্ডার এর সাথেও মেডিটেশন এর ঘরে, অফ হোয়াইট বা নীলের সাথে বসার ঘরে) ব্যবহার করা যায়। শোয়ার ঘর,বসার ঘর, কাজের ঘরের জন্য এমনকি পুজোর ঘর কিংবা মেডিটেশন এর ঘরেও এই রংটি ব্যবহার করা যায়। হালকা বেগুনি রংয়ের শোয়ার ঘর ব্যবহার করলে নিজেকে রাজা বা রাণীর মত মনে হবে।
নীল- নীল রং প্রচন্ড কামিং একটা রং এই রংটি শোয়ার ঘর কিংবা স্নানের ঘরে ব্যবহার করুন সাধারণত স্পা কিংবা পার্লারে নীল বা সবুজ রঙের ব্যবহার হয়ে থাকে মেডিটেশন এর ঘরের জন্য নীল রং ব্যবহার করা যেতে পারে। নীল রং যেহেতু কামিং এফেক্ট দেয় তাই রান্নাঘরে বা খাওয়ার ঘরে এই রঙের ব্যবহার না করাই শ্রেয় যেহেতু নীল রং ভরসার অনুভূতি দেয় তাই অফিসের জন্য নীল রং খুবই ভালো। স্টাডি রুম্বা পড়ার ঘরেও এই রংটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সবুজ- খুব রিলাক্সিং অথচ চিয়ারফুল রং হল সবুজ কারণ সবুজ রংটি নীল এবং হলুদ রঙের মিশ্রণে তৈরি ফলতো নীল রঙের কামিং ফিলিং এবং হলুদ রঙের চিয়ারফুল অনুভূতি দুটোই উপস্থিত এই সবুজ রংয়ের মধ্যে রংটি যত উজ্জ্বল হবে তত চিয়ারফুল ফিলিং বাড়বে। আর যত নীল ঘেঁষা হবে তত কামিং ফিলিং বাড়িয়ে দেবে । শোয়ার ঘর, বসার ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম বা বারান্দার জন্য সবুজ রং উপযুক্ত।
খয়েরি রং- এটি একটি ওয়ার্ম কালার, আজকাল অনেকেই বসার ঘরে এই রঙের ব্যবহার করে থাকেন যদি হালকা সেডের খয়রি হয় ,তাহলে শোয়ার ঘরেও এই রঙটি ব্যবহার করা যেতে পারে, ওয়ার্ম কালার হওয়ার জন্য রান্নাঘরে কিংবা খাওয়ার ঘরেও খয়রি রং বা টেরাকোটা রংয়ের ব্যবহার আজকাল দেখা যায়। তবে এই রং ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে খুব ছোট ঘরের জন্য কিন্তু গাঢ় খয়েরী রংটি একেবারেই অনুপযোগী সে ক্ষেত্রে অবশ্য বেজ রং ব্যবহার করা যায়।
সাদা- প্রকৃতপক্ষে সাদা কোনো রং ই নয় । ঘর বড় দেখাতে সাদার জুড়ি মেলা ভার। তবে সম্পূর্ণ সাদা বা ট্রু হোয়াইট কালার এর ব্যবহার না করে অফ হোয়াইট বা আইভরি ব্যবহার করা ভালো।
কালো- কালো রং কে রং এর মধ্যে ধরায় হয় না কারণ প্রাইমারি, সেকেন্ডারি বা টার্শিয়ারি কালারের মধ্যে এটা পড়ে না । কিন্তু ঘরের দেওয়ালে কালো রং করলে ঘর খুবই রাজকীয় দেখাতে পারে। মনে রাখতে হবে কালো রং করলে যে কোন ঘরকে ছোট দেখায়। আবার ডিপ্রেশনের বাড়ায় এই রং। তাই শুধুমাত্র হাইলাইটার হিসেবেই এই রং ব্যবহার করা শ্রেয়। অনেকে কালো রংয়ের বদলে চারকোল কালার বা স্লেট কালার ব্যবহার করে থাকেন অর্থাৎ যেই রং টা ট্রু ব্ল্যাক নয় কিন্তু ব্ল্যাক এর কাছাকাছি।
এবার আসি বাস্তু শাস্ত্রের কথায়, বাস্তু অনুযায়ী প্রতিটা দিকের একটা নির্দিষ্ট এলিমেন্ট রয়েছে এবং সেই এলিমেন্ট অনুযায়ী প্রতিটি দিকের নির্দিষ্ট কিছু রংও রয়েছে। যারা বাস্তু মানেন তারা এই রং গুলির ব্যবহার করে থাকেন।
5 টি এলিমেন্ট দিয়েই পৃথিবী তৈরি, মূলত 5 টি দিক এ পাঁচটি এলিমেন্ট এর প্রাধান্য রয়েছে
যেমন-
নর্থ বা উত্তর দিক এর এলিমেন্ট হলো জল। এই দিকের উপযোগী রং হলো বিভিন্ন সেডের নীল এবং কালো।
পূর্ব বা ইস্ট এর এলিমেন্ট উড। এই দিক এর উপযোগী রং হল বিভিন্ন শেডের সবুজ এবং খয়রি।
সাউথইস্ট বা দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এলিমেন্ট ফায়ার। কমলা লাল গোলাপি হলুদ বা বেগুনি হল এই দিকের উপযোগী রং।
সাউথ ওয়েস্ট বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের এলিমেন্ট আর্থ। এদিকের উপযোগী রংগুলি হল বেজ, টেরাকোটা, স্যান্ড কালার এবং খয়েরি।
পশ্চিম দিক বা ওয়েস্ট এর এলিমেন্ট হল মেটাল। ধূসর, সাদা ,হালকা নীল, সিলভার এগুলি হল এই দিককার উপযোগী রং।
বাস্তু মেনে বাড়ি সাজানোর ক্ষেত্রে এই রংগুলি যে সরারি ব্যবহার করতে হবে তামন নয় বরং সেক্ষেত্রে পর্দায়, বিছানার চাদরে, সোফার কাভারে, কুশনে বা নানান ধরনের সাজানোর জিনিসে কিংবা ফুলদানি বা ফুলে এই রঙের ব্যবহার করে, ঘরে বাস্তু ব্যালেন্স যেতে পারে।
শাড়ি হোক বা ফর্মাল, রূপোর ফ্যাশন এখন স্টাইলে ইন, যত্ন নেবেন কীভাবে?
হ্যান্ডলুম থেকে ঢাকাই মসলিন, ইক্কত অথবা বিষ্ণুপুরী সিল্ক; শাড়ির সঙ্গে রুপোর গয়নার সঙ্গত আপনার সাজকে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দেবে তা বলাই বাহুল্য। আবার ফিউশন এবং সেমি ফর্মাল পোশাকের সঙ্গেও রুপোর গয়না এখন ভীষণ ভাবে ট্রেন্ডি। তবে শাড়ির সঙ্গে ভারী এবং ট্রাইবাল ধাঁচের গয়না বেছে নিলেও, ফিউশন ও সেমি ফর্মাল পোশাকের জন্য পড়ুন জ্যামিতিক বা অ্যাবস্ট্রাক্ট নকশার গয়না। তবে, গয়না তো শুধুমাত্র কিনলেই হবে না। তার যত্নআত্তি করা চাই। কীভাবে রাখলে বহুবছর পর্যন্ত একই রকম জ্বেলা থাকবে, চলুন জেনে নিই।
১.একটি পাত্রে অ্যালুমিনিয়ম ফয়েল রেখে তার উপর রুপোর গয়না রাখুন। এবার ২ চামচ বেকিং সোডা মেশানো ঈষদুষ্ণ জল ওর উপর ঢালুন। আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পরে আলতো হাতে গয়না পরিষ্কার করে নিন। নরম পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন। দেখুন, হারানো উজ্জ্বলতা আবার ফিরে এসেছে।
২.অনেক সময়েই রুপোর গয়নায় মুক্তো এবং অন্যান্য দামী পাথর বসানো থাকে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু গয়না ধরে ঈষদুষ্ণ জলে চোবানো যাবে না। সেক্ষেত্রে টুথপেস্ট ঘসে পরিস্কার করে নিতে পারেন।
৩.পারফিউম, লোশন, হেয়ার সিরাম এগুলো রূপোর রং কালো করে দেয়। তাই প্রতি বার ব্যবহারের পরে গয়না নরম কাপড় দিয়ে মুছে তারপর তুলে রাখুন। এমন ভাবে রাখবেন, যাতে সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকে।
৪.রূপোর গহনা চকচকে করতে লেবুর জুড়ি নেই। একটি লেবু কেটে তার মধ্যে লবণ লাগিয়ে গয়নার ওপর ঘসে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিন। নিমেষেই ঝকঝকে হবে।
৫.গয়না পরিষ্কার করার জন্য পলিশিং ক্লথ অনলাইনে পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ব্র্যান্ড ডিসপোজেবল ও পুনঃব্যবহারযোগ্য পলিশিং ক্লথ তৈরী করে। গয়নার উপর আঙুলের ছাপ, ময়লা, স্ক্র্যাচ, তেলের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। রত্নখচিত গয়না থেকে ময়লা বের করতেও পলিশিং ক্লথ ব্যবহার করতে পারেন।
Comments