মহিষাসুরমর্দিনী দেবীর জানা-অজানা বিভিন্ন রূপের বর্ণনা করলেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাঙালির সব থেকে প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজো। দেবী দুর্গা, বাঙালির কাছে তাদের ঘরের মেয়ে। আসেন, সুদুর কৈলাসে বাবা ভোলানাথের কাছ থেকে এবং সপরিবারে। তাঁর পুজো বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে এক বিশেষ আসন লাভ করেছে। মহালয়ার ভোরের মাঙ্গলিক শঙ্খ ধ্বনি, বাঙালির মনে মায়ের আগমন বার্তা দেয়। তাদের মানসপটে শারদীয় দুর্গাপূজার এক আনন্দময় স্বর্গীয় দৃশ্য ভেসে ওঠে। শুরু হয় মহাপুজো উপলক্ষে মায়ের বোধন।
আশ্বিন মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথির সন্ধাকালই হল মহাদেবীকে বোধনের আসল সময়। বোধনের স্থান, বেলগাছের মূলে ঘট স্থাপন করে। বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গাপুজো হবে। মঠের সবার মনে আনন্দের স্রোত বইছে। সবাই মাতৃপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত। মহাদেবী দুর্গার বোধন হবে। শাস্ত্রমতে নানা উপাচারে দেবীর পূজা হবে। রুদ্ররূপের প্রতিভূ কল্পনা করা হয় বেলগাছকে। সবার মনোলোকেই মা দুর্গা বিরাজমান, সবার চিন্তা তাঁকে নিয়ে। যথা সময়ে ও নিয়মে মহাশক্তি মহামায়ার বোধন আরম্ভ হল। স্বামী বিবেকানন্দ ভাববিহ্বল মনে
গাইতে লাগলেন-
বিশ্ববৃক্ষমূলে পাতিয়া বোধন
গণেশের কল্যাণে গৌরীর আগমন।
ঘরে আনব চন্ডী কর্ণে শুনব চন্ডী
আসবে কত দন্ডী যোগী জটাধারী
গিরি, গণেশ আমার শুভকারী।'
দেবীদুর্গার নামের অন্ত নেই মহিষমর্দিনী, চন্ডী, কাত্যায়নী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা, মঙ্গলচণ্ডী ইত্যাদি। স্বয়ং রামচন্দ্র দেবীর দশন পেয়ে ১০০৮ নামে তাঁর স্তুতি করেন। মহাভারতে পাই অর্জুন দেবীর প্রসন্নতার জন্য তাঁর স্তব করেন। দেবীদুর্গা স্তুতিতে প্রসন্না হন, তিনি শরণাগতকে রক্ষা করেন ও ভক্তের ইচ্ছা পূরণ করেন। সব মহাপুরাণ, উপপুরাণ ওর চৌষট্রিটা তন্ত্রে মহামায়া, অসংখ্য নামে, রূপে ও মাহাত্মো বর্ণিত হয়েছেন।
মার্কন্ডেয় পুরাণে দেখা যায়, শ্রী শ্রী চন্ডীর তিনটে ভাগ আছে। প্রথমটি হল দেবী মহাকালী। দশটি করে হাত, পা ও মাথা। আর একটি হল মা মহালক্ষ্মী দেবী। তিনি অষ্টদশভুজা, মাথা একটা ও পা দুটো। আরও একটি রূপ হল দেবী মহাসরস্বতী। তাঁর একটি মাথা, দুটি পা এবং তিনি অষ্টভূজা। অর্গলা স্তোত্রে জয়ন্তী, মঙ্গলা, কালী, ভদ্রকালে, কপালিনী, দুর্গা, শিবা, ক্ষমা, ধাত্রী, স্বাহা, স্বধা ইত্যাদি নাম ও রূপের পরিচয় পাই। মার্কন্ডেয় পুরাণে মহাদেবীর মাহাত্ম্য, এই তিন রূপ ও চরিত্রই ভাগ করা হয়েছে। প্রথম দেবী মহাকালীরূপে তিনি মধুকৈটভকে বধ করেন। দ্বিতীয় দেবী মহালক্ষীরূপে মহিষাসুরকে বধ করেন এবং তৃতীয় দেবী মহাসরস্বতীরূপে শুস্তুনিশুম্ভকে বধ করেন।
এই তিন মহাশক্তি প্রকৃতপক্ষে একই শুধুমাত্র লীলা করার জন্য তিনটি ভিন্ন নাম ও মূর্তিতে বিভক্ত হয়েছেন। এই তিন মূর্তির সমষ্টিগত রূপ ও শক্তি হলেন দেবী দুর্গা। এই তিন মূর্তিই আবার প্রপঞ্চ নবদুর্গা। শাস্ত্রমতে মহাদেবীর অনন্ত নাম ও রূপের মধ্যে নয়টি নামই রূপ বিশেষভাবে ধোয়। এই নামগুলি বৈদিক। ব্যক্তি বিশেষের দেওয়া নয়, অন্যদিকে আবার বিভিন্ন পুরাণে কলাসহ বিভিন্ন গাছে অধিষ্ঠিতনবমূর্তি নবপত্রিকা পুজোর জন্য নির্দিষ্ট আছে, যেটাকেও নবদুর্গা বলা হয়েছে। যেমন কলাগাছ পুজো করা হয় ব্রহ্মাণী, কচুতে কালিকা, হলুদে দুর্গা, জয়ন্তীতে কার্ত্তিকী, বেলে শিব, দাড়িমে রক্তদন্তিকা, অশোকে শোকরহিতা, মানে চামুন্ডা, ধানে লক্ষ্মী। এই নবপত্রিকা কলাবউ নামেও পরিচিত। সপ্তমীতে নবপত্রিকার পুজোর বিধান স্বয়ং দেবীই দিয়েছেন।
দুর্গা পুজো আশ্বিন ও চৈত্রমাসে হয়। তবে বাঙালির দুর্গা পুজো মানেই শরৎকালীন দুর্গোৎসব। প্রতিমার দিক থকে এই মহাপুজো সংহতির প্রতীক। মহদেবী কাত্যায়নীর আবির্ভাব মহিষাসুরকে বধের জন্য- মহিষাসুরমর্দিনী রূপে। দেবীমূর্তির সঙ্গে তাই স্বাভাবিকভাবে থাকে বাহন সিংহ ও মহিষাসুর। তবুও সংহতি সাধনের জন্য প্রতিমায় গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিকের উপস্থিতি। এর উদ্দেশ্য কিন্তু মহান ও জগতের কল্যাণ সাধন করা। কার্তিক পুজোয় পুত্রার্থীর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। গণেশের পুজো সর্বসিদ্ধিকামীর, লক্ষ্মী পুজো সম্পদকাঙ্ক্ষীর, বিদ্যার্থীরা বিদ্যার জন্য সরস্বতী পুজো করেন। কিন্তু জগত সংসারের মঙ্গলের জন্য মহাশক্তিময়ী মা দুর্গার পুজো যার পেছনে দেখতে পাই শিব শক্তি। আর এই শক্তির হাত ধরেই আসে অমৃতধার-কল্যাণ। প্রতিমার চালচিত্রে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর অবস্থান করেন। এটার দ্বারা প্রতিটি সম্প্রদায়কে এক সূত্রে গাঁথা হয়েছে। তাই এই পুজো মানুষের মিলন, ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে সবার কাছে গিয়ে মহা আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে সাধারণভাবে দুর্গাপুজোর সময় বহু দেবতার আরাধনা করলেও আসল তা সবই এক মহাশক্তিরই আরাধনা।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
'মিলেছি আজ মায়ের ডাকে ঘরের ছেলে পরের মত
ভাই ছেড়ে ভাই ক'দিন থাকে
মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।।'
এই মহাশক্তির আরাধনায় বাঙলার সব মানুষ, সব বিভেদ, হানাহানি। ভুলে একে অপরের সঙ্গে ভ্রাতৃরূপে আলিঙ্গনবদ্ধ হয়। সেটাই কবিগুরুর উক্ত লেখনীতে স্পষ্ট। অশুভ দানবশক্তির পয়াজয়ে উদ্বোধন হয় মানুষের। দেবী মহাশক্তির। মানুষের মনে অবস্থিত মহা অসুর মহিষকে দেবী যেন সংহার করেন তাইতো ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই মিলিত হয় মহাবিজয়ের উৎসবে। সুতরাং দুর্গাপুজোর মাধ্যমে দেশের মানুষের। সংহতি রক্ষিত হয়।
সমগ্র জগত সংসারে সদা খেলা করে চলেছে শক্তি। তাই শক্তি ছাড়া জগত কল্পনা করা যায় না। দেবী দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে সাধক দেবীর কাছে পায় শক্তি, শত্রু বিজয়। শক্তিমানই কেবল শক্তির উপাসক হওয়ার যোগ এটা বীরের সাধনা। জগতে শক্তিমান হল তরুণ সম্প্রদায়, তাদের কাছে 'জীবন মৃতু্যু পায়ের ভূত্য'। দেবীর বোধন অর্থাৎ জাগরণের মধ্যেই শক্তির জাগরণ হয়। প্রবহমান কাল থেকেই আমজনতার প্রতিনিধি হয়ে তরুণ যুব সম্প্রদায় সর্বজনসুখায় সর্বজনহিতায়' কাজ করে। তাই তাদের উপরেই নির্ভর করে দেশের ভবিষ্যৎ। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন 'শক্তি, শক্তি চাই (শারীরিক মানসিক ও আধ্যাত্মিক)। শক্তিই সুখ ও আনন্দ। শক্তিই অনন্ত ও অবিনশ্বর জীবন। দুর্বলতাই অবিরাম দুঃখ ও উদ্বেগের কারণ- দুর্বলতাই মৃত্যু। বীর বসুন্ধরা ভোগ করে।' মহাশক্তি মহামায়া মা দুর্গার শক্তির প্রকাশ ঘটে যুব সমাজের মাধ্যমে। যার জন্য তারাই সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে মহাশক্তির উপাসক হয়। তাঁর মাধ্যমেই জগতের প্রত্যক্ষ কল্যাণ সাধিত হয়।
দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা সর্বৈশ্বর্যময়ী ও সর্ব শক্তিময়ী। কিন্তু বাঙালির কাছে তিনি পূজিত হন পরম আদরের দুলালি কন্যা রূপে। তাদের কাছে দেবীর মাতৃরূপ থাকে সুপ্তভাবে অপ্রকাশিত। তিনি তাঁর স্বামীগৃহ শিবের কৈলাসধান থেকে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন। মাত্র তিন দিনের জন্য। আর দশমীর দিন বাপের বাড়ির সবাইকে অশ্রুজলে ভাসিয়ে পূর্নযাত্রা করেন পতিগৃহে হরের ঘরে। সেই কৈলাসে। তাই তো আদুরে কন্যাকে দশমীর দিনে ঘরোয়াভাবে খেতে দেওয়া হয় কচুশাক, পান্তাভাত প্রভৃতি ঘরোয়া জিনিস। মেয়েরা বাপের বাড়িতে এলে তাঁর সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়, বাঙালি মেয়েরাও মহাদেবী দুর্গার সঙ্গে সেই ব্যবহার করেন। অনেকে বিশ্বাস করেন তিনি আসেন কন্যা হয়ে। এই জন্য দশমীর দিন যাওণের সময় ওঁকে বলি শিবের কাছে পতিগৃহে এখন যাও, কিন্তু আসছে বছর এই পরমক্ষণে আবার এসো।
শাস্ত্র বলছে-
গোচ্ছ দেবী পরং স্থানঃ যত্র দেবো মহেশ্বরঃ। সংবৎসরব্যতীত তু পুনরাগমনায়।।
নবরাত্রি নয় দিনে দেবী পূজিতা হন ৯টি আলাদা রূপে...
মহালয়া পরবর্তী তিথি প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত এই নয় তিথিকে একসঙ্গে নবরাত্রি বলা হয়। নবরাত্রি জুড়ে দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় নয়টি বিশেষ রূপে। প্রত্যেক তিথিতে, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত এক এক তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন এক এক রূপে।
শৈলপুত্রী: প্রতিপদ তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘শৈলপুত্রী’ রূপে। দেবী শৈলপুত্রী হিমালয়ের কন্যা। দেবী সতীর পুনর্জন্মের রূপ হিসাবে ধরা হয় মা দুর্গার এই রূপকে। এই দেবীর ডান হাতে ত্রিশূল এবং বাঁ হাতে পদ্ম, মস্তকে অর্ধ চন্দ্র থাকে। দেবী শৈলপুত্রী নন্দীর (ষাঁড়) উপর উপবিষ্ট। এই দিন অক্ষয় জ্যোতির ঘট স্থাপনা করে শুরু হয় পুজো। পর্বতরাজ হিমবাত বা হিমালয়ের মেয়ে হিসেবে তাঁকে মানার পাশাপাশি মহাদেবের স্ত্রী পার্বতীর বিশুদ্ধ রূপ হিসেবেও মান্যতা দেওয়া হয়। ষাঁড় নন্দীর পিঠে বসে ডান হাতে ত্রিশূল আর বাঁ হাতে পদ্মফুল নিয়ে থাকেন দেবী শৈলপুত্রী। তাঁকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবের শক্তির প্রতীকও মনে করা হয়।
ব্রহ্মচারিণী: দ্বিতীয়া তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘ব্রহ্মচারিণী’ রূপে। এই দেবীকে যোগিনী, সিদ্ধি, মুক্তি, মোক্ষ, শান্তি এবং সমৃদ্ধির দেবী বলে মানা হয়। হাতে কমণ্ডল এবং জপ মালা থাকে। সাদা পোশাক পরিহিত দেবী পরাশক্তির দ্বিতীয় রূপের নাম ব্রহ্মচারিণী। ইনি হলেন গুরুর থেকে শিক্ষাগ্রহণকারী একজন মহিলা ছাত্রীর প্রকাশ। যিনি অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে আশ্রমেই জীবনযাপন করেন এবং পবিত্র ধর্মীয় জ্ঞান অনুসরণ করে জীবন অতিবাহিত করেন। এই রূপে পূজিত দেবীর ডান হাতে জপমালা ও বাঁ হাতে কমণ্ডুলু রয়েছে।
চন্দ্রঘণ্টা: তৃতীয়া তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘চন্দ্রঘণ্টা’ রূপে। এই দেবী সৌন্দর্য এবং সাহসের প্রতীক। শক্তির এই রূপের ভক্তরা মনে করেন দেবী সন্তুষ্ট হলে দূর হয় শত্রুভয়। দূর হয় সব দুর্গতিও। প্রচুর গুণ বৃদ্ধি পায় সাহসও। শিব মহাপুরাণ মতে, দেবী চন্দ্রঘন্টা হলেন চন্দ্রশেখর রূপে ভগবান শিবের 'শক্তি'।
কুষ্মাণ্ডা: চতুর্থী তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘কুষ্মাণ্ডা’ রূপে। এই দেবী অষ্টভুজা এবং অষ্ট সিদ্ধিদাত্রী। দেবী কুষ্মাণ্ডা সিংহের উপর উপবিষ্ট। আলো ও শক্তির চূড়ান্ত উৎস হিসেবে পূজিত এই দেবীর আটটি হাত রয়েছে। যার প্রতিটিতে রয়েছে আলাদা আলাদা শক্তি ও আলোর উৎস।
স্কন্দমাতা: পঞ্চমী তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘স্কন্দমাতা’ রূপে। দেবী কার্তিকের জননী। দেবী স্কন্দমাতা চতুর্ভুজা এবং সিংহের উপর উপবিষ্ট। কথিত আছে যে তারকাসুর নামে এক অসুর ছিল। যার শেষ সম্ভব হয়েছিল একমাত্র শিবের পুত্রের হাতেই। মা পার্বতী তখন তার পুত্র স্কন্দকে (কার্তিকেয়) যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে স্কন্দমাতার রূপ ধারণ করেন। ভগবান কার্তিকেয় স্কন্দমাতার কাছ থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারাকাসুরকে বধ করেন।
কাত্যায়নী: ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘কাত্যায়নী’ রূপে। এই রূপেই দেবী মহিষাসুর বধ করেন। তিনি মধু পছন্দ করেন। ভক্তদের রোগ, শোক, দুঃখ, ভয়কে দূর করার আশীর্বাদ দেন। পতঞ্জলির মহাভাষ্য অনুযায়ী, দেবী মহাশক্তিরই আদি রূপ এই কাত্যায়নী। শাক্ত মত অনুযায়ী, দেবী কাত্যায়নী মহাশক্তির এক ভয়ংকর রূপ। তিনি দেবী চণ্ডী বা দেবী ভদ্রকালীর মতই যুদ্ধের দেবী হিসেবেই পূজিতা হন।
কালরাত্রি: সপ্তমী তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘কালরাত্রি’ রূপে। এই রূপ দেবীর হিংস্র, ভয়ঙ্কর রূপ। তাঁর প্রচণ্ড ভীতিপ্রদ রূপের জন্য দেবীর এই নামকরণ। কাজলের মতো ঘোর কালো এই দেবীর গাত্রবর্ণ। পুরাণ অনুসারে দুই রাক্ষস শুম্ভ ও নিশুম্ভ এবং তাঁদের দৈত্যসেনাকে দেখে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন দেবী দুর্গা। তখন এই ভয়ানক রূপ ধারণ করেন তিনি।
দেবী কালরাত্রির চারটি হাত। ওপরের ডান হাতে আশীর্বাদ, নীচের ডান হাতে অভয় মুদ্রা। বাঁ দিকে ওপরের হাতে খড়গ এবং নীচের বাম হাতে রয়েছে লোহার কাঁটা। দেবী ত্রিনয়নী এবং তাঁর চোখগুলি ব্রহ্মাণ্ডের মতো গোলাকার। দেবী কালরাত্রির চুল খোলা এবং গলায় বজ্রের মালা। এই দেবী গাধার ওপর আসীন এবং তাঁর নিশ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে ভয়ংকর অগ্নিশিখা নির্গত হয়। কালরাত্রির রূপ ভয়ংকর হলেও তিনি শুভফলের দেবী। তাই তাঁর অপর নাম শুভঙ্করী।
মহাগৌরী: অষ্টমী তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘মহাগৌরী’ রূপে। এই দেবীকে শান্তি এবং বুদ্ধিমত্তার প্রতীক হিসাবে মানা হয়। চতুর্ভুজা দেবী। তাঁর ডান দিকের এক হাতে থাকে ত্রিশূল। অন্য হাতে অভয়মুদ্রা। বাম দিকের ওপরের হাতে ধরা ডমরু। অন্য হাতে বরাভয় শোভা পায়। দেবীর বসন শুভ্র। মূর্তিভেদে তিনি কোথাও একহাতে পদ্মফুল ধরে রাখেন। অন্য হাতে ধরে রাখেন জপমালা। পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, দেবী কালী ব্রহ্মাকে তপস্যায় তুষ্ট করেছিলেন। ব্রহ্মার আশীর্বাদেই তিনি মানস সরোবরে স্নান করেছিলেন। ঘোর কৃষ্ণবর্ণা থেকে হয়ে উঠেছিলেন মহাগৌরী। দেবীর বাহন ষাঁড়। বারাণসীতে কাশী অন্নপূর্ণার মন্দিরটি দেবী মহাগৌরীর মন্দির নামেও পরিচিত।
সিদ্ধিদাত্রী: নবমী তিথিতে দেবী দুর্গা পূজিত হন ‘সিদ্ধিদাত্রী’ রূপে। এটি নবদুর্গার শেষ রূপ। সিংহবাহিনী দেবী সিদ্ধিদাত্রী হলেন চতুর্ভুজা। দেবী হলেন সিদ্ধি, সফলতাদাত্রী এবং পরিপূর্ণতা দাত্রী। পৌরাণিক গ্রন্থে মা সিদ্ধিদাত্রীকে সিদ্ধি ও মোক্ষের দেবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মা সিদ্ধিদাত্রীর আটটি কৃতিত্ব রয়েছে অণিমা, মহিমা, প্রপ্তি, প্রাকাম্য, গরিমা, লঘিমা, ইশিত্ব এবং বশিত্ব। বিশ্বাস করা হয় মা সিদ্ধিদাত্রীর কৃপায় ভগবান শঙ্করের দেহের অর্ধেক দেবী হয়ে উঠেছিল। এ কারণে তাকে অর্ধনারীশ্বর বিশেষ্যও দেওয়া হয়। শাস্ত্র অনুসারে, শুধুমাত্র মায়ের কৃপাতেই দেব-দেবীরাও সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
শারদ নবরাত্রি ২০২৪ কবে শুরু?
নবরাত্রির প্রতিপদ পড়েছে ৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। দ্বিতীয়া ৪ অক্টোবর, শুক্রবার। শনিবার ৫ অক্টোবর রয়েছে তৃতীয়ার পুজো। রবিবার ৬ অক্টোবর চতুর্থী, ৭ অক্টোবর পড়েছে সোমবার, সেদিন পঞ্চমী। ষষ্ঠীতে বাংলা যখন মায়ের বোধন উদযাপন করবে, তখন নবরাত্রির ষষ্ঠদিন। সেদিন ৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার। ৯ অক্টোবর সপ্তমী তিথি, সেদিন বুধবার, ১০ অক্টোবর অষ্টমী, বৃহস্পতিবার। ১১ অক্টোবর নবমী শুক্রবার, সেদিনই নবরাত্রির শেষ দিন। এরপর ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমী পালিত হবে।
নবরাত্রির ব্রত নিয়ম:
ব্রহ্মচর্য বজায় রাখুন।
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠুন, স্নান করে পরিষ্কার বা নতুন জামাকাপড় পরুন।
এই নয় দিনে দুর্গা সপ্তশতী এবং মাতৃদেবীকে উৎসর্গ করা মন্ত্র পাঠ করা একটি আচার।
যাঁরা প্রতিদিন মাত্র একবার খাবার খেয়ে উপবাস পালন করেন তাঁদের অবশ্যই সূর্যাস্তের পরেই উপবাস ভাঙার নিয়ম। শুধুমাত্র সাত্ত্বিক খাবার খান।
কী কী করবেন না
পেঁয়াজ, রসুন এবং অন্যান্য আঁশ জাতীয় পরিহার করতে হবে।
মাংস খাবেন না বা অ্যালকোহল, তামাক সেবন করবেন না।
এই সময় চুল, নখ কাটবেন না। পুরুষদের দাড়ি কামানো বা ছাঁটা উচিত নয়।
এমন কোনও কাজ করবেন না যা আপনার কথা বা কাজে অন্যদের আঘাত বা অপমান করবে।
নবরাত্রিতে কী কী জিনিস বাড়িতে আনলে সংসারে আসবে সুখ সমৃদ্ধি??
শারদীয়া নবরাত্রি অধর্মের ওপর ধর্মের বিজয়ের প্রতীক। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গোৎসব ও অন্যান্য রাজ্যের নবরাত্রির উদ্দেশ্য একই, দেবী দুর্গার আরাধনা। নবরাত্রির ৯ দিনে দুর্গার নয়টি রূপের পুজো করা হয়। এই নবরাত্রিতে ত্রিপুরা ভৈরবী, ধূমাবতী, বগলামুখী, কালী, তারা দেবী, ত্রিপুরা সুন্দরী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, মাতঙ্গী ও কমলা দেবীর পুজো করা হয়।
বিশ্বাস করা হয় যে নবরাত্রির সময় কিছু জিনিস বাড়িতে আনা শুভ। এই জিনিসগুলি বাড়িতে আনলে দেবী খুশি হন এবং ভক্তদের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করেন।
সোনা বা রুপোর মুদ্রা- নবরাত্রির সময় সোনা বা রুপোর মুদ্রা বাড়িতে আনা শুভ বলে মনে করা হয়। মুদ্রায় দেবী লক্ষ্মী বা ভগবান গণেশের ছবি থাকলে তা আরও বেশি ভালো।
পদ্মের উপর বসে থাকা দেবী লক্ষ্মী- নবরাত্রির সময় ঘরে ধন- সম্পদ ও সমৃদ্ধি আনতে, দেবী লক্ষ্মীর একটি ছবি আনুন। যেখানে পদ্মের উপর বসে আছেন ধনদেবী এবং তার হাত থেকে টাকার বৃষ্টি হচ্ছে।
ময়ূর পালক- শাস্ত্রে ময়ূরের পালক অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়েছে। মা সরস্বতীর প্রিয় ময়ূরের পালক বাড়িতে এনে নবরাত্রির সময় ঠাকুরঘরে রাখার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
পদ্ম- দেবী লক্ষ্মীর প্রিয় ফুল পদ্ম। নবরাত্রির সময় ঘরে একটি পদ্ম ফুল বা এর সম্পর্কিত ছবি আনলে সর্বদা দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
মেয়েদের সাজসজ্জার জিনিস:
নবরাত্রির সময় মহিলাদের সাজ-সরঞ্জাম আনতে পারেন। বাড়ির ঠাকুরঘর বা মন্দিরে মেকআপ সামগ্রী স্থাপন করে মা দুর্গার আশীর্বাদ সর্বদা ঘরে থাকে।
প্লেটপুজো
ভোর পাঁচটা, রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চন্ডীপাঠ 'যা দেবী সর্বভূতেষু' -আধো আলোয় ঘুমভাঙ্গা চোখে আজও প্রতিটি বাঙ্গালীর মনে রোমাঞ্চ জাগায়। দূর থেকে ভেসে আসা আগমনী গান, শিউলি ফুলের গন্ধ, থোকা থোকা পেঁজা তুলোর মত নরম মেঘ, কাশফুল এসবই বলে দেয় পুজোর আর বেশী দেরী নেই। পরীক্ষার লাস্টমিনিট সাজেশন এর মতো পুজোর প্রস্তুতিপর্বের'ও কাউন্টডাউন শুরু।
তা অন্যান্য প্রস্তুতি তো করবেনই, সাথে জম্পেশ খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটাও চিন্তা করতে হবে তো নাকি। দেবীপক্ষের সূচনা মানেই উৎসবের শুরু, তাই পুজোর পাঁচদিনের বিশেষ রান্নার জন্য অভিনব সব পদের পাকপ্রনালী রইল আপনাদের জন্য। রাঁধলেন রোজকার অনন্যা পরিবারের সদস্যারা।
সুদেষ্ণা শীল
স্টাফড কোলাপুরী আলু
কী কী লাগবে
মাঝারি আকারের আলু ৫০০ গ্রাম, পনীর ১/২ কাপ, কাজুবাদাম কিশমিশ কুচি ২ চা চামচ, Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's গরমমশলা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, নুন স্বাদমতো, টমেটো পিউরি ১ টেবিল চামচ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, জল ঝরানো টকদই ২ টেবিল চামচ, Shalimar's তেল ২ টেবিল চামচ।
কোলাপুরী মশলার জন্য সাদা তিল ১ চা চামচ, পোস্ত ১ চা চামচ, নারকেল কোরা ২ টেবিল চামচ, জিরে ১/২ চা চামচ, ধনে ১/২ চা চামচ, গোটা গরম মশলা ১ চা চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কা ৩ টি, আদা কুচি ১ চা চামচ।
কীভাবে বানাবেন
আলু হালকা সেদ্ধ করে মাঝখান টা স্কুপ করে বের করে নিতে হবে। এবার একটি পাত্রে পনীর, কাজুবাদাম কিশমিশ কুচি, লঙ্কা গুঁড়ো, গরমমশলা গুঁড়ো, নুন একসাথে মেখে পুর বানিয়ে আলুর মধ্যে ভরে নিতে হবে। কোলাপুরী মশলার সব উপকরণ শুকনো কড়াইতে নেড়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে। ঐ মশলা ১ চা চামচ দই এর মধ্যে ফেটিয়ে পুরভরা আলুর গায়ে ভালো করে মাখিয়ে আলুগুলো গ্রিল করে নিতে হবে। এবার একটি কড়াইতে তেল গরম করে একে একে টমেটো পিউরি, কোলাপুরী মশলা, নুন দিয়ে কষতে হবে। পরিমাণ মতো জল দিয়ে ফুটতে শুরু করলে গ্রিল করা আলু মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরী।
পনীর পরোটা
কী কী লাগবে
জল ঝরানো ছানা ১ কাপ, ময়দা ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা চামচ, কিমা করা কাঁচালঙ্কা ১/২ চা চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ চা চামচ, আমচূড় পাউডার ১/২ চা চামচ, Shalimar's গরমমশলা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, নুন চিনি স্বাদমতো, ঘি ১ চা চামচ, দুধ পরিমাণ মতো, ভাজার জন্য Shalimar's সাদা তেল।
কীভাবে বানাবেন
একটি পাত্রে ছানা, আদা বাটা, কিমা করা কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা কুচি, নুন, আমচূড় পাউডার, গরমমশলা গুঁড়ো একসাথে মেখে নিন। অন্য একটি পাত্রে ময়দা, নুন, চিনি, ঘি আর পরিমাণ মতো দুধ দিয়ে মেখে নিন। ময়দার লেচি কেটে ছানার পুর ভরে পরোটা গুলো বেলে তাওয়া তে তেল দিয়ে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিন।
নবরত্ন পোলাও
কী কী লাগবে
বাসমতি চালের ভাত ২ কাপ, কুচোনো সবজি (গাজর, বিনস, সুইটকর্ন, ক্যাপসিকাম) ২চামচ করে, বেদানার দানা ২ টেবিল চামচ, কুচোনো ফল (আপেল, আঙ্গুর, খেজুর) ২ চামচ করে, কিশমিশ ২ টেবিল চামচ, পনীর ছোট টুকরো করা ২ টেবিল চামচ, Shalimar's সাদা তেল ৩ চা চামচ, ঘি ২ টেবিল চামচ, সাদা জিরে ১ চা চামচ, তেজপাতা ১ টা, ছোট এলাচ ৩-৪ টে, লবঙ্গ ৩টে, ২টো কাঁচা লঙ্কা কুচোনো, ২ টেবিল চামচ দুধে ভেজানো জাফরান, আদা বাটা ১ চা চামচ, নুন চিনি স্বাদমতো।
কীভাবে বানাবেন
তেল গরম করে তাতে তেজপাতা ও বাকি সব গোটা মশলা ফোড়ন দিয়ে আদাবাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা দিয়ে নাড়ুন। মশলা তেল ছাড়লে কুচোনো সবজি, ফল, নুন, গরমমশলা দিয়ে নাড়ুন। ৩-৪ টেবিল চামচ জল মিশিয়ে ঢেকে রাখুন কিছুক্ষণ। মিনিট পাঁচেক পর ঢাকনা খুলে ভাত আর চিনি মেশান। অন্য কড়াইতে বাদাম গুলো ভেজে পোলাও এ মেশান। নামানোর আগে দুধে ভেজানো জাফরান আর ঘি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
ভেজ ঝালফ্রেজি
কী কী লাগবে
অর্ধেক গাজর লম্বা টুকরো করে কাটা, ১০-১২ টা বিনস টুকরো করা, টমেটো ১ টা টুকরো করা, লম্বা করে কাটা বেবিকর্ন ৫-৬ টা, ১ টা ক্যাপসিকাম টুকরো করা, কেটে নেওয়া বাঁধাকপির পাতা ১/২ কাপ, মাখন ১ টেবিল চামচ, Shalimar's সাদা তেল ২ টেবিল চামচ, জিরে ১ চা চামচ, টমেটো পিউরি ২ টেবিল চামচ, Shalimar's গরমমশলা ১ চা চামচ, Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাসুরী মেথি ১ চা চামচ, আদাবাটা ১ চা চামচ, নুন স্বাদমতো।
কীভাবে বানাবেন
কড়াইতে মাখন দিয়ে একে একে সব সবজি দিয়ে ভেজে তুলে নিতে হবে। এবার তেল দিয়ে জিরে আর আদাবাটা ফোড়ন দিয়ে টমেটো পিউরি ও সব গুঁড়ো মশলা দিয়ে কষুন। কষানো হলে সব সবজি আর নুন দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে অল্প জলের ছিটে দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। কাসুরী মেথি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
ছানাপোড়া
কী কী লাগবে
দুধ ১ লিটার, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, সুজি ২ টেবিল চামচ, ঘি ১ চা চামচ, এলাচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, চিনি ১/৪ কাপ, কাজুবাদাম, কিশমিশ আমন্ড, পেস্তা, চেরি পরিমাণ মতো।
কীভাবে বানাবেন
দুধ ভালো মতো জ্বাল দিয়ে লেবুর রসে ২ টেবিল চামচ জল মিশিয়ে দুধে দিয়ে ছানা কাটিয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এবার একটি বড় পাত্রে ছানা, চিনি, সুজি, এলাচ গুঁড়ো ভালো করে ১০ মিনিট মতো মাখুন। এবার এরমধ্যে কাজুবাদাম কিশমিশ মিশিয়ে গ্রিজ করা বেকিং মোল্ডে ঢেলে ১৫০০ তে ৩০-৩৫ মিনিট বেক করুন। ওপর থেকে পেস্তা কুচি, আমন্ড কুচি আর চেরি দিয়ে ইচ্ছে মতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
পাঞ্চালি দত্ত
রুই বিরিন
কী কী লাগবে
ম্যারিনেশনের জন্য:
রুইমাছ ৫ টুকরো, আমন্ড বাটা ২ চামচ, লেবুর রস ২ চামচ, নুন, Shalimar's হলুদগুঁড়ো ১ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা ১ চামচ, টকদই ৪ চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ চামচ, আদা রসুন বাটা ১ চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ (সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন্টাখানেক ম্যারিনেট করে রাখুন)
বাকি উপকরণ:
বাসমতি চাল ১/২ কিলো (ধুয়ে জল ঝরিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে ৮০ শতাংশ সেদ্ধ করে নেওয়া), বেরেস্তা ১ কাপ, রসুন কুচি ভেজে নেওয়া ১/৪ কাপ, গোটা গরম মশলা ফোড়ন এর জন্য, ধনেপাতা কুচি, Shalimar's সর্ষের তেল, তেজপাতা ২-৩ টে, চেরা কাঁচা মরিচ ৫-৬ টা।
কীভাবে বানাবেন
কড়াই খুব গরম করুন। তেল দিন। তেল গরম হলে পর গরম মশলা দিয়ে ম্যারিনেট করা মাছ দিন। উল্টে পাল্টে সাবধানে কষিয়ে গ্যাস অফ করে দিন। ফ্রাইং প্যান গরম করুন। তেজপাতা রাখুন প্যান এ। এবারে সেদ্ধ করা চাল কিছুটা দিন। তার ওপর মাছ, বেরেস্তা, রসুনকুচি, ধনেপাতা কুচি, কাঁচা মরিচ ও সামান্য সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিন। পর পর একই ভাবে স্তর সাজান। ৮ মিনিট মত ঢেকে রাখুন। নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
পনির মাখানি
কী কী লাগবে
পনির কিউব করে কাটা ৫০০ গ্রাম, গোটা জিরে ১/৪ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ১ চামচ, পেঁয়াজ বাটা ২ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১/৪ চা চামচ, কাজু বাটা ৩ চামচ, নুন পরিমাণমতো, চিনি ১ চামচ, ফ্রেশ ক্রিম ৩ চামচ, Shalimar's ধনে গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's জিরে গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's গরম মশলা গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, টক দই ২ চামচ, ঘি ১ চামচ, Shalimar's সাদা তেল, ফেটানো টক দই ৩ চামচ, গোটা গরম মশলা সামান্য।
কীভাবে বানাবেন
তেল ও ঘি কড়াইতে দিয়ে তাতে গোটা জিরে ও গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিন। এবারে গন্ধ বেরোলে তাতে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। পেঁয়াজ বাটা, রসুনবাটা, আদাবাটা দিয়ে নাড়ুন। কাঁচা গন্ধ কেটে গেলে তাতে সমস্ত গুঁড়ো মশলা দিন। ২ মিনিট নাড়াচাড়া করে কাজু বাটা দিন। খুব ভালো করে কষিয়ে টকদই দিন। এক কাপ জল মেশান। ফুটে উঠলে পনির দিন। কিছুক্ষণ পর গরম মশলা গুঁড়ো ও ফ্রেশ ক্রিম দিন। নাড়তে থাকুন। যখন কড়াই থেকে তেল বেরিয়ে আসবে। নামিয়ে পোলাও এর সাথে পরিবেশন করুন।
কাজু নলেনের সন্দেশ
কী কী লাগবে
ছানা (২/৩ ঘণ্টা নরম কাপড়ে বেঁধে জল ঝরানো) ৫০০ গ্রাম, কাজুবাদাম বাটা ৫০ গ্রাম, নলেন গুঁড় ৪ চামচ।
কীভাবে বানাবেন
ছানা মিক্সিতে বেটে নিন। এবারে একটা বাটিতে ঢেলে তাতে নলেন গুঁড়, কাজুবাদাম বাটা ভালো করে মিশিয়ে নিন। একটা কড়াইতে আধ আঙ্গুল মেপে জল দিন। একটা বাটিতে ঘি মাখিয়ে তাতে মিশ্রণ ঢেলে ট্যাপ করে নিন। জল ফুটে উঠলে তাতে একটা স্ট্যান্ড বসান। তার ওপর মিশ্রণের পাত্রটা বসিয়ে কড়াইতে একটা ঢাকনা দিন। ৩৯ মিনিট পর গ্যাস অফ করুন। ঠাণ্ডা করে ফ্রিজে এক ঘণ্টা রাখুন। এবারে বরফির আকারে কেটে পরিবেশন করুন।
আনারসি পোলাও
কী কী লাগবে
চিনি গুঁড়া চাল ৩০০ গ্রাম, মিক্সিতে মিহি করে পেস্ট করে নেওয়া আনারস ২০০ গ্রাম, জল ২০০ গ্রাম, তেজপাতা ২ টো, এলাচ ৩টে, দারচিনি ২ টুকরো, লবঙ্গ ৫ টা, নুন স্বাদ মত, চিনি ২ চা চামচ, রোস্ট করা কাজু ১০ টা, ভাজা কিশমিশ ১০ টা, সামান্য দুধে ভেজানো জাফরান ৭-৮ টা, Shalimar's সাদা তেল ১ চামচ, ঘি ১ চামচ + ১ চা চামচ, আদাবাটা ১ চামচ।
কীভাবে বানাবেন
চাল ধুয়ে আধ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। এবারে চালনিতে জল ঝরিয়ে রাখুন। কড়াইতে তেল ও ঘি দিন। তাতে গোটা গরম মশলা ও তেজপাতা দিন। সুন্দর গন্ধ বেরোলে চাল দিয়ে নাড়ুন দু-তিন মিনিট। এবারে আদা বাটা দিয়ে আবারো সামান্য নাড়ুন। স্বাদমতো নুন, আনারসের রস ও জল দিন। কিছুক্ষণ ফুটতে শুরু করলে আঁচ কমিয়ে দমে বসান। চিনি দিন। জল টেনে ভাত ঝরঝরে হয়ে এলে ভেজানো জাফরান দিন। দু মিনিট স্ট্যান্ডিং টাইম এ রেখে পরিবেশন করুন। কষা মাংস, দই রুই, কালিয়া, কোর্মার সঙ্গে জমে যাবে।
আমন্ড সফেদ লাড্ডু
কী কী লাগবে
সাবু ১ বাটি, আমন্ড ২৫ গ্রাম, চিনি গুঁড়ো আধ বাটি, ঘি আধ বাটি, এলাচ গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ।
কীভাবে বানাবেন
সাবু খালি খোলায় কম আঁচে বেশ কিছুক্ষণ ভাজুন। আমন্ড খালি খোলায় ভেজে ঠাণ্ডা করুন। এবারে দুটোকেই আলাদা ভাবে মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন। এবারে একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিন। একটা বাটিতে ঢেলে তাতে চিনি, এলাচ গুঁড়ো ও ঘি মিশিয়ে হাত দিয়ে মাখুন। যদি হাতের মুঠিতে লাড্ডু ভাল করে তৈরি হয়ে যায় তাহলে লাড্ডু বানিয়ে ফেলুন। নাহলে সামান্য ঘি মেশাতে হবে। ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে পরিবেশন করুন।
৬টি কবিতা
চোখ
শ্রীজাত
তোমার কাছে থমকে আছে চোখ আমার দেখা তোমার দেখা হোক।
চোখের নীচে আটকে আছে জল শুকিয়ে রাখা, লুকিয়ে রাখা ছল...
জন্ম গেল জলের কাছে ঋণ বিশুর খোঁজ পায়নি নন্দিন।
তবুও আসি তোমার কাছে, যাই... আলগা মুঠো, নিজেকে আগলাই
তোমার কাছে থমকে আছে চোখ আমার দেখা তোমার দেখা হোক।
Love রিয়্যাক্ট
রাণা সরকার
তোমার এই হিসেবী দেখা-সাক্ষাৎ আমি খাতার ভেতর রাখি,
যতদিন ফুরোচ্ছে না পাতা আমার সব কবিতাই বাকী।
সবসময় মেঘ করলেও বৃষ্টি পড়ে নাকি?
আমি তেমন লাইক গুনি তোমার পেজে এসে,
যতদিন না দিচ্ছো তুমি লাইক আমার সব কবিতাই ফাঁকি।
দ্বিতীয় নারী
তমাল লাহা
দ্বিতীয় নারীর কাছে সে প্রথম অস্ত যেতে চাওয়া,
বড়ো নিশ্চিত শান্ত সে শীতল আঁধারে পরিপাটি তৃপ্ত এক আত্ম সমর্পণ,
এই ছিল পণ।
সেইমত বাঁধনের আর কোনো বিকল্পও কোনোদিন তেমন ভাবিনি;
অভাগিনী নয়,
তার কপালের মুদ্রণ-প্রমাদ তাকে রোজ দিনমানে বাস্তুচ্যুত করে;
রাত হলে সম্পূর্ণ ফেরায়।
তখন বরফ থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়,
অর্বাচীন প্রাচীন ডেরায়।
পথের পাঁচালী
সোমনাথ সরকার
পৌঁছব। পৌঁছব বলেই পথে বেরিয়েছি.... পথে বেরিয়েছি আমরা।
পিছিয়ে এলে পথই আমাদের বর্জন করবে
অবিশ্বাসী বাঁক। সন্তর্পনে পেরতে হবে।
না। গহীন জঙ্গল নয় এটা। স্বার্থপর লোকালয়। আর সেটাই বড় ভয়।
বর্ষণধারায় মেঘেরা ডাকে এসো। এসো আমার সাথে।
চোরা স্রোত বলছে, পিছু পিছু ছুটতে থাকো নিশিডাককে দু'পায়ে দ'লে নির্বিষ করতে হবে-- অন্তরীক্ষের সশব্দ প্রতিবাদ বুকে ধরে রাখো।
বজ্রের অষ্টবক্র অগ্নিশলাকার আলো প্রবহমান কালের সার্বিক দিক্ চিহ্ন!
পৌঁছব বলেই ভেবে চিন্তে পথে বেরনো
যাচ্ছি
যাচ্ছি
একসাথে যাচ্ছি। সেটাই ভরসা তবু পৌঁছব।
পৌঁছব বলেই পথে বেরিয়েছি... পথে বেরিয়েছি আমরা।
নবজাতক
রজতশুভ্র মজুমদার
একটি শিশু জন্মেছে
একটি শিশু জন্মেছে বাঙ্কারের ভেতর আসুন, তাকে আমরা রক্ষা করি
আপনারা জানেন, পৃথিবীতে দুটো দল- একদল যুদ্ধ করছে, একদল যুদ্ধ করাচ্ছে যাঁরা যুদ্ধ করাচ্ছেন
-এই যেমন ধরুন, ভ্লাদিমির পুতিন, জেলেনস্কি, ন্যাটোর রাষ্ট্রনায়কেরা, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট-
এঁরা সবাই একটা দলের
এবং পরস্পরের নিবিড় বন্ধু, পৃথিবীর অসহ্য জনসংখ্যা কমিয়ে
জীবনকে কিছুটা আয়েশি করতে চাইছেন এঁরা স্ত্রী, সন্তান, সংসার, দালাল এবং পোষা বেশ্যা সমেত এঁরা প্রয়োজন মতো লুকিয়ে পড়েন
মাটির গভীরে নীচে, বিলাসী বাঙ্কারের ভেতর, পরমাণু বোমাও যেখানে কোনও দিন পৌঁছতে পারবে না... #
অন্য দিকে, ওই দেখুন যে-রুশ সেনা ফুলের মতো ফুটফুটে মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে রেখে রণক্ষেত্রে চলে গেলেন হাসতে হাসতে, যে-ইউক্রেনীয় নাগরিক ভ্যাপসা বাঙ্কারের ভেতর
জল না পেয়ে, খাবার না পেয়ে
তিলে তিলে এগিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে, কিংবা যে-ভারতীয় পড়ুয়া, -আপনারা টিভিতে ফুটেজ দেখেছেন- গোলার আঘাতে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে
লুটিয়ে পড়ল রক্তমাখা মাটিতে, কিংবা সারা পৃথিবীর এই যে এত এত নপুংসক মানুষ- আমি আপনি...
এরাও পরস্পরের নিবিড় বন্ধু এবং একই দলের! কিন্তু সমস্যাটা হল,
আমরা সংখ্যাগুরুরা সংঘবদ্ধ নই,
আমরা বোকা, আমরা বর্বর, আমরা জন্ম-কৃতদাস
ওগো সেনা, ওগো পৃথিবীময় শান্তিকামী মানুষ, আসুন আমরা একতাবদ্ধ হই, আমরা অস্ত্র উঁচিয়ে ধরি মুষ্টিমেয় ওই অস্ত্রবাদীদের দিকে, আসুন আমরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিই যত য নিয়ম কানুন, যত প্রচলিত তন্ত্র, যত দেশাত্মবোধের ছিনালি...
আসুন, আমরা অঙ্গীকার করি যে-শিশু জন্মেছে বাঙ্কারে, "এ-বিশ্বকে সে-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, তারপরে হব ইতিহাস...."
আচ্ছা শোন্
নন্দিনীতা চক্রবর্ত্তী
আচ্ছা শোন্ ঠিকানা নিজের বদলে নিয়ে ভালো আছিস তো? শান্ত হওয়া ঝগড়াঝাটি ভালোবাসছে তো! বোকার মতন কেঁদে ফেলিস অভিমানের আগে ? YouTube এর play list টা এখনো রাতে জাগে?
আচ্ছা শোন্ Messengerএর রাত পরীদের কেউ কি আমার মতো? "ঘুম" স্টেশন রাত জাগবে শীতের উষ্ণ ক্ষত! উইন্ডো সিট্ এর মেঘের গল্প, চোখের গুটিসুটি আমার মতন কথায় কথায় ধরায় নাতো ত্রুটি?
আচ্ছা শোন্ মন কেমনের গান গুলোতে আমার জন্য কাঁদিস? কথা না বলে আমার সাথে কেমন করে আছিস! এই যে এতো পাগল প্রলাপ শোনার মানুষ আছে? নাকি
যাযাবরের জীবন খুঁটি, এখনো আমার কাছে? অভিমান আর অভিনয় এর দু'নৌকায় পা - পা ঝোলা ওই পুতুলগুলো কিনে তো দিলি না!
আচ্ছা শোন্
নাহঃ কিচ্ছু না ..
Comments