সদ্য বিয়ের পরপর হানিমুন হোক, বা বিয়ের আগের ব্যাচেলর্স ট্রিপ, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে রিইউনিয়ন বা নেহাতই ফ্যামিলি ট্যুর, বাঙালির বাকেট লিস্টে কিন্তু ক্রমশ উপরের দিকে থাকছে থাইল্যান্ড। ব্যাঙ্কক- পাটায়া-ফুকেট। শুনলেই যেন মনে হয় সিনেমার গানের কোনও দৃশ্য। নীল জল আর অফুরান সবুজের ছড়াছড়ি।
কেন যাবেন?
সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর জঙ্গলে ভরা দ্বীপের মধ্যে গড়ে ওঠা আধুনিক দুনিয়ার অবাধ বিনোদনের ঠিকানা থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক। বিশ্বের অন্যতম আর্কষিত ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হওয়ায় পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক ও এর দ্বীপ পাটায়া। থাইল্যান্ডের পূর্ব-উপকূলে অবস্থিত থাইল্যান্ড উপমহাসাগর ও পশ্চিমে আন্দামান সাগর। উপমহাদেশ তো বটেই সারা বিশ্ব থেকে এখন থাইল্যান্ডে বেড়াতে আসেন অসংখ্য ট্যুরিস্ট। সৈকতের সাদা নরম বালু, সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র, তাতে চরে বেড়ানো রং- বেরঙের ছোট ছোট নৌকা আর পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড় অন্যরকম অনুভূতির জোগান দেয়। সমুদ্র সৈকতের সবকিছুই যেন অত্যন্ত গোছানো। সাগর পাড়ের নীল জল, বন, সাদা বালুময় সমুদ্র সৈকত, আইল্যান্ড ও নীল সমুদ্রের মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ আর তার বেলাভূমি আপনার সাধের হলিডেকে সার্থক করবেই। সৈকতের ধারে আছে অসংখ্য রেস্তোরাঁ-বার, আর রেস্টুরেন্টগুলি খোলাও থাকে ২৪ ঘণ্টা। এছাড়া বিচ রোড থেকে স্পিডবোটে পৌঁছে যাওয়া যায় সমুদ্রের গভীরে এক প্ল্যাটফর্মে, এখানে প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যবস্থা আছে। থাইল্যান্ড হল ডাইভিং এবং স্নকলিং এর স্বর্গরাজ্য, প্রায় সমস্ত দ্বীপেই এই বন্দোবস্ত আছে। এছাড়াও মেনল্যান্ডে হাইকিং আর ক্লাইম্বিংও করানো হয়।
কী কী দেখবেন?
ব্যাক- ঝকঝকে মন্দির, আকাশচুম্বি ইমারত আর আধুনিকতম নাইট লাইফে ভরপুর হল ব্যাঙ্কক, থাইল্যান্ডের রাজধানী। রাজা রামা প্রথম) এই শহর তৈরি করেন। ব্যাঙ্কক শহর শ্যাম উপসাগর পর্যন্ত বয়ে যাওয়া চাও ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত। নতুন ও পুরোনো অংশের (সংমিশ্রণ ঘটেছে এখানে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ব্যান্ধাক এর স্ট্রিট ফুড, খাদ্য রসিক বাঙালীর কাছে যা কিনা প্রধান আকর্ষণের বিষয়। এখানে আপনি ঠান্ডা বিয়ার ও বাড়িতে বানানো দই পাবেন যা কিনা ইউরোপীয় টুরিস্টরা ভীষণ পছন্দ করেন। অনেকে আবার বিখ্যাত থাই ম্যাসাজের ভক্ত, কেউ বা ভালো স্যুভেনিয়র এর খোঁজে বাস্ত থাকেন। রাস্তার পাশে দোকানীদের নুডল ও প্যানকেক ভাজা আপনার নাকে সুড়সুড়ি দেবে। নাম করতেই হয় আরেকটি জায়গার ওয়াতরাচাবোফিত। এখানে দর্শনযোগ্য অলঙ্কৃত ফলকসমৃদ্ধ প্রচুর স্মৃতিসৌধ রয়েছে। দেখতে পারেন ব্যাংককের গ্রান্ড প্যালেস, জাতীয় যাদুঘর ও উইমানমেকগ্রোন হল এবং জিম থম্পসন'স হাউজ।
পাটায়া-
সমুদ্রতীরের ছিমছাম শহর পাটায়া, ব্যাংকক থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে। এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত হানিমুনস্পটও বলা যেতে পারে একে। রাতের গভীরতা যত বাড়ে, আলোর ঝলকানি, সংগীতের মূর্ছনা ততই বেড়ে যায়। নাইট ক্লাব, রেস্তোরাঁ, সমুদ্রের তীর- সবকিছু একাকার। এক কথায় অন্য এক জগৎ। ব্যাঙ্কক থেকে বাসে দু-তিন ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন। দেড়শো কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলবে বাস। সমুদ্রতীরের এই ছিমছাম শহরটি যেন বিনোদনের স্বর্গরাজ্য। ডিস্কো, পাব, গোগো ক্লাবগুলো সমুদ্রতীরজুড়ে সাজানো। পাটায়া থেকে সমুদ্রের ভিতরে তাকালেই দেখা যায় অসংখ্য কোরাল দ্বীপ। সেগুলোও দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো। সবুজের সমারোহের চারপাশে নীলজল। পাটায়া থেকে স্পিড বোটে যেতে পারেন তেমনই একটি দ্বীপ কোরাল আইল্যান্ড -এ। চারদিকে অসীম জলরাশির মধ্য দিয়ে ছুটে চলার রোম্যান্স যেমন আলাদা, তাছাড়াও মাঝ সাগরে জলক্রীড়ার মজাও কম নয়।
ফুকেউ থালংগ স্থানীয় নাম, সবাই চেনে ফুকেট নামে। খাইল্যান্ডের দক্ষিণের একটি দ্বীপ। ব্যাংকক থেকে ফুকেট যেতে পারেন প্লেন কিংবা বাসে। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ জেমস বন্ড আইল্যান্ড এবং ফিফি আইল্যান্ড। এ দুটি আইল্যান্ডে ঘুরতে গেলে মনে হবে স্বপ্নিল কোনো জগতে বিচরণ করছেন আপনি। এ ছাড়া বাঘ-সিংহ থেকে শুরু করে জিরাফ, গজার, ময়ূর, হরিণ, ভাল্লুকসহ হরেক জীবজন্তু আর পাখপাখালির যেন মেলা বসে সাফারি ওয়ার্ডে। ০০৭-খ্যাত জেমস বন্ডসিরিজের চলচ্চিত্রের জীবন্ত প্রদর্শনী দেখা যাবে এই পার্কে। সরাসরি আয়োজিত ৪৫ মিনিটের এই শো হলিউড সিনেমার নানা অ্যাকশন দৃশ্যে ভরপুর। বিদান্ত হেলিকপ্টারের ভস্মীভূত হওয়ার দৃশ্য, আগুনে পুড়ে মানুষের কঙ্কাল হয়ে যাওয়া সাগরের ভীতর দিয়ে দিয়ে দ্রুতগতিতে স্পিডবোটে হিরোইনের চলে আসা- এ রকম অনেক আকর্ষণীয় বিষয় দিয়ে সাজানো হয়েছে সাফারি ওয়ার্ল্ড। মাই খাও যা এখানকার দীর্ঘতম সৈকত। সাঁতার কাটা ও বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আদর্শ আরেকটি সৈকত হল নাই ইয়াং।
চিয়াং মাই-থাইল্যান্ডের উত্তর সীমান্তে পাহাড় ঘেরা বিখ্যাত পর্যটন নগরী চিয়াং মাই। শীতের সময় এখানে সেখানে গাছ ভরে ফুটে থাকা সিয়ামিজসাকুরা বা ওয়াইল্ড হিমালয়ান চেরি, গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত এই তিন ঋতুর অঞ্চল চিয়াং মাই এ পর্যটনের জন্য সেরা সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত শীতের তিন মাস। শহরে কয়েকটা প্রধান মন্দির রয়েছে। একটির নাম ওয়াত চিয়াং মান যা সবচেয়ে পুরোনো। অন্য একটির নাম ওয়াতচেদিলুয়াং যা ১৫৪৫ সালের ভূমিকম্পে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওয়াতফ্রা সিং- এ ফ্রা সিং বুদ্ধম এর একটা ছবি রয়েছে। সবচেয়ে দর্শনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্দির হল ওয়াতন্ত্রৎখাত দই সুদেশ। এটা একটা ভূ-চিহ্ন যেখান থেকে শহর দেখা যায়, শহর এখান থেকে ১৫ কিমি দূরে। মন্দির ছাড়াও এখানে প্রচুর শপিং এর সুযোগ আছে, যেমন অ্যান্টিক জুয়েলারী, পাইপ, এমব্রয়ডারী, সিল্ক, সুতি কাপড়, বুড়ি, সেলাডন, রুপার অলংকার, ফার্ণিচার, ল্যাকার ওয়্যার, খোদাই কাঠ এবং নানারকম ছাতা।
আন্ডার ওয়ার্ল্ড পাটায়া- নাম শুনেই বোঝা যায় যে এটা সমুদ্রের তলায় স্থাপিত আধুনিক অ্যাকোয়ারিয়াম। সমুদ্রের তলদেশে বিশাল টানেলের ভিতর দিয়ে হাঁটা যায় আর হাঁটার সময় পাশ দিয়ে হাঙর ছুটে যাবে। ট্রারিস্ট আর হাঙর। মাঝখানে ব্যবধান সামান্য একটা কাচের দেয়াল। ভাবুন তো কেমন এক্সাইটিং হবে। ব্যাপারটা ?
নংনচ ট্রপিকাল গার্ডেন- এটাই নাকি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর বাগান।
নানা প্রকার গাছের দেখা মিলবে এখানে। নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিড়িয়াখানা এবং থাইল্যান্ডের হাতির গেম শো উপভোগ করতে পারবেন।
মিনি সিয়াম- পৃথিবীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্থাপিত ঐতিহাসিক এবং বিখ্যানস্থাপনার সংস্করণ নিয়ে সাজানো হয়েছে পৃথিবীর ভিতরে ছোট্ট আরেকটা পৃথিবী।
পাটায়া এলিফ্যান্ট ভিলেজ- সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ড। খাইল্যান্ড এসে হাতি না দেখে ফিরতে না চাইলে ঘুরে আসুন এলিফ্যান্ট ভিলেজ থেকে। এটি অবশ্য পাটায়া মূল শহর থেকে দূরে অবস্থিত।
মিলিয়ন ইয়ারসস্টোন পার্ক রুপকথার সেই গল্পটা মনে আছে?
একটা গ্রামের সব কিছুই পাথরে পরিণত হয়। এইটা সেই গ্রাম। ভাই ট্রেন- স্কাই ট্রেনকে থাইল্যান্ডবাসীরা চেনে বিটিএস নামে। শুধু ট্রেন চলাচলের জন্য রাস্তার উপর ফ্লাইওভার করা।
ব্যাপারটা এমন যে, আকাশপথে ট্রেনযাত্রা। সিয়াম সেন্টার, সিয়াম সেন্টার বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের
বিপনি বিতান। কী নেই এখানে। বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পারফিউম, শু থেকে শুরু করে দামী ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি। সিয়াম সেন্টারের একদম নিচ তলায় সিয়াম ওশান ওয়ার্ল্ড। উপর থেকে মনে হয় সমুদ্রের নিচে দর্শনার্থীরা হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। এমনভাবে সবকিছু সাজানো যে মনে হবে সমুদ্রের প্রাণীগুলো জীবন্ত। অনেকটা মাদাম তুসো যাদুঘরের মতো। ওশান ওয়ার্ল্ডের সাথেই ৫টি সিনেমা হল।
রিভার ক্রজ- ব্যাঙ্ককের মূল আকর্ষণ চাও ফ্রায়া রিভার ক্রজ। রিভার ক্রজের জন্য নির্দিষ্ট কমপ্লেক্সে আসা মাত্রই রাজকন্যাবেশি সুন্দরী থাই রমনী প্রত্যেকের বুকে রিভার ক্রজের ব্যাজ লাগিয়ে, প্লাস্টিকের ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়। রিভার ক্রজে বসেই ব্যাঙ্ককের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশিল্প আর আধুনিক স্থাপত্যের সাথে
পরিচয় হয়ে যাবে।
চেখে দেখুন শুধুই চোখের দেখা নয়, আপনার জিভকেও করুন লাগামছাড়া।
ট্যুরিস্টদের কাছে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার উমইয়ামণ্ডং। চিংড়ি আর মাশরুমের সঙ্গে লেমনগ্রাস, আদা, পেঁয়াজের মতো সুগন্ধিযুক্ত নানা হার্ব মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। এখানকার তৈরি প্যাড থাইও বেশ জনপ্রিয়। এটি টফু (সয়াবিন থেকে তৈরি এক ধরনের খাবার), শিম, পেঁয়াজ ও বাদাম দিয়ে তৈরি। এর সঙ্গে বাড়তি স্বাদ হিসেবে যোগ করা হয় ফিশ সস, চিনি, মরিচের গুঁড়ো ও বাদাম গুঁড়ো। প্যাড থাই ছাড়াও চেখে দেখতে পারেন রোস্টেড কাজুবাদাম, সয়া সস, মধু, রসুন, মরিচ আর মুরগি দিয়ে তৈরি সুস্বাদু গেই মে মা মং।
যারা স্যুপ খেতে ভালবাসেন, থাইল্যান্ডে এলে এর স্বাদ নিতে ভুলবেন না। মুরগির মাংসের সঙ্গে নারকেলের দুধ, লেমনগ্রাস, আদা ব্যবহার করা হয় এতে। পেট পুরে খাই ফ্রায়েড রাইসের স্বাদ নিতে হলে খেতে হবে কউফাত। চিকন চালের ভাত আর তার সঙ্গে মুরগির মাংস, চিংড়ি, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো দিয়ে তৈরি এ খাবার।
থাইল্যান্ডের আরো একটি জনপ্রিয় খাবারের নাম না বললেই নয়। স্বাদের দিক থেকে একেবারে স্বতন্ত্র এই খাবারের নাম খ ম্যাঙ্গাই। ভাতের সঙ্গে সিদ্ধ করা মুরগির মাংস, তার সঙ্গে মিষ্টি ও ঝাল সস দিয়ে পরিবেশন করা হয় খ ম্যাঙ্গাই।
প্রয়োজনীয় তথ্য:
মুদ্রা: খাই ভাট (চ), এক খাই ভাট ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ টাকা ১২ পয়সার মত। মাস্টার বা ভিসা বা ক্রেডিট কার্ড এখানে প্রায় সব বড় দোকান, হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গ্রহণ করে, এটিএম মেশিনও আছে প্রচুর, তবে প্রতিটা লেনদেনে ১৫০ থেকে ১৮০ থাই ভাট করে ফিস দিতে হয়। ভাষা; ইংরেজি মোটামোটি সবাই বোঝে বা বলে।
ভিসা: সাধারণত ভারতীয়দের জন্য ইন্টারন্যাশনাল এয়ারর্পোটে অন অ্যারাইভাল ৩০ দিনের ট্যুরিস্ট ভিসা পাওয়া যায় ২০০ ভাট এর বিনিময়ে (পাসপোর্ট অন্ততপক্ষে ছয় মাস ভ্যালিড থাকতে হবে), আর বর্ডার থেকে ১৫ দিনের (জাহাজে করে গেলে), তবে ৬০ দিনের টুরিস্ট ভিসা নিতে গেলে আগে থেকে
থাই কনসুলেট এ অ্যাপ্লাই করতে হবে।
সময় পার্থক্য: কলকাতার থেকে ব্যাঙ্কক, থাইল্যান্ডের এর সময় পার্থক্য দেড় ঘণ্টার, কলকাতার থেকে ব্যাঙ্কক দেড় ঘণ্ট
এগিয়ে। থাইল্যান্ড যাওয়ার সেরা সময়: নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত। এই সময় আবহাওয়া সবচেয়ে আরামদায়ক থাকে।
কীভাবে থাইল্যান্ড যাবেন: কলকাতা থেকে প্রতি দিন স্পাইস
জেট, ইন্ডিগো, থাই এয়ারওয়েজ, থাই এয়ার এশিয়া, ভুটান এয়ার ওয়েজে ও দ্রুক এয়ার এর প্রায় ৬টির বেশি বিমান সরাসরি ব্যাঙ্কক যাতায়াত করে, ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট এর মতো সময় লাগে। এছাড়া অসংখ্য ভায়া বিমানও অপেক্ষাকৃত কম দামে উপলব্ধ।
মোবাইল ফোন। লোকাল সিম পাসপোর্ট কপির বদলে পাওয়া যায় লোকাল দোকানে। ব্যাঙ্কক, চিয়াং মাই, পাটায়া ও ফুকেটের মত সব প্রধান শহরগুলোতে ফোরজি আছে। এছাড়া কলকাতার সিম ইন্টারন্যাশনাল রোমিং করেও ব্যবহার করা যায়।
থাইল্যান্ডের ISD Code: 66.
ট্রারিস্ট ইনফরমেশন: ব্যাঙ্কক, চিয়াং মাই, পাটায়া ও ফুকেটের মত সব প্রধান শহরগুলোতে ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার আছে।
ট্রান্সপোর্ট:
প্রচুর বাস (লোকাল/ইন্টারসিটি), অসংখ্য শেয়ার ট্যাক্সি, মোটর বাইক ভাড়া পাওয়া যায় কম দামে, সিনিক ট্রেনও আছে- ব্যাঙ্কক থেকে চিয়াং মাই বা সুরাউখানি; এছাড়া বাজেট এয়ারলাইন্স এর প্রচুর ডোমেস্টিক ফ্লাইটও আছে।
মনে রাখবেন
থাইল্যান্ডের যেটা সবচেয়ে ভালো, সেটা হলো ওদের মোটর সাইকেল ট্যাক্সি সার্ভিস। এককথায় এটা একটা দুর্দান্ত সার্ভিস। একটা জ্যামপ্রবণ শহরে এর চেয়ে ভালো সার্ভিস আর হতে পারে না। মেট্রো থেকে শুরু করে ট্যাক্সিসহ সবধরনের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থাকলেও এদের এই সার্ভিসটা চমৎকার। বিশেষ করে যারা একাকী পর্যটক বা কাজে এসেছে, তাদের জন্য এটা খুবই ভালো বাহন। অল্প খরচে যেকোনও জায়গায় যাওয়া যায়। আর এরা প্রায় সব জায়গায়ই চেনে। জাস্ট একটু ওদের ঠিকানাটা বুঝিয়ে দিলেই হলো। এরা টুকটাক ইংরেজিও জানে।
থাইল্যান্ডের কিছু জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত: কো মাক বীচ/ কো ফাইয়ামবাইক বীচ/ হাট মাই নাম বীচ/ কোবুলন লেহ বীচ হল জনপ্রিয় বীচ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
বাংলার রাজভোজ
..বিখ্যাত সব রাজপরিবারের সিক্রেট রেসিপি
ধুলো পড়ে গিয়েছে মলিন মেঝেয়। জাফরি ঘিরে আঁধার! মেহমানখানা স্তব্ধ নিশ্চুপ। অন্দরের কোনও জানালা দিয়ে চুপিসারে উঁকি মারে না কেউ। মজলিস নেই, রোশনাই হারিয়েছে। কিন্তু বাতাসে এখনও তাঁদের সাড়া জাগে। মাঝেমধ্যে ইতিহাস থেকে প্রাণ পায় কিছু চরিত্র। তখন আবার আসর সাজে, রঙিন নেশায় চোখ স্বপ্ন দেখে। লজিজ পাকওয়ানের সুগন্ধে ভেসে যায় চারদিক।
বেশ কয়েক বছর আগে সেই কাজের তাগিদেই ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল বাংলার ক'টি রাজবাড়ির অন্দরমহল। কথা হয়েছিল রাজগিন্নিদের সঙ্গে। সেই সব স্মৃতি হাতড়ে, মলিন খাতার ধুলো ছেড়ে খুঁজে পাওয়া ক'টি অন্যরকম পদ, এবারের পাতে!
নিরামিষ খাসির মাংস (সুরুল রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
মাটন (নুন ও হলুদ মাখিয়ে ১৫ মিনিট ম্যারিনেট করা): ৫০০ গ্রাম, আলু (৪ টুকরো করে ভাজা): ২টি, আদাবাটা: ৭৫ গ্রাম, হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ, টকদই: ২ টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়ো: ২ টেবিল চামচ, চিনি: ১/২ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা: ৫টি, ছোট এলাচ (আধ ভাঙা): ১০টি, তেজপাতা: ১টি, গোলমরিচ (শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করা): ৮টি, সর্ষের তেল: ২ টেবিল চামচ, ঘি: ৩ টেবিল চামচ, জল; ৩ কাপ, নুন: স্বাদ অনুযায়ী।
কীভাবে বানাবেন
আদা, লঙ্কাবাটা, দই, ধনেগুঁড়ো আর এলাচ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মাটনে মাখিয়ে ১ ঘন্টা রাখুন। প্রেসার কুকারে তেল ও ঘি একসঙ্গে গরম করে তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে ম্যারিনেট করা মাংস, নুন ও চিনি দিয়ে ৫ মিনিট কষে জল ও আলু দিয়ে ঢাকনা আটকে দিন। মাংস সেদ্ধ হলে ১০ মিনিট পর নামিয়ে গোলমরিচগুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
ডালের সিঙ্গারা (শোভাবাজার রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
ময়দা, ৩ কাপ, ঘি: ৪ টেবিল চামচ, চিনি: ১ চা চামচ, সাদা তেল; প্রয়োজন অনুযায়ী, নুন: ১ চা চামচ।
পুরের জন্য
ছোলার ডাল (সারা রাত ভিজিয়ে বাটা): ২৫০ গ্রাম, আদা-লঙ্কাবাটা: ১ চা চামচ, চিনি: ১/২ চা চামচ, সাদা তেল: ২ টেবিল চামচ, নুন: স্বাদ অনুযায়ী।
কীভাবে বানাবেন
ময়দা, নুন, চিনি, ঘি ও জল মিশিয়ে ভালো করে মেখে ৩০ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। ডালবাটা, আদা-লঙ্কাবাটা, নুন ও চিনি মিশিয়ে রাখুন। তেল গরম করে পেস্টটি দিয়ে ভাজুন। ডাল ঝরঝরে হলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন।
মাখা ময়দা থেকে লেচি কেটে ছোট ছোট লুচির আকারে বেলে মাঝখান থেকে কেটে সিঙ্গারার খোল বানান। এর ভিতরে ডালের পুর ভরে ভালো করে চেপে চেপে মুখ বন্ধ করে হালকা গরম তেলে ডিপ ফ্রাই করে ভেজে পরিবেশন করুন। চাইলে ২-৩ দিন রেখেও দিতে পারেন।
আগা সন্দেশ (শোভাবাজার রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
গরুর দুধ: ২ লিটার, চিনি: ১ কেজি।
কীভাবে বানাবেন
বেশ কিছুক্ষণ দুধ ভালো করে ফুটিয়ে চিনি মেশিয়ে নাড়তে থাকুন। দুধ মরে ক্ষীর খুব ঘন হয়ে এলে নামিয়ে রাখুন। হালকা গরম অবস্থায় কিছুটা করে নিয়ে ছাঁচে ফেলে মনের মতো সন্দেশ গড়ুন। যদিও রাজবাড়িতে লম্বা লম্বা মন্দিরের চুড়োর আকারের সন্দেশ বানানো হয়। ঠাণ্ডা হলে। পরিবেশন করবেন।
ছানার কালিয়া (শোভাবাজার রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
ছানা (জল ঝরানো): ৩০০ গ্রাম, ময়দা: ১ টেবিল চামচ, হলুদ: ১ চা চামচ, টোম্যাটো (কুচানো, মাঝারি আকারের): ১টি, জিরে: ১/২ চা চামচ, তেজপাতা ১টি, সর্ষের তেল: ১ টেবিল চামচ, বড় এলাচ গুঁড়ো: ১ চা চামচ, ঘি: ১ চা চামচ, আদা- জিরে-কাঁচালঙ্কা মিশিয়ে বাটা: ১ টেবিল চামচ, কাজুবাদাম বাটা: ১ টেবিল চামচ, নুন ও চিনি: স্বাদ অনুযায়ী।
কীভাবে বানাবেন
ছানা, ময়দা, নুন, চিনি ও এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মেখে একটি থালায় ছড়িয়ে চৌকো চৌকো টুকরো করে কেটে নিন। তেল গরম করে এই টুকরোগুলো লাল করে ভেজে তুলে রাখুন। ওই তেলে তেজপাতা ও গোটা জিরে ফোড়ন দিয়ে একে একে আদা-জিরে-কাঁচালঙ্কা বাটা, কাজুবাদাম বাটা, নুন, হলুদ, চিনি ও টোম্যাটোকুচি দিয়ে কষাতে থাকুন, মাঝেমধ্যে অল্প জল দিন। জল ফুটতে শুরু করলে ভাজা ছানা দিয়ে দিন। আরও কিছুক্ষণ ফোটার পর ঝোল ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ওপর থেকে ঘি ও বড় এলাচের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন।
বাদাম ছানা (কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
ছানা (ছোট ছোট টুকরোয় কেটে ঘিয়ে ভেজে রাখা): ২০০ গ্রাম, কাজুবাদাম (ভেজে রাখা): ১৫টি, ঘি: ১/২ কাপ, তেজপাতা: ৪টি, গরম মশলা (লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ): ৪টি করে, গোবিন্দভোগ চাল: ১/২ কেজি, আদাকুচি: ১/২ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা কুচি: ৪টি, কচি ডাবের জল: ১টি, টোম্যাটোর রস: ১টির, কিশমিশ: ১ মুঠো, এলাচগুঁড়ো: ১/২ চা চামচ, জয়িত্রি ও জায়ফল গুঁড়ো: ১/৪ চা চামচ, নুন ও চিনি: স্বাদ অনুযায়ী।
কীভাবে বানাবেন
ছানা চটকে চোট ছোট টুকরো করে ঘিয়ে ভেজে রাখুন। এবার বাকি ঘি গরম করে তেজপাতা আর গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিন। একটু পর ধুয়ে রাখা চাল দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে আদা ও কাঁচালঙ্কা কুচি দিন। চাল ভাজা হলে ডাবের জল, টোম্যাটোর রস, নুন, চিনি, কাজুবাদাম ও কিশমিশ দিয়ে ঢাকা দিন। চাল সেদ্ধ হলে ভাজা ছানার টুকরো মিশিয়ে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। পরিবেশনের আগে ঢাকা খুলে গরম গরম সার্ভ করুন।
পাতায় মোড়া ভেটকি (কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
ভেটকি মাছ: ৬ টুকরো, কুমড়ো পাতা (কচি পাতা, নুন ঘষে ভালো করে ধুয়ে রাখা): ২০টা, সর্ষের তেল: ১ কাপ, নুন: স্বাদ অনুযায়ী।
মশলার জন্য:
(সব উপকরণ একসঙ্গে বাটুন) সর্ষে: ১ টেবিল চামচ, নারকোল কোরা: ১/২ কাপ,
পোস্ত: দেড় টেবিল চামচ, কাঁচালঙ্কা: ২টি।
কীভাবে বানাবেন
বাটা মশলা, নুন ও সর্ষের তেল একসঙ্গে মিশিয়ে মাছের গায়ে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। ২-৩টি করে পাতা নিয়ে তার মধ্যে একটি করে মাছের টুকরো রেখে চারধার ভালো করে মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে নিন। প্রায় সেদ্ধ হয়ে আসা ফুটন্ত ভাতের মধ্যে পাতায় মোড়া মাছ দিয়ে দিন। ভাত হয়ে গেলে এগুলি সমেত ফ্যান করিয়ে রাখুন। পরিবেশনের আগে সাবধানে ভাতের ভেতর থেকে বের করে নিন।
ফলের কাইতে ইলিশ (কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ: ৬ টুকরো, আনারস (পাতলা করে কেটে রাখা): ৮-১০ টুকরো, সর্ষে: ১ টেবিল চামচ, পোস্ত: ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ, আদাবাটা: ১ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা বাটা: ৪-৫টি, চেরা কাঁচালঙ্কা: ৬টি, সর্ষের তেল: ২ টেবিল চামচ, মিছরি গুঁড়ো: স্বাদ অনুযায়ী, নুন; স্বাদ অনুযায়ী।
কীভাবে বানাবেন
সর্ষে ও পোস্ত একসঙ্গে বেটে রাখুন, আনারসের টুকরোয় নুন ও মিছরির গুঁড়ো মাখিয়ে রাখুন। মাছের টুকরোয় সর্ষে-পোস্ত বাটা, নুন, হলুদ, আদা ও কাঁচালঙ্কা বাটা মাখিয়ে রাখুন। একটি স্টিলের টিফিন কৌটোর নীচে অর্ধেক আনারসের টুকরো সাজিয়ে মশলা মাখানো মাছের টুকরোগুলি দিয়ে ওপরে বাকি আনারসের টুকরো দিয়ে ঢেকে দিন। শেষে চেরা কাঁচালঙ্কা ও সর্ষের তেল ছড়িয়ে কৌটো ঢেকে ৩০- ৪০ মিনিট ভাপে বসান। মাছ সেদ্ধ হলে নামিয়ে ধনে পাতা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
টোম্যাটো মাছ (কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি)
কী কী লাগবে
ভেটকি মাছ (বড় মাপের গাদার) ৬টি টুকরো, নুন ও হলুদ, আদা বাটা: ১/২ ইঞ্চি, জিরে ভাজা গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ, পাঁচফোড়ন: ১/৪ চা চামচ, তেজপাতা: ২টি, লঙ্কা গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ, গরমমশলা গুঁড়ো: ১ চা চমচ, ধনেপাতা কুচি: ১/২ কাপ, ঘি: ১ চা চামচ, টোম্যাটো (বড়, পেস্ট করে ছেঁকে রাখা): ২টি, সরসের তেল; প্রয়োজন অনুযায়ী, নুন ও চিনি: স্বাদ অনুযায়ী।
কীভাবে বানাবেন
তেল গরম করে তেজপাতা ও পাঁচফোড়ন দিন। এবার আদা বাটা, জিরে বাটা, হলুদ ও লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে কষান। মশলার কাঁচা গন্ধ চলে গেলে টোম্যাটো পেস্ট, নুন, চিনি ও পরিমাণ মতো জল দিয়ে নাড়তে থাকুন। হয়ে গেলে মাছগুলো ছেড়ে দিন। মাছ সেদ্ধ হলে ধনেপাতা, ঘি ও গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন।
Comments