top of page
Search

ঘরোয়া পার্টির একডজন রেসিপি, পুজোর ছুটিতে কাছেপিঠে, জনসমুদ্রে এবং খেলার মাঠেও চুনি জন্মায়..

ঘরোয়া পার্টির একডজন রেসিপি..

পুজো আসছে। আকাশে বাতাসে আগমনি সুর। সারাবছরের কাজের চাপ কাটিয়ে ঝলমলে কয়েকটা ছুটির দিন। এককথায় সবমিলিয়ে পার্টি সিজন। যারা ভীড়ভাট্টা এড়িয়ে চলতে চান, তাঁরা বাড়িতেই ঘরোয়া পার্টির আয়োজন করতে পারেন। সমস্ত ব্যবস্থা, অন্দরসজ্জা এবং সবশেষে নিজেকে সাজানোর মধ্যে রান্নার সময় খুব কম। অথচ মেনু একদম তাকলাগানো হওয়া চাই, বাড়িতে অতিথি আসছে বলে কথা। রইল মুশকিল আসান। চটজলদি একডজন ঘরোয়া পার্টি রেসিপির সন্ধান দিলেন রোজকার অনন্যা পরিবারের সদস্যারা।


স্বাগতা সাহা

পার্টি মিনি স্যান্ডউইচ


কী কী লাগবে

পাঁউরুটি ৬ পিস (চারপাশ কেটে নেয়া), চিজ স্লাইস ৪টে, ডিম সিদ্ধ ২টি, মেয়োনিজ ১/২ কাপ, পেঁয়াজ, গাজর, টমেটো, শশা পাতলা স্লাইস করা, লেটুস ও কাঁচালঙ্কা ইচ্ছামত, টমেটো সস ১/২ কাপ, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চামচ, নুন ১ চামচ, বাটার অথবা Shalimar's সাদা তেল ১/২ কাপ।

কীভাবে বানাবেন

পাউরুটির চারপাশের বাদামি অংশ কেটে নিন। এরপর প্যানে বাটার অথবা Shalimar's সাদা তেল দিয়ে পাউরুটিগুলি ভালো করে সেঁকে নিন। সেঁকে নেওয়া পাউরুটির গায়ে পুরু করে মেয়োনিজ লাগিয়ে নিন। এবার একপিস পাউরুটি রেখে এর উপরে চিজ স্লাইস রেখে উপরে লেটুস পাতা দিন এবং এক এক করে পেঁয়াজ, গাজরের স্লাইস নুন ও গোলমরিচ গুড়ো ছড়িয়ে দিন। এর উপর আবার একটি মেয়োনিজ মাখানো পাউরুটির স্লাইস দিয়ে ডিমসেদ্ধর স্লাইস, টমেটো, শশা আর একটি চিজ স্লাইস দিন। এরপর একটি লেটুসপাতা দিয়ে এর উপর সামান্য টমেটো সস আর নুন গোলমরিচ গুড়ো ছড়িয়ে দিন। সবশেষে মেয়োনিজ মাখানো পাউরুটির সেঁকে নেয়া পাশ নিচের দিকে রেখে ঢেকে দিন। এবার স্যান্ডউইচে টুথপিক গেঁথে ছুরি দিয়ে পছন্দসই শেপে কেটে নিন। বাকি স্যান্ডউইচটিও এভাবে তৈরি করে নিন। সবশেষে মেয়োনিজ বা পছন্দসই সস্ সহ পরিবেশন করুন যেকোন ঘরোয়া পার্টির জন্য পার্টি মিনি স্যান্ডউইচ।

তানিয়া সাহা

ক্রিসপি অনিয়ন ফ্রিটারস্


কী কী লাগবে

২টি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ, ৩ টেবিল চামচ বেসন, কালোজিরে ১/২ চা চামচ, ১/২ চা চামচ Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, নুন চিনি স্বাদ মতো, ভাজার জন্য Shalimar's সাদা তেল, চাট মসলা ১/২ চা চামচ, ডিম ১ টি, ধনেপাতা কুচি, ১/২ চা চামচ লঙ্কা কুচি।

কীভাবে বানাবেন

পেঁয়াজ খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে কুচিয়ে নিতে হবে। একটা পাত্রে পেঁয়াজ কুচি, লঙ্কা কুচি, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো, নুন, চিনি একসাথে মেখে আধ ঘন্টা রাখতে হবে। এবার বেসন, কালোজিরে, ধনেপাতা কুচি, ডিম একসাথে মেখে পছন্দমতো শেপে গড়ে ডুবো তেলে লাল করে ভেজে তুলে নিন। চাটমশলা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন চা অথবা কফির সাথে।

রঞ্জনা দাস

নুডলস র‍্যাপড প্রন


কী কী লাগবে

খোসা ছাড়ানো লেজ সহ বড় চিংড়ি মাছ ৫টি, ১০০ গ্রাম নুডুলস, নুন স্বাদমতো, ১/৪ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো, ১/৪ চা চামচ রসুন গুড়ো, ১/৪ চা চামচ পেঁয়াজ গুড়ো, ময়দা ৪ টেবিল চামচ, লেবুর রস ২ চা চামচ, ভাজার জন্য Shalimar's তেল, বাঁশের কাঠি ৫ টা।

কীভাবে বানাবেন

মাছগুলোকে একটু ভারী কিছু দিয়ে সাবধানে থুরে করে নিতে হবে। এবার বাঁশের কাঠি তে মাছ গুলো গেঁথে একটি পাত্রে রেখে একে একে রসুন গুড়ো, পেঁয়াজ গুঁড়ো, নুন, গোলমরিচ গুঁড়ো, লেবুর রস মেখে ২০ মিনিট রাখুন। নুডলস গুলো ফুটন্ত জলে সেদ্ধ করে সাথে সাথে বরফজলে ভেজান। এরপর শুকনো কাপড়ে ছড়িয়ে জল শুকিয়ে নিন। প্রতিটা চিংড়ি মাছে নুডলস পেঁচিয়ে চারিদিকে শুকনো ময়দা মাখিয়ে ডুবো তেলে লাল করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরী। পছন্দের স্যালাড ও সস সহ পরিবেশন করুন।

স্বাগতা ব্যানার্জি

চিকেন কাঠি কাবাব


কী কী লাগবে

বোনলেস চিকেনের টুকরো ২০০ গ্রাম, জল ঝরানো টকদই ৫ টেবিল চামচ, Shalimar's জিরে গুঁড়ো ২ চা চামচ, Shalimar's ধনে গুঁড়ো ২ চা চামচ, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, বিরিয়ানি মশলা ১.৫ চা চামচ, Shalimar's লাল লঙ্কার গুঁড়ো ১.৫ চা চামচ, আমচুর পাউডার ১ চা চামচ, আদা বাটা ১/২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১.৫ টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা ৩টে, ধনেপাতা কুচি ১/৪ কাপ, Shalimar's সাদা তেল ২ টেবিল চামচ (ম্যারিনেশনের জন্য) ১ টেবিল চামচ (কাবাব সেঁকার জন্য), মাখন ১ টেবিল চামচ, স্বাদমতো নুন, চিনি ১/২ চা চামচ, কাবাব সেঁকার জন্য বাঁশের কাঠি ৫ থেকে ৬ টা।

কীভাবে বানাবেন

ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা ও চিনি একসাথে পেস্ট করে নিন। চিকেনের টুকরোগুলোতে মাখন বাদে বাকি সমস্ত উপকরণ ও তৈরি করে রাখা ধনেপাতার পেস্ট মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিয়ে ম্যারিনেট হতে দিন অন্তত ২ ঘন্টা। কাবাব সেঁকার আগে বাঁশের কাঠিগুলো আধঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে জল থেকে তুলে নিন। এরপর বাকি যে তেলটুকু আছে তার সাথে মাখনটা মিশিয়ে রাখুন, এটা কাবাব সেঁকার সময় লাগবে। কাবাবের কাঠিগুলোতে কয়েকটা করে চিকেনের টুকরো গেঁথে নিন। একটা তাওয়া গরম করে তাতে অল্প তেল-মাখনের মিশ্রণ বুলিয়ে নিয়ে কাবাবের কাঠিগুলো বিছিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে রেখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেঁকে নিন। প্রত্যেকবার ঘোরানোর সময় একটু করে তেল-মাখনের মিশ্রণ কাবাব গুলোর গায়ে বুলিয়ে দিন। এরপর একদম নিভু আঁচে কাবাব গুলো ঢেকে রেখে দিন ৩-৪ মিনিট। তারপর ঢাকা খুলে কাবাব গুলো উল্টে নিয়ে আরও একবার ঢেকে দিন ২-৩ মিনিটের জন্য, তাহলেই কাবাব তৈরী। স্যালাড ও পছন্দমতো চাটনীর সাথে পরিবেশন করুন চিকেন কাঠি কাবাব। নুডলস গুলো ফুটন্ত জলে সেদ্ধ করে সাথে সাথে বরফজলে ভেজান। এরপর শুকনো কাপড়ে ছড়িয়ে জল শুকিয়ে নিন। প্রতিটা চিংড়ি মাছে নুডলস পেঁচিয়ে চারিদিকে শুকনো ময়দা মাখিয়ে ডুবো তেলে লাল করে ভেজে তুলে নিলেই তৈরী। পছন্দের স্যালাড ও সস সহ পরিবেশন করুন।

মুনমুন সাহা

মুর্গ আলিশান কাবাব


কী কী লাগবে

বোনলেস চিকেন ২০০ গ্রাম, নুন স্বাদ অনুযায়ী, Shalimar's হলুদ সামান্য, Shalimar's লঙ্কা গুড়ো ১ চামচ, কাবাব মসলা ১ চামচ, আদা বাটা আধ চামচ, রসুন বাটা ১ চামচ, জল ঝরানো টকদই ৩ চামচ, ভাজা বেসন ২ চামচ, কসুরী মেথি গুড়ো ১ চামচ, ১ টা ডিমের সাদা অংশ, মোজারেলা চীজ ১ কাপ গ্রেট করা, বিভিন্ন রঙের বেল পেপার মিহি করে কুচোনো।

কীভাবে বানাবেন

আদা বাটা, রসুন বাটা, Shalimar's হলুদ, Shalimar's লঙ্কা গুড়ো, নুন, দই, বেসন, কাবাব মসলা, কসুরী মেথি গুড়ো একসাথে মিশিয়ে রাখতে হবে। এবার এতে চিকেন দিয়ে ম্যরিনেট করে রাখতে হবে ২-৩ ঘন্টা। ম্যারিনেটেড চিকেন শিকে গেঁথে উল্টে পাল্টে গ্রিল করে নিতে হবে। বারবার করে মাখন ব্রাশ করবেন। অন্যদিকে একটা প্লেটে ডিমের সাদা অংশ, সামান্য নুন, গ্রেট করা চীজ, সব বেলপেপার একসাথে মিশিয়ে রাখতে হবে। চিকেন সেঁকা হয়ে গেলে গরম অবস্থায় চীজের মিশ্রনটা কাবাবের গায়ে লাগিয়ে সাথে সাথে আবার ১ মিনিট এর জন্য গ্রিল করে গরম গরম পরিবেশন করুন মুর্গ আলিশান কাবাব।



মৌমিতা ঘোষ

ফিস ক্রকেট


কী কী লাগবে

ভেটকি মাছ ২৫০ গ্রাম, আলু সেদ্ধ ২ টি, পেঁয়াজ কুঁচি ১ টি, আদা রসুন বাটা ২ চা চামচ, লঙ্কা কুঁচি, Shalimar's হলুদ ১ চা চামচ, ভাজামশলা ২ চা চামচ, লবন স্বাদমতো, চিনি সামান্য, Shalimar's সর্ষের তেল।

ভাজা মশলা বানানোর জন্য

(জিরে ১ চামচ, ধনে ১ চামচ, দারচিনি ১ টি, লবঙ্গ ৪টি, ছোট এলাচ ২ টি, গোলমরিচ ৫ টি, তেজপাতা ১ টি ছোট)

অন্যান্য উপকরণ

বেসন ১ কাপ, চালের গুঁড়ো ৪ চামচ, খাবার সোডা ১ চিমটি, বিস্কুটের গুঁড়ো, Shalimar's সাদা তেল।

কীভাবে বানাবেন

প্রথমেই ভাজা মশলার উপকরণ গুলো শুকনো খোলায় হালকা করে ভেজে গুঁড়িয়ে রাখুন। মাছ এর পিস গুলো কে সামান্য Shalimar's হলুদ ও লবন দিয়ে সেদ্ধ করে রাখুন। ঠান্ডা হলে মাছের ছাল কাঁটা ফেলে চটকে রাখুন। কড়াই এ Shalimar's সর্ষের তেল দিয়ে তাতে পিয়াজ কুঁচি হালকা ভাজুন। এবার একে একে আদা রসুন বাটা, Shalimar's হলুদ, লঙ্কা কুচি, ভাজা মশলা, লবন দিয়ে অল্প আঁচে কষুন। চটকে রাখা মাছ দিয়ে আবার ও ভালো করে ভাজুন। এবারে এতে সেদ্ধ করে রাখা আলু মিশিয়ে নামিয়ে ঠাণ্ডা হতে দিন। পছন্দমত আকৃতিতে চপগুলো গড়ে নিন। বেসন, চালের গুঁড়ো, সোডা, অল্প লবন আর পরিমাণ মতো জল দিয়ে ব্যাটার তৈরি করে রাখুন। আরেকটা প্লেটে বিস্কুটের গুঁড়ো ঢেলে রাখুন। একটা করে চপ নিন, বেসনের ব্যাটার এ ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে অন্য আরেকটা প্লেটে রাখুন। এই ভাবে বাকি চপ গুলোও বানিয়ে ১ ঘন্টা ফ্রিজে রাখুন। Shalimar's তেল গরম করে ডুবো তেলে চপ গুলো বাদামি করে ভেজে সালাদ ও কাসুন্দির সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।

রেশমী মিত্র

চিকেন মালাই কাবাব


কী কী লাগবে

৪০০ গ্রাম হাড় ছাড়া চিকেন থাই, প্রথমবার মারিনেশনের জন্য (১ টেবিল চামচ আদা বাটা, ১ টেবিল চামচ রসুন বাটা, ১ চা চামচ সাদা গোলমরিচ গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১/২ চা চামচ নুন)

দ্বিতীয়বার মারিনেশনের জন্য (১/২ কাপ মোজারেলা চিজ, ২ চা চামচ কাঁচালঙ্কা বাটা, ১/২ কাপ ধনেপাতা কুচি, ১ চা চামচ রসুন গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ কাজু বাদাম বাটা, ৩/৪ কাপ জল ঝরানো দই, ২ টেবিল চামচ ক্রিম চিজ, ১ চা চামচ চাট মসলা, ১ চা চামচ গরম মসলা, ২ টেবিল চামচ গলানো মাখন, Shalimar's সাদা তেল, স্বাদ অনুযায়ী নুন)।

কীভাবে বানাবেন

মাংস ছোট টুকরো করে কেটে ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে একটি বাটিতে ঢেলে প্রথম মারিনেশনের সব উপকরণ ভালোকরে মেখে ঢাকা দিয়ে ৩০ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন। ৩০ মিনিট পর মাংসগুলোতে দ্বিতীয়বার ম্যারিনেশন করার বাকি উপকরণ মিশিয়ে সারারাত ফ্রিজে রেখে দিন। কাবাব স্টিক গুলো ১ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে মাংসের টুকরো গুলোকে কাঠির মধ্যে গেঁথে নিন। ফ্রাই প্যানে অল্প তেল ব্রাশ করে তার মধ্যে কাবাব কাঠি গুলো কে সাজিয়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে সব দিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফ্রাই করে নিন মাংস সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত। মাংস সিদ্ধ হয়ে হালকা সোনালী রঙ ধরলে কাবাব গুলো নামিয়ে পছন্দের ডিপ এর সঙ্গে পরিবেশন করুন সুস্বাদু চিকেন মালাই কাবাব।


মধুমিতা সরকার

ভেজিটেবল চপ


কী কী লাগবে

বিট ১টা বড়, আলু ২টো বড়, গাজর ১টা মাঝারি, রোস্টেড বাদাম ৩ টেবল চামচ, কাঁচালঙ্কা কুচি ১ চা চামচ, আদা ১ ইঞ্চি, গরম মশলা গুঁড়ো আধ চা চামচ, কাশ্মিরী লঙ্কাগুঁড়ো সিকি চা চামচ, চিনি ১/৪ চা চামচ, নুন প্রয়োজন মতো, ভাজা মশলা ১চামচ, বিস্কুটের গুঁড়ো ১/৩ কাপ, Shalimar's সাদা তেল ভাজার জন্য, ময়দা ৩ টেবল চামচ, জল ৬ টেবিল চামচ।

কীভাবে বানাবেন

সব্জি প্রেশার কুকারে নুন দিয়ে সিদ্ধ করে গ্রেট করে নিন। Shalimar's তেল গরম করে একে একে সব বাটা ও গুঁড়ো মশলা, অল্প জল দিয়ে কষুন। সবজি, নুন, চিনি, রোস্টেড বাদাম মেশান। নামিয়ে ঠাণ্ডা হতে দিন। পছন্দ মতো শেপে চপ গুলো গড়ে নিন। একটি বাটিতে ময়দা ও জল মিশিয়ে ঘন ব্যাটার তৈরি করুন। এবার চপগুলো প্রথমে ময়দার ব্যাটারে ডুবিয়ে তারপর বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে নিন। কড়াইতে তেল গরম করে মাঝারি আঁচে সোনালি মুচমুচে করে ভেজে তুলুন ভেজিটেবল চপ।

অর্পিতা মজুমদার

তন্দুরি প্রণ


কী কী লাগবে

৪ টে গলদা চিংড়ি, ১ চা চামচ আদা বাটা, ১ চা চামচ রসুন বাটা, ২ চা চামচ লেবুর রস, ১/২ চা চামচ নুন, ৩ চা চামচ টকদই, ২ চা চামচ তন্দুরি মশলা, ১ চা চামচ Shalimar's লাল লঙ্কার গুঁড়ো, ২ চা চামচ Shalimar's সরষের তেল, ১ চা চামচ Shalimar's জিরা গুঁড়ো, ১/২ চা চামচ লাল ফুড কালার, ১ চা চামচ রোস্টেড বেসন।

কীভাবে বানাবেন

প্রথমে চিংড়ি মাছ গুলোর খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে পরিস্কার করে ধুয়ে নিন। এরপর একটা পাত্রে টকদই, আদা, রসুন বাটা, Shalimar's লাল লঙ্কার গুঁড়ো, নুন, লেবুর রস, তন্দুরি মশলা, Shalimar's জিরা গুঁড়ো, ফুড কালার, বেসন সব কিছু দিয়ে দিন আর ভালো করে সব কিছু মিশিয়ে নিন। এবার চিংড়ি মাছ ও Shalimar's সরষের তেল মিশিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। গ্রিজ করা বেকিং ট্রেতে রেখে ১৪০ ডিগ্রি তে ১৫ মিনিট বেক করে স্যালাদ ও চাটনি সহ পরিবেশন করুন।

শম্পা ব্যানার্জি

সেভরি কাপস্


কী কী লাগবে

ময়দা ২০০ গ্রাম, Shalimar's তেল ১ টেবিল চামচ, নুন স্বাদমতো, মুরগির মাংসের কিমা ২০০ গ্রাম, মাখন ২ টেবিল চামচ, পিঁয়াজ ২ টো বড়, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, টমেটো ১ টা বড়, কাঁচালঙ্কা ২ টো, গোলমরিচগুঁড়ো ১/২ চা চামচ, Shalimar's হলুদ ১/২ চা চামচ, চিনি ১/২ চা চামচ, চিজ ১ কিউব, টমেটো সস, ধনেপাতা ১ টেবিল চামচ

কীভাবে বানাবেন

ময়দা, Shalimar's তেল, নুন দিয়ে মেখে নিন। লেচি করে খুব পাতলা করে বেলে নিন। হালকা সেঁকে চৌকো করে কেটে নিন। কড়াইতে মাখন দিয়ে পিঁয়াজ কুচি ভাজুন। একে একে আদা, রসুন, কাঁচা লঙ্কা কুচি, টমেটো কুচি, Shalimar's হলুদ, নুন, চিনি দিয়ে কষুন। অল্প জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে শুকনো করে নামিয়ে নিন। মাফিন কাপে মাখন ব্রাশ করুন। ২ টো করে চৌকো রুটির টুকরো চেপে বসান। মুরগির পুর দিন। চিজ গ্রেট করে ওপরে দিন। ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি তে ১০ মিনিট বেক করুন। ওপরে টমেটো সস, ধনেপাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।


কৌশিকী সরকার

নার্গিসি কোফতা


কী কী লাগবে

ডিম ৬ টি, চিকেন ৩০০ গ্রাম, ব্রেড ২ পিস, দুধ ৫ বড় চামচ, পেঁয়াজ কুচি ৫ বড় চামচ, রসুন কুচি ১ বড় চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাঁচালংকা কুচি স্বাদমতো, Shalimar's সাদা তেল ২ বড় চামচ ও ভাজার জন্য।

কীভাবে বানাবেন

৫ টা ডিম ১৪ মিনিট সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন। চিকেন মিক্সারে পেস্ট করে নিন। ব্রেড দুধে ভিজিয়ে রাখুন। ডিম ও Shalimar's সাদা তেল ছাড়া, চিকেনের মধ্যে সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার একটা ডিম ফেটিয়ে তার অর্ধেকটা চিকেনের সাথে মিশিয়ে ফ্রিজে রাখুন ৩০ মিনিট। এবার চিকেনের মিশ্রণের মধ্যে ২ চা চামচ Shalimar's সাদা তেল দিয়ে আবারও ভালো করে মেখে মিশ্রণটিকে সমান ৫ ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। একভাগ মিশ্রণ দিয়ে একটি করে ডিম কোট করে নিতে হবে। এভাবে বাকি ডিম গুলো ও কোট করে Shalimar's সাদা তেল গরম করে মাঝারি আঁচে ডিপ ফ্রাই করলেই রেডি নার্গিসি কোফতা।


মিঠু সাহা

চিকেন কাটারপিলার রোল


কী কী লাগবে

চিকেন কিমা ২৫০ গ্রাম, পিঁয়াজ কুচি ১ টা, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, লেবুর রস ১/২ চা চামচ, ধনেপাতা ১ টেবিল চামচ, Shalimar's জিরেগুঁড়ো ১/২ চা চামচ, গোলমরিচ ১/৪ চা চামচ, চাট মসলা ১ চা চামচ, নুন স্বাদমতো, Shalimar's ধনেগুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's লঙ্কা গুঁড়ো ১ চা চামচ, ময়দা ২ কাপ, Shalimar's সাদা তেল পরিমাণমতো

কীভাবে বানাবেন

প্রথমে মাংসের কিমার সাথে লেবুর রস, আদা বাটা, রসুন বাটা আর সব গুঁড়ো মসলা মিশিয়ে নিন। কড়াইতে ১ চামচ Shalimar's সাদা তেল দিয়ে ম্যারিনেড করা মাংসের কিমা দিয়ে কষুন। অল্প জল দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। জল শুকিয়ে ভাজা ভাজা হলে পেঁয়াজ কুচি আর ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে নামিয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে ময়দা নিয়ে তাতে পরিমাণমতো নুন, Shalimar's সাদা তেল দিয়ে ময়ান দিয়ে ভাল করে মেখে সুতির কাপড় দিয়ে ঢেকে ৩০ মিনিট রাখুন। লেচি কেটে পাতলা রুটির মতো বেলে ওপরে মাংসের পুর দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমি কাটারপিলার মতো বানিয়ে নিতে হবে। Shalimar's তেল গরম করে ডুবো তেলে সোনালী করে ভেজে টমেটো সসের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

 

পুজোর ছুটিতে কাছেপিঠে..

কমলেন্দু সরকার


কাজের জগতে হেকটিক লাইফস্টাইলে বাড়ির সবার সঙ্গে তেমনভাবে সময় কাটানোর সুযোগ হয় না? পুজোর ছুটি মানেই কয়েকদিনের গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তি, স্বাধীনতার স্বাদ আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা। তা চলুন না কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসি আমরা। তারই খোঁজখবর রইল এবারের রবিবারের পাতায়।

সৌন্দর্যের অপর নাম সিসামারা


ডুয়ার্সের প্রেমে পড়েনি কে? একটাই উত্তর সবাই। যে একবার গেছে সে বারবার যেতে চাইবেই। ঠিক যেন অপরূপা সুন্দরীর সৌন্দর্যে বুঁদ হয়ে যাওয়া। বারবার ফিরে ফিরে দেখা। আশ আর মেটে না! সৌন্দর্যের কাছে আত্মসমর্পণ করা। করতেই হয় রূপ-সৌন্দর্যে অনুভব করতে হলে। তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গীয় ঠিকানা সিসামারা। শুধু আকাশের নীলখামে চিঠি লিখে পাখির মুখে পাঠিয়ে দেওয়া। সিসামারা এক অপূর্ব জায়গা। এখানে বাঁশির সুরে ভোর আসে। সে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত যাইহোক না কে। সমস্ত ঋতুই এখানে ঋতুরাজ। অরণ্য, নদী, পাহাড় ঘেরা এক জায়গা।

এখানে পৌঁছলেই বুঝবেন, এ-সেই স্বপ্নে দেখা রাজকন্যে! বিস্মিত হবেন! সবুজের আমন্ত্রণে পাহাড়ের ডাকে সবকিছুরই অবসান। মিলিয়ে যাবে শহরের মলিনতা, কর্মক্ষেত্রের সংকীর্ণতা, এমনকী জীবনযন্ত্রণা। তাই তো আপনার, আমার, সকলের জন্য অপেক্ষায় সিসামারা। নদীর নামেই জায়গার নাম। সিসামারা তোর্সার উপনদী নাকি শাখানদী। যাইহোক, অত ঘামিয়ে লাভ কী! নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করাই আমাদের লক্ষ্য।


তোর্সার থেকে আলাদা হয়ে আবার কিছুটা পথ গিয়েই বিচ্ছিন্ন হওয়ার হওয়ার দুঃখে আবার মিলেছে তোর্সার সঙ্গে। নদীর ধারেই গহীন অরণ্য। আশপাশে রয়েছে মানুষের বাসও। জঙ্গলের গভীরে বন্যজন্তুর বাস। বিশেষ করে, রয়েছে প্রচুর হাতি। গজরাজের অবাধ বিচরণভূমি সিসামারা। না-থাকার কোনও কারণ নেই। জায়গাটা তো ওদেরই। আছে গণ্ডারও। হাতির দলবেঁধে নদীতে আসে জল খেতে। কখনও কখনও স্নানও সারে। সিসামারা নৈঃশব্দ্য ভেঙে খানখান হয়ে যায় বহুরকম পাখির কলগুঞ্জনে। সিসামারা পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গ সঙ্গে আলোকচিত্রীদেরও। চোখ না-ফেরানো এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! সবমিলিয়ে সিসামারা এক স্বপ্নে দেখা অবসরযাপনচিত্র।


কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা থেকে তিস্তাতোর্সা, উত্তরবঙ্গ, পদাতিক, হাওড়া থেকে কামরূপ এক্সপ্রেসে গিয়ে ফালাকাটা স্টেশন নামতে হবে। ফালাকাটা ২৮ কিমি। জলদাপাড়া অভয়ারণ্য বেড়াতে গিয়ে ঘুরে আসা যায় সিসামারা।


কোথায় থাকবেন: বনান্ত নিবাস, রণবীর বিশ্বাস, মোবাইল: +919933369264. ভাড়া- দ্বিশয্যা, ১৫০০ টাকা (তিনজনও থাকা যায়)।

উত্তরের অ্যামাজন


ঘরের কাছেই অ্যামাজন। আর বাঙালির কাছে অ্যামাজন আর অপরিচিত নয়। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের 'অ্যামাজন অভিযান' এবং সন্দীপ রায়ের 'প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো' ছবি দু'টি দেখে বাঙালি জেনেছেন, দেখেছেন অ্যামাজনের ভয়ংকর সৌন্দর্য। পঞ্চাশের দশকের ছবি জন হাস্টন এর 'আফ্রিকান কুইন' যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন অ্যামাজনের রূপ-সৌন্দর্য। পা বাড়ালেই ঘুরে আসতে পারেন আমাদের অ্যামাজনে। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটলেও সে-ঘোলের স্বাদও কিন্তু অপূর্ব! নিজেই স্বাদ নিয়ে দেখুন সিকিয়াঝোরের বুকে বোট নিয়ে ভেসে পড়ে। সে-এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা! প্রকৃতির রূপ কাকে বলে বুঝতে দেরি হবে না। অ্যামাজনের মতোই দু'পাশে ঘন জঙ্গল! তারই মাঝে ঝোরার জল কেটে কেটে চলে বোট। কখনও সখনও গাছগাছালির মৃদু স্পর্শে চমকে উঠতে হয়। আবার কখনও মাথার চুলে বিলি কেটে ঝুঁকে পড়া গাছগাছালি। রোদ্দুর গায়ে যেতে যেতে হঠাৎই উধাও। দিনের বেলায় অন্ধকার। চারিদিকে গভীর অরণ্য।

দু'পাশের জঙ্গল এপার ওপারের গাছগাছালি পরস্পরের আলিঙ্গনে। অদ্ভুত এক শিহরন। আরও সবুজের গভীরে ঢুকে পড়ে বোট। পাখপাখালির ওড়াউড়ি। কতশত রকমের পাখি। জঙ্গলের অভ্যন্তরে হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী উঁকি মারে। কখনও কখনও গাছের ডালে সাপ জড়িয়ে থাকে। তাই বোটে চড়ে ঘোরার সময় সাবধানে সতর্ক হয়ে অরণ্য উপভোগ করলে ভাল। পঞ্চাশ-একশো টাকার বিনিময়ে বোটে চড়ে দুর্দান্ত এক অ্যাডভেঞ্চার! ঠকায় না সিকিয়াঝোরের এই রুদ্ধশ্বাস অ্যাডভেঞ্চার, এ-কথা হলফ করে বলা যায়। নিতান্তই কিশোর সিকিয়াঝোরের এই পর্যটন। বক্সা অভয়ারণ্যের মধ্যে আঁকা বাঁকা একঢাল পথে যেতে যেতেই মন কেড়ে নেয় এখানকার প্রকৃতি। সে-এক অপূর্ব জার্নি! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলতে হয়, প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকিয়ে রাখা। এখানে সিকিয়াঝোরার অ্যামাজনে অ্যাডভেঞ্চার করতে যাওয়ার আগে মানসিক প্রস্তুতি সেরে নেওয়া বক্সা রিজার্ভ ফরেস্টের পথে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অরণ্য-লাগোয়া উত্তর পানিয়ালগুড়ি গ্রামে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বুক চিরে চলেছে পাহাড়ি নদী সিকিয়াঝোরা।


কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা থেকে তিস্তাতোর্সা, উত্তরবঙ্গ, পদাতিক, হাওড়া থেকে কামরূপ এক্সপ্রেসে গিয়ে আলিপুরদুয়ার স্টেশন নামতে হবে। এখান থেকে ১৭ কিমি।


কোথায় থাকবেন: সিকিয়াঝোরার আশপাশে কয়েকটি হোটেল আছে। যোগাযোগ: বিপ্লব দে মোবাইল- 09733454779/8967928334.

রূপকথার রঙ্গারুন


লেপচা ভাষায় রঙ্গারুন বা রঙ্গেরুন শব্দের অর্থ হল নদীর বাঁক। রুংদাং নদীও আঁকাবাঁকা চলে গেছে ওই সুদূরে। তাই এই পাহাড়ি গ্রামের নাম রঙ্গারুন। স্থানীয়েরা বলেন, রঙ্গেরুন। যে-নামেই ডাকা হোক না কেন তাতে এখানকার রূপ-সৌন্দর্যে এতটুকু ভাটা পড়ে না। মেঘমুলুকে পাহাড় ঘেরা ছোট্ট এক গ্রাম রঙ্গারুন। সেই ইংরেজ আমলে এখানে গড়ে উঠেছিল চা-বাগান। ইংরেজদের কাছে রঙ্গারুনের চায়ের খাতির ছিল খুব। পাহাড়ি পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে। এ-পথে এলে মন ভরে যায়। ঝুপঝাপ নেমে আসে মেঘ। হাত বাড়ালেই মেঘ। শীতের মেঘের ফাঁকে উঁকি দেয় কমলার গাছ। শীতকালে থরে থরে সাজানো গাছ ভর্তি কমলালেবু। নৈঃশব্দই এখানকার ভাষা। নৈঃশব্দ যে এত মধুর হতে পারে তা রঙ্গারুন না-এলে বোঝা যায় না। সবমিলিয়ে রূপকথা যেন রঙ্গারুন! ঘরে বসে না-থেকে বেরিয়ে পড়ুন অরণ্যের পথে। চোখে পড়বে বহুরকম পাহাড়ি পাখি। তবে পাখি দেখার সেরা সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ। শুনেছি অরণ্যে রয়েছে বন্যপ্রাণও। নদীর পথটিও ভারী সুন্দর। ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়া সবচেয়ে ভাল। চমৎকার পাহাড়ি ঝোরা। তাড়া না-থাকলে অর্থাৎ হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসা যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত মংপু। ঘুরে আসা যায় বাতাসিয়া লুপ, টাইগার হিল। তবে রূপকথার রঙ্গারুন ছেড়ে মন সায় দেবে কী! এখানকার রাত ভীষণই মায়াবী! রাতের আকাশে নক্ষত্র ছাড়াও রয়েছে পাহাড়ের গায়ে আলোর তারা! দেখে মনে হয়, জোনাকির ঝাঁক! আর ভোরের বেলা কাঞ্চনজঙ্ঘায় সূর্যোদয় মন খুশি করে দেয়!


কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার সেরা ঠিকানা 'খালিং কটেজ', যোগাযোগ: দেবাশিস চক্রবর্তী, মোবাইল- 094340 72552. থাকা-খাওয়া প্রতিদিন জনপ্রতি ১৫৫০ টাকা। বিষাণ রাই হোমস্টে, মোবাইল- 096477 29080. প্রতিদিন জনপ্রতি থাকা-খাওয়া ১২৮৫-১৩০০ টাকা।


কীভাবে যাবেন: এনজেপি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে ৩ মাইল মোড় থেকে ডান দিকে ৪ কিমি গেলেই রঙ্গারুন। এনজেপি থেকে দূরত্ব ৭৫ কিমি। হোমস্টেতে বলে রাখলে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। ভাড়া কমবেশি ৪৫০০ টাকা।

ঘরের কাছেই আরশিনগর


ঘরের কাছেই আরশিনগর, থুড়ি আসাননগর। আসান শব্দের অর্থ এখানে পা-দিলেই মালুম হবে। মন-প্রাণ, শরীরের ক্লান্তি সত্যিই লাঘব হয়। 'রূপসী বাংলা'র কবি এখানে যদি তাহলে কি নতুনভাবে রূপসী বাংলাকে অনুভব করতেন! হয়তো কেন, নির্ঘাত করতেন। যে-কেউই গেলেই গ্রামবাংলার রূপ-সৌন্দর্যে মোহিত হবেন এ-কথা বোধহয় হলফ করে বলা যায়।


ঝোড় নদীর ধারে চমৎকার জায়গা আসাননগর। শহর থেকে কাছেপিঠে কোনও গ্রামে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে ক'দিনের জন্য, তাহলে আসননগর অন্যতম সেরা ঠিকানা। গ্রামবাংলার মজা উপলব্ধি করা যায় নদিয়ার এই আসাননগরে। আম, জাম, কাঁঠাল আরও কত গাছগাছালির ছায়াময় পরিবেশে গা না-ভাসিয়ে উপায় নেই। চারিদিকে চোখ মেললেই সবুজ খেত। কত কী ফলেছে। যা আমাদের কদাচিৎ দৃষ্টিতে ধরা দেয়। এখানে এসে ক'দিনের জন্য উসুল করে নেওয়া যায়। ভোরের বেলা বহুদিন খেজুর রস খাওয়া হয়নি। মনের এককোনায় লুকানো সেই সাধ প্রাণ ভরে মিটিয়ে নেওয়া যায়। ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ুন নৌকা নিয়ে শান্ত- স্নিগ্ধ ঝোড় নদীর বুকে। দারুণ লাগবে! তবে বিকেলের দিকে আরও একবার নৌকা চাপতে ভুলবেন না। ঝোড় নদীর জলে ভেসে সূর্যাস্ত অসাধারণ সুন্দর! আকাশ আর নদী তখন মেঘের পিচকারিতে হোলি খেলে। ভোরের বেলা ঘুম ভাঙিয়ে দেয় বাংলার পাখি- বুলবুলি, বাঁশপাতি, দুধরাজ বা শাহ বুলবুল ইত্যাদি। আশপাশে ঘুরে নিতে পারেন। যেমন, শিবনিবাস-এ রয়েছে এগারো ফুট লম্বা আর ন'ফুট চওড়া শিবলিঙ্গ, অক্ষয় বটতলায় দু'একর জায়গা নিয়ে পেল্লায় বটগাছ, মায়াপুর, নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি, চার্চ, রাজবাড়ি ইত্যাদি।


কোথায় থাকবেন: প্রাকৃত হোমস্টে। প্রতিদিন মাথাপিছু ১৬০০ টাকা (চারজন একঘরে), ১৮০০ টাকা (তিনজন একঘরে), ২০০০ টাকা (দু'জন একঘরে)। যোগাযোগ: লোপামুদ্রা রায়, মোবাইল- 98311 74094/82405 52835.


কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা থেকে কৃষ্ণনগর লোকাল ট্রেন ধরে কৃষ্ণনগর নেমে টোটো বা অটোতে ১২ কিমি আসাননগর। শিয়ালদা থেকে গেদে লোকাল ধরে মাজদিয়া নেমে টোটো বা অটোতে ন'কিমি। তবে কৃষ্ণনগর লোকাল ধরাই ভাল কেননা সংখ্যায় অনেকবেশি। কলকাতা থেকে গাড়িতে গেলে National High- way-34 ধরে তারপর State Highway-11 অর্থাৎ কৃষ্ণনগর বাইপাস ধরে চিত্রশালী হয়ে আসাননগর। কলকাতা-আসাননগর দূরত্ব কমবেশি ১২০ কিমি।

পাখির রাজ্যে কমলালেবুর গ্রাম


দার্জিলিঙের ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে একটু নির্জনতার খোঁজ অনেকেই করেন। অথচ পাহাড়ের রানির কাছাকাছি গোলাম হয়ে থাকতে চান। অর্থাৎ ভিড় নয়, পাহাড়ের কাছে কয়েকদিন নতজানু হয়ে থাকা। তেমনই আছে পাহাড়ের কোলে ছোট্ট এক গ্রাম সিটং। প্রকৃতি নামক শিল্পীটি তাঁর রঙ-তুলিতে এঁকে রেখেছেন নিখুঁত একটি জায়গা, ওই সিটং। পাখির রাজ্যে কমলালেবুর গ্রাম। সিটংয়ে পা রাখলেই স্বাগত জানায় এখানকার প্রকৃতি। গাছে গাছে হলুদ হয়ে থাকা থোকা থোকা কমলালেবুর আমন্ত্রণ মন ভরিয়ে দেবে! দৃষ্টি মেললেই নজরে আসে দিকচক্রবাল সবুজে ঢাকা, পাহাড়। সিটং দেয় চমৎকার এক প্রকৃতির খোঁজ! স্পর্শ-ছোঁয়া মেঘের কাছাকাছি নির্জন-আলস্য নিয়ে রয়েছে পাহাড়ি এই গ্রাম সিটং। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- আলসশয়নবিলগ্ন। সিটং গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা মনে পড়ল কেন? নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলাম। ও, এখান থেকে আট কিমি দূরেই তো রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত মংপু। হোমস্টের লোকজনকে বললেই ব্যবস্থা করে দেবেন যাওয়ার। নয়তো আসবার পথে মংপু হয়ে আসতে পারেন। তাহলে ঠাকুরবাড়ি ঘুরে আসা হবে।

অনাস্বাদিত সিটংয়ে প্রকৃতির আস্বাদ কত যে মনোমুগ্ধকর তা ভাষায় অবর্ণণীয়। শহরের মানুষজনের কাছে তো বটেই। যে-দিকে দৃষ্টি যায় শুধুই নজর কাড়ে কমলার বাগান। এখানকার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই রয়েছে কমলালেবুর বাগান। সিটংয়ের উচ্চতা যে খুব বেশি তা নয়, কমবেশি চার হাজার ফুট। কিন্তু বেশ ঠান্ডা। ছবির মতো সিটংয়ে অনায়াস বন্ধুত্ব হয়ে যায় পাহাড়ি প্রকৃতির সঙ্গে। নিরিবিলি নির্জন সিটংয়ে কান পাতলে শোনা যায় গাছেদেরও কথা

বলতে। 'পথের পাঁচালী'র অপু-দুর্গার মতো গাছে গাছে কান পাতলেই শোনা যায়, গাছের তাদের ভাষায় ভাললাগার কথা

বলছে। তারা খুব খুশি হয় অতিথি আগমনে। সেসব কথাই বলে গাছেরা। পাখিরাও ডেকে ডেকে বলে যায় তাদের খুশির কথা। উড়ে যাওয়া পাখির খসে-পড়া পালকে থাকে সিটংয়ে স্বাগত জানানোর চিঠি! এখানে বিভিন্ন ধরনের সানবার্ড দেখা যায়। এছাড়াও আছে আরও অনেক পাহাড়ি পাখি। সিটং শুধুমাত্র কমলালেবুর গ্রাম নয়, পাখিরও রাজ্য। কী দেখবেন সিটংয়ে? লালমোহনবাবুর ভাবে বলতে হয়, কোথাও গেলেই কিছু দেখতে হবে? আসলে, সিটংয়ে এলে কিছুই দেখতে ইচ্ছা জাগবে না। প্রকৃতিই এখানে আত্মার আরাম। এখানে আছে কৃশকায় একফালি নদী রিয়াং। নদীর ধারে বসলে মন হারিয়ে যায় আপন-খেয়ালে। সময় কোথা দিয়ে যে কেটে যায় তা বোঝাই যায় না। ঘড়িও হার মানে।


যাঁরা ট্রেকিং করতে ভালবাসেন বা আগ্রহ আছে তাঁরা সিটং থেকে চটকপুর যেতে পারেন ভায়া লাবদা হয়ে। তবে তার জন্য লাগবে বন দফতরের অনুমতি। এর জন্য কোনও অসুবিধা হবে না। সিটং সোসাইটিকে বললেই ব্যবস্থা করে দেবেন। সিটং থেকে চটকপুর ট্রেক করতে সময় লাগবে কমবেশি চার ঘণ্টা।


কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা, হাওড়া থেকে ট্রেনে এনজেপি। শিলিগুড়ি থেকে সিটং যাওয়ার তিনটি পথ। তবে যেদিক যাওয়া যাক প্রাকৃতির রূপ-সৌন্দর্যে মন ভরে যাবে। হোমস্টেতে বলে রাখলে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে।

কোথায় থাকবেন: সিটং সোসাইটিকে বললে সব ব্যবস্থা করে দেবে। থাকা-খাওয়া প্রতিদিন মাথাপিছু ১৫৭৫ টাকা। ওদের পোর্টাল: experience bengal homestays.com

ভাসিয়ে দিন কেয়াপাতার নৌকো


কেয়াপাতার নৌকো ভাসাবেন কোথায়? কেন, লালবাঁধের জলে। একসময় তো বিষ্ণুপুরের রাজার এই বাঁধের জলে বজরা ভাসিয়ে দিতেন পূর্ণিমার রাতে। রাজার পাশে বসতেন রানি। কখনও কামরাঙা জ্যোৎস্নায় বজরায় ভেসে গান শুনতেন লালবাঈয়ের।

প্রচলিত কিংবদন্তি, লালবাঈকে এই বাঁধের জলে ডুবিয়ে মারা হয়। তাই এর নাম লালবাঁধ। লালবাঈ এবং লালবাঁধ নিয়ে প্রচুর ইতিহাস, বহু কিংবদন্তি। সে-ইতিহাস বিষ্ণপুর গিয়ে শুনতে ভাল লাগবে। শোনা যায়, লালবাঁধে বিসর্জন দেওয়া হয়েছিল বিষ্ণুপুর মল্লরাজাদের প্রাচীন পাথরের দুর্গা মূর্তি। এখনও কি লালবাঁধের জলে বজরা না হোক, নৌকো ভাসে? কেয়াপাতার নৌকোয় ভাসতে হলে লালবাঁধের সামনে দিয়ে লালমাটির পথ ধরে এগোতে হবে। এ-কেয়াপাতার নৌকো যে ডাঙার। ঠিক ধরেছেন বেড়াতে বেরিয়ে মাথাগোঁজার ঠিকানা। একঢাল লালমাটির মেঠো পথ ভ্রমণরসিকদের পৌঁছে দেবে কেয়াপাতার নৌকোয়। যাওয়ার পথে টাটকা বাতাসে বুকভরা নিশ্বাস নেওয়া যায়। লালমাটির পথের দু'পাশে শাল-সহ নানাবিধ গাছের সারি। বিশাল বিশাল গাছগাছালির ছায়া নাটোরের বনলতা সেনের মতো দু'দণ্ড শাস্তি দেবে। হঠাৎই রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতা মনে এল কেন! না, বিস্মিত হওয়ার কোনও কারণ নেই তো। কেয়াপাতার নৌকোর মাঝি যে এ-প্রজন্মের কবি অরিজিৎ চক্রবর্তী। তাই তো কেয়াপাতার নৌকার অবস্থান একেবারে গ্রামবাংলার পরিবেশে। গাছগাছালির মাঝে নোঙর করা কেয়াপাতার নৌকো। লালমাটির দেশে প্রকৃতি সঙ্গী করে কেয়াপাতার নৌকোয় মাঝেমধ্যেই বসে কবিতাপাঠের আর গানবাজনার আসর।

আর বিষ্ণুপুর ঘরানা তো বহুকালের। মল্লরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় যা প্রসারিত হয়েছিল। লোকগানের আসরও বসে। এর সঙ্গে জ্যোৎস্নামাখা আকাশ সঙ্গদিলে তো কথায় নেই। যাকে বলে মণিকাঞ্চন যোগ। কেয়াপাতার নৌকোর পাশেই রয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তৈরি বিশাল এক পরিত্যক্ত বিমানবন্দর। অবশ্যই দেখতে হবে। নইলে ফাঁক থেকে যায় বিষ্ণুপুর দেখা। বিষ্ণুপুর ঐতিহ্যের শহর, ইতিহাসের শহর, মন্দির স্থাপত্যশিল্পর শহর। এখানকার টেরাকোটার মন্দিরের তো বিশ্বপরিচিতি। মন্দির তালিকায় আছে শ্যামরাই, জোড় বাংলো, রাধামাধব ইত্যাদি। প্রায় সাড়ে চারশোবছরের পুরনো রাসমঞ্চ-এর অনুপম স্থাপত্য মুগ্ধ করে। পিরামিড আদলের এমন গঠন শৈলী ভূ-ভারতে আছে কী! অবাক করে তিনশো মন ওজন আর প্রায় দু'লক্ষ টাকায় তৈরি দলমাদল কামান। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজারা প্রতিরক্ষা প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন সেকালে। তেরো শতকের মাকড়া পাথরে তৈরি পাথরের রথও বিস্মিত করে। লালমাটির প্রকৃতি আর মন্দির স্থাপত্যের সংমিশ্রণে বিষ্ণুপুর এককথায় লা-জবাব। শীতকালে তো বটেই। এছাড়াও বিষ্ণুপুরের হস্তশিল্প দশাবতার তাস, দুর্গাপট, শঙ্খর কাজ, বালুচরি শাড়ি ইত্যাদি সংগ্রহ করা যায়। ডিসেম্বরের শেষ (২৫ ডিসেম্বর) সপ্তাহে 'বিষ্ণুপুর মেলা'য় লোভনীয় শিল্পসামগ্রী, শাড়ি, চাদর ইত্যাদি বিক্রি হয়। এছাড়াও থাকে গানবাজনার আসর।


কীভাবে যাবেন: ধর্মতলা থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার প্রচুর বাস আছে। গাড়িতে ডানকুনি, আরামবাগ হয়ে যেতে। হয়। লাগবে চায়ের সঙ্গে টা খেয়ে কমবেশি চার ঘণ্টা। হাওড়া, থেকে ট্রেন পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা, রাতে হাওড়া-চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ইত্যাদি।

কোথায় থাকবেন: বিষ্ণপুরে প্রচুর ভাল হোটেল আছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পর্যটন-এর টুরিস্ট লজ আছে। আর কেয়াপাতার নৌকো: ঘর ১২০০ টাকা। ডরমেটরি জনপ্রতি ৩০০ টাকা, টেন্ট ১০০০/- টাকা। খাওয়া- জলখাবার ৫০ টাকা। ফিস থালি ১৫০, চিকেন থালি ১৫০, ভেজ থালি ১০০ টাকা। বাড়ির বাইরে একেবারে বাড়ির মতো। বিষ্ণুপুর মন্দির, জঙ্গল ঘোরার জন্য লাগবে ১২০০ টাকা।

 

জনসমুদ্রে এবং খেলার মাঠেও চুনি জন্মায়..

বারিদবরণ ঘোষ

 ১৯৪৬ সাল। বছর আটেকের পোলাটার হাত ধরে বলাই চ্যাটার্জি তাকে নিয়ে ঢুকলেন মোহনবাগানের মাঠে। ওরা ক'টা বছর আগে বাড়িসুদ্ধ সবাই পূর্ববঙ্গের আদিবাস ছেড়ে এপার বাংলায় এসেছেন। আট বছরের ছেলেটা, রোগা-পটকা অনেকটা পিলে-বের হওয়ার মতো- বলাই চ্যাটার্জি, ছেলেটা যাঁকে এর মধ্যেই বলাইদা বলে ডাকতে শিখেছে, তাকে নিয়ে গোষ্ঠ পাল মশাইয়ের কাছে গেলেন। গোষ্ঠ পাল তাঁকে উত্তর- দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমের বাঙালি মনে মনে একটু প্রণাম করে তাঁর পা-ধোয়া জল খেতেন- তাঁকে ছেলেটার ভাল লাগল নানা কারণে কাঠ-কাঠ কথা বলা গোষ্ঠ পাল বালকটিকে দেখে মন্তব্য করেছিলেন- এই চেহারায় খেলা হবে না। শৈলেন মান্নাও তাকে প্রথম দেখে বলে উঠেছিলেন- এই লিকলিকে চেহারায় ফুটবল হবে না। দু'দুটো মাথা মোহনবাগান ফুটবলার প্রথম দর্শনেই নাকচ করেছিলেন তাকে। ভাল লাগার কি কথা? অনেক পরে বড় হয়ে ওঠা ওই ছেলেটার মনের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছিল- বলাইদার হাত ধরে যদি জ্যোতিষ গুহর হাত ধরলেন- তা হলে কী হতাম? তাঁদের একশো বছরপূর্তি উৎসব চলছে- তাঁরা শুনে খুশি হবেন- চুনি গোস্বামীর সেই বালক বয়সেই মনে হয়েছিল- তিনি ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার হবেন। তিনি তো পূব বাংলার মানুষ- আর তার মানেই ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার হবেন। মতটাকে গোলমাল করে দিয়েছিলেন বলাই চ্যাটার্জি। আর তারপর থেকেই মোহনবাগানের সাপোর্টার- ১৯১১ সালের স্বপ্নটা তাঁর মনে তখন অঙ্কুর থেকে ডালপালা মেলতে শিখেছে।

আমাকে একটা গোষ্ঠ পাল, একটা উমাপতি কুমার, একটা ধীরেন দে হতে হবে। ... হতে পেরেছিলেন কিনা তার সাক্ষী মোহনবাগান কেন- সারা ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু চুনি গোস্বামী যে কাণ্ডটা করে বলেছিলেন- তা অন্য মোহনবাগানিরা পেরেছেন বলে মনে হয় না। তিনি একবারও জীবনে মোহনবাগান ক্লাব ছেড়ে যেতে পারলেন না। একবার শুধু (সম্ভবত ৫৭ সালে) জ্যোতিষ গুহ মশাই চুনিদের বাড়িতে এসে ইস্টবেঙ্গলে খেলার অফার দেন, চুনির ভাষায়- তখনকার দিনে মাথা ঘুরে যাওয়ার প্রস্তাব। ফিয়াট গাড়ির চাবি তুলে দিয়েছিলেন হাতে। আমি রাজি হইনি। জ্যোতিষবাবুও খুব জোর করেননি। এরপর আর কখনও ইস্টবেঙ্গল অফার দেয়নি। আমারও যাওয়া হয়নি সই করতে। সত্যি কথা বলতে যে-ক্লাবে সারাটা জীবন কেটে দিচ্ছে- অবসরের পর যে ক্লাবে পর পর দুটো দিন গেলে যার মন খুঁত খুঁত করে সেই ক্লাবের তাঁবুতে তিনি সারাজীবন তাই করতে যাননি। এমনকী তাঁর রেজিস্ট্রিশনও ঠিকঠাক হয়েছিল বলে তাঁর মনেই পড়ে না। তো সেই আট বছরের ছেলেটা ক্লাবে ঢুকল খেলোয়াড় হিসেবে নয়, তখন সে বল বয়। পরের বছরে জুনিয়ার টিমের ফুটবলার। তারপর জুনিয়র থেকে সিনিয়র, সিনিয়র থেকে এখন সিনিয়র মোস্ট। আসলে একটা মনস্তত্ত্বতাকে একটি মোহনবাগানে একটানা খেলতে প্রেরণা দিয়েছে- ওই ১৯১১ সালের খেলাটার মধ্যে তিনি যে-প্রেরণার প্রকাশ দেখেছিলেন তা হল ভারতীয়দের স্বাদেশিকতা। ওই স্বাদেশিকতার বোধটাই তাকে টান টান করে রেখে টেনে টেনে নিয়ে এসেছে। এতদূর শান্তি।

ওই ন'বছর বয়সের প্লেয়ারটা অতএব তাঁর নিজের দেখা স্বপ্নটা সার্থক করতে সদা উদ্বুদ্ধ। চুনির জীবনে তাই খেলে টাকা রোজগারের জায়গা ছিল না। বুক ঠুকে বলতে পেরেছেন- যতদিন মোহনবাগানে খেলেছি কোনও টাকা নিইনি। কারণ, আবার তিনি বলেছেন- মোহনবাগানে ঢুকে আমি দেখলাম, এ টিমের ফুটবলারদেরও আলাদা চোখে দেখা যায়। সাহেবদের ক্রিকেট তখন জেন্টলম্যানরা টাকা না নিয়ে প্লেয়ার্সদের চেয়ে বেশি সম্মান হত, তেমনই যে-কোনও মোহনবাগান ফুটবলারদের জন্যে বরাদ্দ ছিল বাড়তি সম্মান। তাই কি? জীবনটা তো ছকে বাঁধা একটা সরলরেখা নয় কারও পক্ষেই। তাই মাঝে মাঝে সাপোর্টাররা, কর্তাব্যাক্তিদের মতোই একটু-আধটু জ্বালা ধরানো কথা যে তাঁকে বলতেন না- তা মনে করার কারণ নেই। হয়তো দেখা গেল পরপর খেলায় ইস্টবেঙ্গলকে গোল দিতে পারছেন না- অমনি টীকা-টিপ্পনি ধোঁয়াল বড়বাবুর তো আবার ইস্টবেঙ্গলের দিন মুন যাব না। কপাল গুণে যদি দেখা গেল যে পরের খেলাতে গোল দিলেন ওই দলের বিরুদ্ধেই- তখন মন্তব্য ধেয়ে এলো- যাক বড়বাবুকে মানুষ করা গেছে।

এমনই একটা সমালোচনা ক্রমাগত তাঁকে ওপরের দিনে আহ্বান করেছে। পরপর তিনটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে চুনি গোস্বামীর অধিনায়কত্বে দেশ সম্মানিত হয়েছে। জাকার্তায় গেলে দুটো রুপো পেয়েছে এশিয়ান কাপ আর মারডেকা খেলায়। এই প্রেরণা আসে কোথকে? একটি নজির তিনিই তুলে ধরেছেন। একবার বলাই চ্যাটার্জি দু'জন বৃদ্ধ খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলাপ করিয়েছিলেন- এঁরা ১৯১১, সালের সেই বিখ্যাত খেলায় খেলেছিলেন খালি পায়ে দাপটের সঙ্গে। একজন হাবুল সরকার, অন্যজন গোলকিপার হীরালাল মুখার্জি। দু'জনেই এত বুড়ো যে বসে আছেন জড়িয়ে জবুথবু হয়ে। কি কৃতিত্ব ওঁদের তা পরে বুঝেছি। শুধু খালি পায়ে বুটের সঙ্গে লড়াই নয়, লড়াই নিজের হীনমন্যতার বিরুদ্ধেও। সাহেবরা সবসময় নিজেদের বড় ভাবে। এই বড় ভাবাটা খেলার মাঠে বিরাট মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা। পরাধীন দেশের লোক হয়ে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা যে কি কঠিন, সেটা যে করেছে, সে বুঝবে। চুনি করেছেন, চুনি বুঝেছেন, এখন বাকিদের বোঝার পালা। চুনি কি করে পেরেছেন? তার ফিরিস্তি দিতে গেলে বই লিখতে হয়। তাঁর একটা মন্ত্র ছিল- A run before a run, a run after a run. চুনি বিশ্বাস করেন এখনও এই দৌড়নোর ব্যাপারটায় বয়স কোনও ব্যাপারই নয়- দৌড়নোর চেয়ে ভাল ব্যায়াম আর কিছুই হতে পারে না।

ফুটবল আর ক্রিকেট দুটোতেই দৌড় হল মাপকাঠি। তিনি বিশ্বাস করে এসেছেন- দৌড় মানুষের ভিতরের শক্তির বিকাশ ঘটায়, বাড়িয়ে তোলে আত্মবিশ্বাস এবং লেগে থাকার সামর্থ্য জোগায়। সেই ছেলেটা যাকে যিনি দেখেন তিনি রোগা-পটকা, হাওয়ায় ওড়ে বলেছেন গোষ্ঠ পাল, উমাপতি কুমারেরা- এই দৌড়নোর অভ্যাসটাই তাঁকে মহার্ঘ চুনিতে বদলে দিয়েছে। একটা সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের এমন খাওয়া জুটতো না- যাকে বলে পুষ্টিকর এবং বলবর্ধক। ওই ছুটে ছুটেই তিনি দম আনেন, হাত-পায়ের সঞ্চালন করেন আর কিছুতেই কং হন না। ফুটবলের মাঠে আর বাইন গজের খেলায়- ব্যাট এবং বলেও তিনি রাজা হয়ে উঠেছেন। এবং টেনিসেও। দৌড়নোর আগে-পরে তাঁর জুটেছে জলখাবারে সেদ্ধ ডিম এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ। কখনও-বা ফলের রস বা শুকনো ফল। ১৯৮৬ সালে এই ছিল এই দৌড়বীরের রুটিন মোহনবাগান মাঠ বা সাউদ ক্লাবের প্রাঙ্গণে। পরে টিসকোতে চাকরি করেছেন। খাওয়ার সময় নির্দিষ্ট- ঠিক বেলা একটায়- ভাত সবজি আর মাংস। রাতেও ভাত এবং দু'বেলাতেই চাই মাংস। রায় জাগেন না। শয্যালীন হন সাড়ে দশটায়। সাধে কি স্ত্রী বাসন্তী তাঁর মধ্যে এত গ্ল্যামারের সন্ধান পান। বাসন্তী দেবীর কথা একটু জানতে চান নাকি? সেটুকুই বলদ যেটুকুতে ক্রীড়াবিদ চুনি জড়িত।


এসব আমার কথা নয়, এসব কথা তিনি আজকাল পত্রিকার দীপঙ্কর নন্দী মশাইকে কথা প্রসঙ্গ বলেছিলেন। চুনির সঙ্গে তাঁর পরিচয় ১৯৬০ সাল থেকে। তখন তাঁরা থাকতেন ডোভার লেনে। চুনিরাও কাছাকাছি। দু'জনেরই ঠাকুমা ছিলেন গলায় গলায় বন্ধু। তাই থেকে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা। ১৯৬২ সালে, পত্র- পত্রিকা, রেডিওতে একটা খবর বারবার ঘোষিত হচ্ছে- জাকার্তায় ফুটবলে ভারতের সোনা জয়। কলকাতা তো আত্মহারা। আত্মহার বাসন্তী দেবীও। গভীর রাতে ফেরার বিমান নেমেছে দমদমে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল বাসন্তী গোস্বামীর একবারটি ছুটে গিয়ে চুনির কান এঁটো করা হাসিমুখটা দেখে আসেন। শেষে কে কি বলে ভেবে যাননি। সারারাত জেগে উত্তেজনার আগুন পুইয়েছিলেন তিনি। পরের দিন দেখা হলে অন্যকোনও কথা নয়, জাকার্তার কথা কেবল হাঁ করে শোনা। আসলে খেলা নিয়েইচুনির সময় কাটতো, ঘনিষ্ঠতার সুযোগটা ঘটবে কেমন করে। বিয়ের কথা ওঠে। বাড়ির লোকে, আত্মীয়-স্বজনে সবাই বলেন যে ছেলে দিনরাত মাঠে মাঠে ঘোরে সে কি কখনও সংসারী হতে পারে? ওকে তুই বিয়ে করার কথা ভুলে যা। হাসতেন তিনি। তিনি তো ভালবাসেন মানুষটাকে, তার গ্ল্যামারকে নয়। তাই বিয়ের আগে কোনওদিন চুনির খেলা দেখতে মাঠে যাননি তিনি। বি একবার তাতাবানিয়ার দুর্ধর্ষ টিম খেলতে এসেছিল। চুনির খেলা দেখে দর্শকরা উচ্ছ্বসিত। চুনির খেলা আর তাঁর দেখা হয় না- বলে তার উচ্ছ্বাস আর প্রতিক্রিয়া বাসন্তীর তবে দেখতে দেখতেই মুগ্ধ সময় শেষ হয়ে যায়। জাকার্তায় স্বর্ণপদক জেতার কথাটা তাঁর মনের মণিকোঠায় চিরজাগরূক হয়ে থেকেছে। আর একটা দিনও তাঁর মোহনবাগানে অসম্মানের বেশ ভারী হয়ে অর্জুন পুরস্কার যুগ পর ১৯৮৫ সরকারের সম্মানের পালক সংযোজিত হল পুরস্কারে ভূষিত তৎকালীন সিং চুনিকে ভূষিত করলেন ১৯৭৭ সালে পেলে এদেশে আবেগে জড়িয়ে করেছিলেন।

জাকার্তা শেষবারের পাওয়ার চেয়ে আদরণীয় ছিল আগে কলকাতা রানি এলিজাবেথ অফ এডিনবরা চুনির সঙ্গে সানন্দে পরিচয় করেছিলেন। তালিকা দিতে গেলে জায়গায় কুলোবে না। সহসচিব থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সচিবও হলেন তিনি। সব চলছিল ভাল। কাছে চিরস্মরণীয়। বিয়ের ঠিক পরে পরেই চুনি পেলেন অর্জুন পুরস্কার। দিল্লির অশোকা হোটেলে এক উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে বাসন্তী দেখেছেন রাষ্ট্রপতি রাধাকৃষ্ণণ পরম গৌরবে চুনির হাতে তুলে দিচ্ছেন অর্জুন পুরস্কারের স্মারক। ভারতীয় খেলোয়াড়ের মধ্যে তাঁর জার্নেল সিং-এর খেলা খুব ভাল লাগত। একটা রসিকতাই তখন খুব চালু হয়ে পড়েছিল খেলার মাঠে। কেউ নাকি একবার জার্নেলকে মোহনবাগান ক্লাব আর মোহনবাগান টিম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। শুনে জার্নেল বলেছিলেন হাসতে হাসতে- সেরা টিম। দু'জন মিলে যদি টিম হত টিম একটা ছিল। ইঙ্গিত ছিল ওই দু'জন তিনি এবং চুনি।

চুনির জীবনে অনেক ওঠার সঙ্গে পড়াও যে ছিল না- তা ভিতরে ভিতরে একটা নয়। ফিফার ট্রেনিং-এ প্রথম শ্রেণি পাওয়া চুনি কেন কোচিং- এ গেলেন না- এ প্রশ্ন মাঠে, মাঠের বাইরে বহুবার উচ্চারিত হয়েছে। চুনি এর স্পষ্ট উত্তর দিয়ে গেছেন- করিনি, একটাই কারণ। মোহনবাগান ছাড়তে পারব না বলে। প্লেয়ার হিসেবে এক ক্লাবে খেলে যাওয়া অনেক সহজ। কোচের পক্ষে তা সম্ভব নয়। কোচ চুনি গোস্বামীকে সফলভাবে বলতে গেলে ক্লাব পরিবর্তন করতে হত। আজ মোহনবাগান, কাল ইস্টবেঙ্গল, পরশু মহামেডান- এটা করতে পারব না বলেই কোচ হইনি। শেষের দিকে চুনিকে নিয়ে সম্মান আর দুটো প্রক্রিয়াতেই উঠতে দেখি। পাওয়ার এক সালে ভারত আরও একটি তাঁর মুকুটে - তিনি পদ্মশ্রী হলেন। রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল পদ্মশ্রী খেতাবে । এর আগে ফুটবল সম্রাট এসে চুনিকে ধরে সংবর্ধিত ১৯৬৪ সালে এশিয়ান গেমসে মতো স্বর্ণপদক একটা কাজ না। তার দু'বছর সফরে এসে এবং ডিউক ক্ষমতার লড়াইয়ের চোরা স্রোত বয়ে যাচ্ছিল। টুটু বসুর সঙ্গে একটা দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো। তিনি স্পষ্টতই ঘোষণা করলেন- চুনিকে দিয়ে কাজ চলছে না- ও তো ছেড়ে দিলেই পারে। এটা ক্লাব কালচারের সঙ্গে। কিন্তু যখন অবিশ্বাসটা টাকা-পয়সাকে ঘিরে উত্তুঙ্গ হয়ে উঠল- তখন আর বাঁচার যেন উপায় রইল না। চুনি সই জাল করছেন, চুনি টাকা-পয়সা সরাচ্ছেন।

অভিযোগটা কোর্ট পর্যন্ত গড়াল। টানাপোড়েন চলতে লাগল। রায় বের হল চুনিকে স্বস্তি দিয়ে- বেকসুর খালাস। কিন্তু আর চালানো যায় না। ধীরেন দে পদ্মশ্রী পাওয়ার পর বলেছিলেন- আজ আমাদের খুবই আনন্দের দিন। চুনি আমাদের খেলেই বিরাট ফুটবলার হয়েছে। হয়তো ও যেদিন থেকে জন্মেছে, সেদিন থেকেই ও মোহনবাগান। ওর পদ্মশ্রী প্রাপ্তিতে আমরা গর্বিত। সেই গর্ব যখন পথের ধুলোয় মিশিয়ে গেল- তখন বীতশ্রদ্ধ তিনি। ছেড়ে দিয়ে বললেন- সব নর্মাল লাগছে। তবে একা তো ক্লাব চালানো যায় না। কী দরকার ছিল আমাকে সচিব করার। এও অবশ্য বলেছিলেন, মানুষ হিসেবে আপনি কতখানি সফল এই প্রশ্নের উত্তরে-

সফল, আমি হানড্রেড পারসেন্ট সফল। কাদা ছিটোনোর পর্ব মানুষ ভুলে গেছে, হয়তো বিশ্বাসই করিনি। কে নাম রেখেছিলেন তাঁর জানি না- কিন্তু তিনি মরকত, তিনি গুণীই। একটা কথা বলতে হবেই তার সহোদরকে নিয়ে- তার মানিক; ওরা জোড় মানিক। অমনই একটা সহোদর পেয়েছিলেন- একেবারে বর্মের মতো। একেবারে রক্ষাকবচের মতো। আর পেয়েছেন লক্ষ কোটি মানুষের ভালোবাসা। সেটাই এখনও সত্যি, চিরদিনের সত্যি।


 

Kommentarer


bottom of page