সবুজ পাহাড়ে ঘেরা শান্ত স্নিগ্ধ মনোহর পরিবেশ, সকালে পাহাড়ের পেছন থেকে উঁকি দেওয়া সূর্য, লেকের জলে পরেশনাথ পাহাড়ের ছায়া; মায়াবী অনুভূতির রূপকথা নিয়ে ঝাড়খণ্ড ভ্রমণের অপরূপ কাহিনীর বর্ণনায় শ্রী সরোজ মজুমদার।


১ম দিন ২৩/০১/২৪
এবারের শীতে ছোটনাগপুরের রানীর কাছে যাওয়ার খুব সখ হল। একসাথে পাহাড়, ঝর্ণা, জঙ্গল, ড্যাম, লেক ও শাল-পলাশ-পাইন-সেগুনের বন দেখার ইচ্ছে, “মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে তাতা থৈথৈ” এর মতো আমার মনে চেপে বসলো। তাই অগত্যা জানুয়ারীর শীতের মধ্যে রাত ২টোয় ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে রেডি হয়ে ভোর ঠিক ৩টেয় বেলঘরিয়ার বাড়ি থেকে আমার বাজাজ অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট-২২০ বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ঝাড়খণ্ডের উদ্দ্যেশে। শক্তিগড়ে এসে ঠান্ডায় আর থাকতে না পেরে বাইকের ইঞ্জিনে হাত সেঁকে এক কাপ গরম কফি খেয়ে নিলাম ও রাইডিং জ্যাকেটের উপর রেইনকোটটি চাপিয়ে নিলাম।

ধানবাদ, তোপচাঁচি পেরিয়ে বরহি চউকে এসে এন.এইচ-১৯ কে ছেড়ে বাঁদিকে রাঁচি-পাটনা রোড ধরলাম। দুপুর বারোটায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারীবাগ রাজাদের তৈরী “পদ্মা কিলা হাওয়া মহলে’’ এসে উপস্থিত হলাম। অন্যান্য সুন্দর স্থাপত্যের সাক্ষী হয়ে চলে এলাম জিহুতে চামেলী ঝর্ণা দেখতে। শীতের সময় হওয়াতে ঝর্ণায় জল কম থাকলেও সবুজ রঙের জলের পাথুরে লেকটি দেখতে অসাধারণ লাগছিল। এরপর সবুজ অরণ্যে ঘেরা লোটওয়া ড্যাম ও জলাধার দেখে হাজারীবাগ অভয়ারণ্যের গেট থেকে টিকিট কেটে অভয়ারণ্যের ভিতর প্রবেশ করলাম। অভয়ারণ্যের মধ্যে থাকার জন্য গেস্ট হাউস ও বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে। হরিণ, বাদর ও ময়ূরের দেখা পেয়ে অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে বিকেল ৩:৩০এ হাজারীবাগের হোটেলে চেকইন করে একটু ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম অনতিদূরে গালওয়ান ভ্যালিতে। এটি হলদেটে বর্ণের পাথরে ঘেড়া সুন্দর একটি লেক যা বিকেলের সোনালী আলোয় স্বর্ণাভ রূপ নিয়েছে।
এবার গোটা হাজারীবাগ শহরটিকে একসাথে দেখতে ক্যানারি হিলে চলে এলাম। নির্দিষ্ট স্থানে বাইক পার্কিং করে সিঁড়ি বেয়ে ক্যানারি পাহাড়ের যত উপরে উঠতে থাকলাম ততই পুরো হাজারীবাগ শহরটি চোখের সামনে ধরা দিচ্ছিল। পাহাড়ের একদম উপরে যখন পৌছালাম তখন সন্ধ্যে হয়ে এসেছে, আকাশে চাঁদ উঠেছে। হাজারীবাগের ক্যানারি হিল শহরের একটি মনোমুগ্ধকর প্যানোরামা এবং পাহাড়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখায়। চাঁদের আলো পুরো পরিবেশকে মোহময় করে তুলেছিল। রাতের আলোয় উদ্ভাসিত হাজারীবাগের বুক চিরে যাওয়া জাতীয় সড়কটিকে পাহাড়ের উপর থেকে দেখে প্রবাহমান নদি বলে মনে হচ্ছিল। পূর্ণিমা রাত্রির মত্ততা মনে মেখে নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। আজকে সারাদিনের পথচলা ছিল ৪৪০কিমি।
রাতঠিকানা: হোটেল প্রিন্স; এন.এইচ-৩৩, নবাবগঞ্জ, হাজারীবাগ-৮২৫৩০১, ঝাড়খন্ড। দূরাভাষ: ০৬৫৪৬২২২১৩৯

২য় দিন ২৪/০১/২৪
সকালে হাজারীবাগের হোটেলে চেক আউট করে পৌঁছে গেলাম হাজারীবাগ ঝিলে। পাখির কলতান শুনে আর সকালে ঝিলের মুক্ত বায়ু গায়ে মেখে রওনা হলাম ঝাড়খণ্ডের লাতেহার এবং পালামু জেলার ছোট নাগপুর মালভূমিতে অবস্থিত বেতলা জাতীয় উদ্যানের পথে। বরকাগাও, বালুমঠ, মনিকা হয়ে দুপুর সাড়ে বারোটায় বেতলার হোটেলে চেক ইন করলাম। ঝাড়খণ্ডের রাস্তাঘাট খুব সুন্দর। বাইকে পেট্রল ভরে ও মধ্যান্ন ভোজন সেরে দুপুর দুটোয় বেতলা ন্যাশনাল পার্কের টিকিট কাউন্টার থেকে ১২০০ টাকার বিনিময়ে একঘন্টার কার সাফারি বুক করলাম। "বেতলা" BETLA ইংরেজি শব্দটি বাইসন, এলিফ্যান্ট, টাইগার, লেপার্ড এবং অ্যাক্সিস এর সংক্ষিপ্তকরণ। গাইড কে সঙ্গে নিয়ে চেক পোস্ট পেরিয়ে বেতলা ফরেস্টের মধ্যে ঢুকে পড়লাম।
জঙ্গলের ভিতরের আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে এগোতে না এগোতেই একটি গাছের তলায় একদল হনুমানের সাথে দেখা হয়ে গেলো। একটু এগিয়ে খানিকটা দূরে দেখলাম একটি গজরাজ মনের আনন্দে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিচ্ছে। ঘন সবুজ অরণ্যের মেদুরতা ও গন্ধ নিতে নিতে হরিনের দলের চঞ্চল ছোটাছুটি চোখে পড়ল। কিছু ময়ূর গাছের এডাল থেকে ওডালে আবার কখন মাটির কাছাকাছি উড়ে বেড়াচ্ছিল। ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে চললাম ৩ কিমি দূরে আওরঙ্গা নদীর তীরে ৭০০ বছরেরও বেশি পুরনো ঐতিহাসিক পালামু ফোর্ট দেখতে। এখানে দুটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ আছে। পুরানো দুর্গটি, যা চেরো রাজবংশের আগেও ছিল, রাকসেল রাজবংশের রাজা তৈরি করেছিলেন।

প্রথমে পুরানো দুর্গে গিয়ে দুর্গের ভিতরটা পুরো ঘুরে দেখলাম। এরপর সিঁড়ি বেয়ে দুর্গের উপরে উঠলাম। চারিদিক সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এবং দুর্গের কাছেই জঙ্গলের মধ্যে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে চললাম দ্বিতীয় দুর্গটি দেখতে। রাস্তার পাশে বাইক রেখে মাটি ও বোল্ডারে তৈরি চড়াই পথ পেরিয়ে দুর্গে পৌছালাম। দুর্গের ভিতরটা দেখে সিঁড়ি দিয়ে সোজা দুর্গের উপরে উঠে গেলাম। উপর থেকে যা দৃশ্য দেখলাম তা মনের ক্যানভাসে আঁকা হয়ে গেলো। সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে আওরঙ্গা নদী বয়ে গেছে। দুর্গের দেয়াল গুলিতে রয়েছে পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন। দুর্গের উপর থেকে দেখা অস্তগামী সূর্যের রক্তিমতা ভোলার নয়।
দূর্গ থেকে নেমে চললাম আওরঙ্গা ও উত্তর কোয়েল নদীর মিলনস্থল কেচকি সঙ্গমের উদ্যেশে। সঙ্গমের একটু আগে একটি রেলওয়ে ক্রসিং গেট পেরিয়ে সন্ধ্যের ঠিক আগে সঙ্গমস্থলে পৌছালাম। চারিদিক সবুজ পাহাড়ে ঘেরা সাদা বালুময় নদীতট পিকনিক করার জন্য আদর্শ স্থান। আওরঙ্গা নদীর উপর রেল ব্রিজ ও উত্তর কোয়েল নদীর উপর সড়ক ব্রিজ দুটি সঙ্গমস্থলের অতি নিকটে হওয়ায় চাঁদের আলোয় পুরোপুরি দৃশ্যমান। জোস্ন্যা রাতে ট্রেনের হুঁইসেল বাজিয়ে পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি করে রেল সেতুর উপর দিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দৃষ্টিনন্দন। মাঝে মাঝে নদীর ওপার থেকে দলবদ্ধ শেয়ালের ডাক বাতাসকে মুখরিত করে তুলছিল। এবার হোটেলে ফেরার পালা। আজ সারাদিনের পথচলা ছিল ১৭০কিমি।
রাতঠিকানা: হোটেল বন বিহার; বেতলা ন্যাশনাল পার্ক, এন.এইচ-২৩, বেতলা-৮২২১১, ঝাড়খন্ড।
দূরাভাষ: ০৯১০২৪০৩৮৮২

৩য় দিন ২৫/০১/২৪
সকালে ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা বেশ কম ছিল। কুয়াশা ও দারুন ঠান্ডার কারণে বাইক চালাতে অসুবিধে হওয়ায় বাইকের ইঞ্জিনে একটু হাত সেকে নিলাম। পলামু টাইগার রিজার্ভ, কোয়েল ব্রিজ হয়ে গারু পেরিয়ে এসে সমতলের রাস্তা ছেড়ে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে উপরে উঠতে থাকলাম। সীমা-খাস, পান্ডরা হয়ে চটকপুরে এলাম যেখানে রাস্তা দুটি ভাগ হয়ে গেছে; একটি গেছে নেতারহাটের দিকে আরেকটি রাঁচির দিকে। চটকপুর থেকে নেতারহাটের দিকে সবুজ পাহাড়ি পথ বেয়ে যত এগোতে থাকলাম চারিদিকের সৌন্দর্য্য ততই বাড়তে থাকল। নেতারহাট সমুদ্রতল থেকে ১,০৭১ মিটার উচ্চতায় ঝাড়খণ্ডের লাতেহার জেলার একটি শৈল শহর। শহরটি ছোট নাগপুর মালভূমির রাণী নামেও পরিচিত।
নেতারহাট তার মনোরম জলবায়ু, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নির্মল পরিবেশের জন্য পরিচিত। সকাল সাড়ে এগারোটায় হোটেলে চেক ইন করে নেতরাহাট শহর ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে চললাম ম্যাগনলিয়া সানসেট পয়েন্টের দিকে। পথে যেতে অসাধারণ সুন্দর পাইন ফরেস্ট পেলাম, যেখানে মন শুধুই হারিয়ে যেতে চায়। এরপর চললাম উচ্চ ঘাঘরি জলপ্রপাত দেখতে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে কয়েক ধাপ নিচে নেমে পৌঁছে গেলাম ঘন সবুজ অরণ্যে ঘেরা আপার ঘাঘরি ওয়াটারফলসে। বর্ষাকালে এই জলপ্রপাতটি একটি দুর্দান্ত দৃশ্যে রূপান্তরিত হয়। এখান থেকে বেরিয়ে কাছেই একটি নাশপাতি বাগানে গেলাম। নেতারহাটে একাধিক নাশপাতি বাগান আছে; যদি নশপাতির স্বাদ নিতে হয় তাহলে জুন-জুলাই মাসে এখানে আসতে হবে।

অসাধারণ পাইনের জঙ্গলের পটভূমিতে ছবির মত সুন্দর কোয়েল ভিউ পয়েন্ট। পাহাড়, বন আর কোয়েল নদীর খুব সুন্দর দৃশ্য এখান থেকে দেখা যায়। অতুলনীয় পাইনবনে রোদের লুকোচুরির চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য মন কেড়ে নেবে। নীল রঙের জলের সুন্দর, শান্ত নেতারহাট লেক পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। ৩০০টাকায় একটি প্যাডেল বোট ভাড়া করে হ্রদের জলে ভেসে পড়লাম। ফরেস্ট গেস্ট হাউসের ভিতর ট্রি হাউস বা গাছ বাড়ি দেখে চলে এলাম চ্যালেট হাউস মিউজিয়ামে। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি একটি দোতলা ভবন যেখানে এলাকার আদিবাসীদের ব্যবহৃত কিছু সরঞ্জাম ও চিত্রশালা রয়েছে। চারপাশের বাগানটিও সুসজিত ও সুন্দর।

নেতারহাট আবাসিক বিদ্যালয় একটি মর্যাদাপূর্ণ বোর্ডিং স্কুল যা ভারতের অন্যতম সেরা বিদ্যালয় হিসাবে বিবেচিত হয়। ভিতর প্রবেশের অনুমতি না থাকায় বিদ্যালয়ের চারপাশ ঘুরে চলে গেলাম ম্যাগনলিয়া সানসেট পয়েন্টে। নেতারহাটের সমস্ত পর্যটককে এইসময় একজায়গায় একসাথে দেখা যায়। এখানে সূর্য দিগন্তে রক্তিম আভা ছাড়িয়ে পাহাড়ের পিছনে অস্ত যায়, যার মনোরম রূপ মনের মনিকোঠায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পুব হতে পশ্চিমে চোখ ঘোরাতেই দেখি বিশালকায় শশী হে, পীতাম্বর রূপ নিয়ে ভাতিছ গগন মাঝে। স্থানীয় একটি খাবারের দোকান থেকে গরম চায়ের সাথে, গরম গরম পকোড়া নিয়ে নিলাম। এই জায়গাটির একটি করুণ ইতিহাস আছে, যেখানে একজন ব্রিটিশ অফিসারের মেয়ে কুমারী ম্যাগনলিয়া একজন পশুপালক ছেলের প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তাঁর ঘোড়া নিয়ে এই স্থান থেকে পাহাড়ের গভীর খাদে লাফ দিয়ে আত্মাহুতি দেন। আজ সারাদিনের ভ্রমণ পথ ছিল ১২২কিমি দীর্ঘ।
রাতঠিকানা: হোটেল সানরাইজ নেতারহাট; প্রভাত বিহার রোড, নেতারহাট-৮৩৫২১৮, ঝাড়খন্ড।
দূরাভাষ: ০৯৫৭২৮৮৪৫৫৮

৪র্থ দিন ২৬/০১/২৪
নেতারহাট থেকে সূর্যাস্তের ন্যায় সূর্যোদয়ও দেখতে খুব মনোগ্রাহী। নেতারহাট সানরাইজ পয়েন্ট যা ঝাড়খণ্ড পর্যটন নিগম দ্বারা পরিচালিত হোটেল প্রভাত বিহারের ক্যাম্পাসের পিছন দিকটায় অবস্থিত। সূর্যোদয় দেখতে যেখানে ইতিমধ্যেই পর্যটক সমাগমে মুখরিত। শান্ত নির্মল পাহাড়ি ল্যান্ডস্কেপের উপর এখানকার সূর্যোদয়ে প্রকৃতির ক্যানভাস কমলা ও গোলাপী রঙের সাথে জীবন্ত হয়ে ওঠে। সূর্যোদয় দেখে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে অবস্থিত রাঁচির উদ্যেশে বেরিয়ে পড়লাম। চটকপুর, চিংড়ি, মঞ্জিরা হয়ে আদরে এসে প্রাতঃরাশ সেরে, বাইকে পেট্রল ভরে নিলাম। ঝাড়খণ্ডে পেট্রোলের দাম পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেকটা কম।
ঘাগরা, লোহরদগা, বেরো, নাগরি হয়ে ‘রাঁচি রিং রোড’ ধরে ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচির টিপুদানাতে এসে হোটেলে চেক ইন করলাম। একটু বিশ্রাম নিয়ে ও ফ্রেশ হয়ে বাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাঁচি শহর ঘুরে দেখার জন্য। "টেগর হিল' বা “ঠাকুর পাহাড়” রাঁচির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান যেখানে পাহাড়ের উপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন। এখানে যাওয়ার জন্য কোনো প্রবেশ মূল্য নেই। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার জন্য অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। পাহাড়ের চূড়া থেকে পুরো রাঁচি শহরটিকে দেখা যায়। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য পাওয়ার জন্য এটি চমৎকার জায়গা।

একটি ছোট পাহাড়ে তৈরি রক গার্ডেন ও কাঙ্কি লেক বা কাঙ্কি ড্যাম রাঁচির অন্যতম পর্যটন স্থল। পেইড পার্কিংয়ে বাইক রেখে নির্দিষ্ট প্রবেশ মূল্য দিয়ে এখানে ঢুকতে হয়। রক গার্ডেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সৃজনশীল শৈল্পিকতার এক অনন্য সংমিশ্রণ উপস্থাপন করে।

পাথুরে ভূখণ্ডের মধ্যে অবস্থিত এই মনোরম বাগানটি থেকে শহরের ভিউ অসাধারন। এই জায়গাটি শিশুদের জন্য বিনোদনমূলক কারণ এর মধ্যে স্লিপ এবং মজাদার পার্ক রয়েছে। এছাড়াও এখানে খাওয়া-দাওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। এখান থেকে কাঙ্কি হ্রদ এবং কাঙ্কি বাঁধের খুব ভাল দৃশ্য পাওয়া যায়। রক গার্ডেন থেকে নিচে নেমে কাঙ্কি হ্রদের জলে বোটিং করা যায় । রাঁচি থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্যও খুব সুন্দর। আজ সারাদিনের ভ্রমণ পথ ছিল ১৯৬কিমি দীর্ঘ।
রাতঠিকানা: যে.পি হোটেল এন্ড ব্যাংকোয়েট; সতরঞ্জি বাজার, টিপুদানা, রাঁচি-৮৩৫২২১, ঝাড়খন্ড। দূরাভাষ: ০৭৭৩৯৯৯১১১৯

৫ম দিন ২৭/০১/২৪
আজ ঝর্নার শহর রাঁচির আশেপাশে কয়েকটি জলপ্রপাত দেখতে যাওয়ার দিন। দশমাইলচওক, হাজাম, রেমটা লেক, কুজ্রাম হয়ে দশম ফলস বা দশম জলপ্রপাতে পৌছালাম। ১৪৪ ফুট উপর থেকে কাঞ্চি নদী দশ ধারায় নেমে মিলেছে সুবর্ণরেখা নদীতে । দশ ধারায় নামছে বলে নাম দশম। পাহাড় এবং সবুজে ঘেরা অত্যন্ত সুন্দর এই জলপ্রপাতে পৌঁছতে ৩০০টিরও বেশি সিঁড়ির ধাপ বেয়ে নিচে নামতে হবে। জলপ্রপাতটিতে সারা বছর জল থাকে, তবে এটি দেখার সেরা সময় বর্ষা। ফলস এর উপরের দিকে টপ ভিউ পয়েন্ট থেকে জলরাশির নিচে ঝাঁপিয়ে পড়া দেখলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতে হবে। এখান থেকে চলে এলাম জোনা ফলস দেখতে।

১৪১ ফুট উচ্চতা থেকে জলাধার নিচে নেমে রাড়হু নদীতে মিশছে। কাছেই ভগবান বুদ্ধকে উৎসর্গ করা একটি মন্দিরের কারণে এটি গৌতমধারা জলপ্রপাত নামেও পরিচিত। ঝর্ণা, ঘন সবুজ বন ও পাহাড়ে ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন কেড়ে নেবে। প্রায় ৭২২ টি সিড়ি জলপ্রপাতের গোড়ায় নামিয়ে নিয়ে যাবে। জোনহা ফলস রিসর্ট রোড দিয়ে গেলে, ৭২২ ধাপ সিঁড়ি ব্যবহার না করে জলপ্রপাতে পৌঁছানোর বিকল্প উপায় আছে। জোনা ফলসের অনতিদূরেই রয়েছে সীতা ফলস। ঝাড়খণ্ডের সবুজ বনের মধ্যে অবস্থিত, এই জলপ্রপাতটি একটি শান্ত মরূদ্যান। এখানে যাওয়ার রাস্তাটি খুবই সুন্দর ও উপভোগ্য। জলপ্রপাতটির নামকরণ করা হয়েছে ভগবান রামের স্ত্রী সীতার নামানুসারে। প্রায় ২০০ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে ফলসের কাছে যেতে হয়।

সীতা ফলস দেখে পাত্রাতু ভ্যালীর দিকে এগিয়ে চললাম। জোনা ফলস রোড, রাঁচি-পুরুলিয়া রোড, রাঁচি রিং রোড ধরে পিথাউরিয়া হয়ে কিছুটা এগোতেই সবুজের সমারোহে পাহাড়ি রাস্তা শুরু হল। পাত্রাতু ভ্যালীর ওয়েলকাম গেট পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম ১৩২৮ফুট উচ্চতার পাত্রাতু ভ্যালীর সেই বিখ্যাত জিগজাগ আঁকাবাঁকা হেয়ারপিন ব্যান্ড রাস্তায় যা অনেকটা পূর্ব সিকিমের জুলুকের সিল্করুটের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানকার রাস্তাটি খুবই সুন্দর আর পাশের সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্যও নৈসর্গিক। এখান থেকে পাত্রাতু বাঁধ ও লেক, এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্পষ্ট দেখা যায়। পাত্রাতু উপত্যকাকে দ্বিতীয় মানালি বলা হয়। এগিয়ে গেলাম পাত্রাতু লেকের উদ্দেশ্যে। পাত্রাতু হ্রদের বিশাল জলাধারের একাধিক পয়েন্টে স্পীড বোট ও সাধারণ বোটে বোটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলোয় লেকের জলে সোনালী ঝিকিমিকি চলছে আর গাঙচিলেরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়াচ্ছে জলের উপর দিয়ে আবার কেউবা মেতে আছে জলকেলিতে। আনন্দে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, ২০০টাকার বিনিময়ে একটা ডিঙি নৌকা নিয়ে ভেসে পড়লাম হ্রদের জলে। নয়নাভিরাম একটা সূর্যাস্ত দেখে হোটেলে চেক ইন করে একটু ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম পাত্রাতু ড্যামের কাছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে। ড্যামের গা বেয়ে ড্যামের উপরে উঠে গেলাম। ড্যামের উপর থেকে চারিদিকের দৃশ্য সত্যি মন কেড়ে নেওয়ার মত। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্থানীয় বাজার, মা পঞ্চবাহিনি মন্দির সহ চারিদিক তখন আলোয় ঝলমল করছে। আজ ভ্রমণ সাঙ্গ হল ১৭৫কিমি পথচলায়।
রাতঠিকানা: হোটেল শোভা ম্যারেজ হল; লাবগা, পাত্রাতু-৮২৯১৪৩, ঝাড়খন্ড।
দূরাভাষ: ০৯৭৯৮০৩১৫৩৬

৬ষ্ঠ দিন ২৮/০১/২৪
আজ তোপচাঁচি লেক ঘুরে বাড়ি ফেরার পালা হওয়ায় আজকের যাত্রাপথ বেশ দীর্ঘ। তাই ভোর সাড়ে তিনটেয় ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে রেডি হয়ে ভোর সাড়ে চারটেয় অন্ধকার থাকতে বেরিয়ে পড়লাম। ভুরকুন্দা, গোলা চওক, পিটারবার, ভান্দারিদহ হয়ে দামোদর নদি পেরিয়ে সকাল সাড়ে সাতটায় ঝাড়খণ্ডের ডিভিসি চন্দ্রপুরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারের বিশালকায় চিমনি দেখতে পেলাম। এরপর সিধু-কানু চওক, গোমো ব্রিজ, ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ হয়ে তোপচাঁচি লেকের এন্ট্রি গেটে পৌঁছে ১৫টাকার টিকিট কেটে, সবুজ বৃক্ষের ক্যানোপির মধ্যে দিয়ে গিয়ে লেকের সামনে হাজির হলাম। বিশালাকার তোপচাঁচি হ্রদ ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার পরেশনাথ পাহাড়ের ঢালে, তোপচাঁচি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভিতরে অবস্থিত মানুষের তৈরি কৃত্রিম হ্রদ।

শীতকালে বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত পরিযায়ী পাখি এখানে আসে যা লেকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। বৃত্তাকার সবুজ পাহাড়ে ঘেরা তোপচাঁচির শান্ত স্নিগ্ধ মনোহর পরিবেশ, সকালে পাহাড়ের পেছন থেকে উঁকি দেয়া সূর্য, লেকের জলে পরেশনাথ পাহাড়ের ছায়া; সে এক মায়াবী অনুভূতি। লেকের একটি অংশে লক-গেট সহ বাঁধ আছে যার উপর রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায়। ১০ কিমি দূরে রয়েছে তোপচাঁচি রেল সংযোগকারী গোমো স্টেশন বা নেতাজি এসসি বসু জংশন যা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ঐতিহাসিক নিষ্ক্রমণের স্মৃতি বিজড়িত। বাইক নিয়ে লেকের ধার দিয়ে চারিপাশে যত দূর যাওয়া যায় সবটা ঘুরে; ন্যাশনাল হাইওয়ে-১৯ দিয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম।
বাড়ির জন্য শক্তিগড়ের আমড়া থেকে ল্যাংচা এবং হুগলির জনাই থেকে মনোহরা ও নিখুঁতি কিনে ডানকুনি, ডানলপ হয়ে বিকেল পাঁচটায় বাড়ি ফিরলাম। আজ সারাদিনের পথচলা ছিল ৪৩৬কিমি। এবারের পাঁচ রাত, ছয় দিনের ঝাড়খণ্ড ভ্রমণে সর্বমোট অতিক্রান্ত দূরত্ব ১৫৩৯ কিমি।

বসন্তের খাওয়াদাওয়া
অদ্ভুত এক আবহাওয়া চারিদিকে। শীত পালাই পালাই করছে। ভোরের দিকে হালকা ঠান্ডা ভাব, মাথায় রোদ চড়তেই গরম। না গরম না ঠান্ডা এইসময় বিভিন্ন রকম অ্যালার্জি, নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি কাশি, গলা চুলকুনি, চোখ চুলকুনি এসব চলতেই থাকে। রোগ থাকলে তার সমাধান ও রয়েছে। এবং তা রয়েছে প্রকৃতিতেই! মরশুমের বিভিন্ন রোগবালাই থেকে বাঁচতে রোজকার মেনুতে রাখতে ভুলবেন না সিজনাল শাক-সবজি, ফল, ফুল। এমনই একগুচ্ছ উপকরণে সমৃদ্ধ কিছু রেসিপি রইলো এবারের রবিবারের পাতায়।
সজনেফুল পোস্ত
কী কী লাগবে
ছোট ছোট টুকরো করা আলু ১ কাপ, সজনে ফুল ২ কাপ, পোস্ত বাটা ৪ টেবিল চামচ, কাঁচা লংকা চেরা ২ টি, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১/৪ চা চামচ, কালোজিরে ১/২ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ৩ টেবিল চামচ।

কীভাবে বানাবেন
কড়াতে সরষের তেল গরম করে কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে একে একে টুকরো করা আলু, নুন, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে ভেজে তুলে নিন। এবার ওর মধ্যে সজনেফুল দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। জল ছেড়ে নরম হলে চেরা কাঁচালংকা, ভাজা আলু দিয়ে আরো কিছুসময় রান্না হতে দিন। মাখামাখা হলে পোস্তবাটা মিশিয়ে নামিয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।

সবজি দিয়ে জ্যান্ত মাছের পাতলা ঝোল
কী কী লাগবে
জ্যান্ত রুই মাছ ৬ টুকরো, লম্বা করে কাটা আলু ৬ টুকরো, ফুলকপি ৬ টুকরো, ১ টা মাঝারি মাপের টমেটো কুচোনো, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরে বাটা ১ চা চামচ, লংকা বাটা ১ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ৪ টেবিল চামচ, কালোজিরে ১/২ চা চামচ, চেরা কাঁচালংকা ৪টি, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ।

কীভাবে বানাবেন
মাছের টুকরো গুলো নুন হলুদ মেখে কিছুসময় রেখে হালকা ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে কালোজিরে আর চেরা কাঁচালংকা ফোড়ন দিয়ে একে একে টুকরো করা আলু, ফুলকপি, নুন, হলুদ গুঁড়ো, জিরে বাটা, লংকা বাটা, টমেটো কুচি দিয়ে অল্প আঁচে কষুন। মশলা তেল ছাড়লে জল দিয়ে ফুটতে দিন। ভাজা মাছ দিয়ে আরো কিছু সময় রান্না করে ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে নামিয়ে নিন। গরমভাতে লেবু দিয়ে মেখে খান।

কাঁচা টমেটো দিয়ে মুসুরডাল
কী কী লাগবে
মুসুর ডাল ১ কাপ, টুকরো করা টমেটো ২ টি, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, চেরা কাঁচালংকা ২ টি, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ।
ফোড়নের জন্য : Shalimar's সরষের তেল ১ টেবিল চামচ, শুকনো লংকা ২ টি, কালো সরষে ১/২ চা চামচ।

কীভাবে বানাবেন
পরিমাণ মতো জল দিয়ে মুসুর ডাল সেদ্ধ করে নিন। আরো কিছুটা জল, নুন, টমেটো, হলুদ গুঁড়ো, চেরা কাঁচালংকা দিয়ে আরো কিছুসময় ফোটান যাতে টমেটো সেদ্ধ হয়ে যায়। কড়াইতে তেল গরম করে শুকনো লংকা আর কালো সরষে ফোড়ন দিয়ে ডালটা ঢেলে দিন। ২ মিনিট রেখে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

নিম বেগুন
কী কী লাগবে
১ টা মাঝারি মাপের বেগুন ছোট টুকরো করা, ১ মুঠো নিমপাতা, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চিমটি, কালোজিরে ১/২ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ৪ টেবিল চামচ।

কীভাবে বানাবেন
তেল গরম করে কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে টুকরো করা বেগুন, নুন হলুদ দিয়ে ভেজে তুলে নিন। ঐ তেলে নিমপাতা দিয়ে অল্প নেড়ে গ্যাস বন্ধ করে ওইভাবে রেখে দিন। কড়াইয়ের গরমে নিমপাতা মুচমুচে করে ভাজা হয়ে যাবে। এবার নিম বেগুন একসাথে মিশিয়ে গাওয়া ঘি সহ পরিবেশন করবেন।
তেঁতুলের অম্বল
কী কী লাগবে
তেঁতুলের পাল্প ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, বিট নুন স্বাদ মতো, গন্ধরাজ লেবুর পাতা ৪টি, শুকনো লংকা ১টি, গোটা কালো সরষে ১/২ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ১ চা চামচ।

কীভাবে বানাবেন
তেঁতুলের পাল্প পরিমাণ মতো জলে গুলে রাখুন। তেল গরম করে শুকনো লংকা আর কালো সরষে ফোড়ন দিয়ে তেঁতুল জল, নুন, চিনি ঢেলে ফুটে উঠলে নামিয়ে গন্ধরাজ লেবুর পাতা দিয়ে ঢেকে রাখুন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করবেন।

দই দিয়ে এঁচড় চিংড়ি
কী কী লাগবে
টুকরো করা এঁচড় ৫০০ গ্রাম, টুকরো করা আলু ১ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, আদা রসুন বাটা ১ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, Shalimar's হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's লংকা গুঁড়ো ১ চা চামচ, Shalimar's সরষের তেল ১ কাপ, টকদই ১০০ গ্রাম, ছোট চিংড়ি ১০০ গ্রাম, চিনি ১ চা চামচ, Shalimar's গরমমশলা গুঁড়ো ১ চা চামচ, সাদা জিরে ১ চা চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ।

কীভাবে বানাবেন
এঁচড় সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে রাখুন। তেল গরম করে চিংড়ি মাছ ভেজে তুলে রাখুন। ঐ তেলে সাদা জিরে দিয়ে একে একে আলু, নুন, হলুদ গুঁড়ো, লংকা গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, পেঁয়াজ বাটা, আদা রসুন বাটা দিয়ে কষুন। এবার সেদ্ধ এঁচড়, চিনি আর ফেটানো টকদই দিয়ে আরো কিছু সময় কষুন। তেল ভেসে উঠলে ভাজা চিংড়ি, ঘি, গরমমশলা গুঁড়ো মিশিয়ে নামিয়ে নিন।

শিউলিপাতা শুক্তো
কী কী লাগবে
লম্বা করে কাটা সবজি (আলু, গাজর, বিনস, পেঁপে, কাঁচকলা, সজনেডাটা, রাঙালু), মটরডাল বাটা ১ কাপ, শিউলিপাতা কুচোনো ২ টেবিল চামচ, নুন চিনি স্বাদ মতো, রাঁধুনি ১ চা চামচ, সরষে বাটা ১ চা চামচ, দুধ ১ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ চা চামচ, ময়দা ১ চা চামচা, Shalimar's সরষের তেল পরিমাণ মতো।

কীভাবে বানাবেন
মটরডাল বাটা, নুন, কুচোনো শিউলি পাতা ফেটিয়ে ছোট ছোট বড়া ভেজে তুলে নিন।ঐ তেলে রাঁধুনি আর আদাবাটা দিয়ে অল্প নেড়ে একে একে সব সবজি, নুন দিয়ে কষুন। ঢেকে রান্না করুন। সব সবজি সেদ্ধ হলে অল্প জল দিয়ে ফুটতে দিন। দুধে ময়দা আর সরষে বাটা গুলে ওর মধ্যে ঢেলে দিন। ঝোল ঘন হলে চিনি, ভাজা বড়া আর ঘি মিশিয়ে নামিয়ে নিন।

উচ্ছে আলুর বাটি চচ্চড়ি
কী কী লাগবে
উচ্ছে (ছোট) ৬টি, আলু ২ টি, চেরা কাঁচালঙ্কা ৩-৪ টি, নুন স্বাদ মতো, সরষে পোস্ত বাটা ১+১ টেবিল চামচ, Shalimar's সর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ, কালোজিরা ১/২ চা চামচ

কীভাবে বানাবেন
নুন হলুদ মাখা আলু আর উচ্ছে লাল করে ভেজে তুলে নিন। কালোজিরা ফোড়ন দিয়ে সরষে পোস্ত বাটা, ভাজা উচ্ছে, আলু, নুন, হলুদ গুঁড়ো, চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে নেড়েচেড়ে সামান্য জলের ছিটে দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করুন। হয়ে গেলে সরষের তেল ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
আমিষ শুক্তো
কী কী লাগবে
৩ টে কাতলা মাছের পেটি, আলু, বেগুন, উচ্ছে, সজনেডাঁটা, রাঙালু, কাঁচকলা, পোস্ত দেড় চা চামচ, সরষে ১ চা চামচ, বিউলি ডালের বড়ি, দুধ ১ কাপ, (মেথি, মৌরি) ভাজা মশলা ১ চামচ, Shalimar's সরষের তেল পরিমাণমতো, নুন চিনি, স্বাদ মতো
ফোড়ন এর জন্য: পাঁচফোড়ন, তেজপাতা

কীভাবে বানাবেন
রান্নার শুরুতেই একটা ভাজা মশলা তৈরি করে নিন। শুকনো কড়াইতে মেথি, মৌরি ভেজে শিলে বেটে নিন। সবজি গুলো লম্বা করে কেটে নিন। সরষে-পোস্ত বেটে নিন। আদা বেটে নিন। এবার কড়াইতে সরষের তেল দিয়ে বড়ি ভেজে তুলে নিন। একে একে কাতলার পেটি গুলো নুন মেখে হালকা ভেজে নিন। মাছ তুলে নিয়ে উচ্ছে, বেগুন, কাঁচকলা এক এক করে ভেজে নিন। এবার ওই তেলেই পাঁচফোড়ন, তেজপাতা ফোড়ন দিয়ে আদা বাটা দিন। একটু ভেজে নিয়ে বাকি সবজি দিয়ে (উচ্ছে, কাঁচকলা আর বেগুন বাদে) দিন। স্বাদ মতো নুন দিন। ভালোভাবে নাড়িয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন কিছুক্ষন।

এবার পরিমান মতো জল দিয়ে সবজি খানিক সেদ্ধ হয়ে এলে কাঁচকলা দিয়ে দিন, বেগুন দিন। বেটে রাখা সরষে-পোস্ত দিন। ২-৩ মিনিট আবারও ভালো করে নেড়ে নিন। এবার এর মধ্যে ঘন করা ১ কাপ দুধ অল্প ময়দা/কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে ঢেলে দিন। ফুটে উঠলে কাতলা মাছের পেটি, উচ্ছে ভাজা আর বড়ি দিন। সব শেষে শিলে বেটে নেওয়া ভাজা মশলা, স্বাদমতো চিনি আর ঘি দিয়ে, গ্যাস বন্ধ করে মিনিট ১৫ ঢেকে রাখুন। এতে স্বাদ আরো ভালো হবে।

コメント