বিশ্বকর্মা পুজোয় অরন্ধন এবং থ্যাংক্স গিভিং
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
বাংলা ক্যালেণ্ডারে একে একে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র পেরুতে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে । আর ঋতু বৈচিত্রের ঘনঘটায় বাংলায় পালপার্বণেরও হিড়িক যেন দফায় দফায়। বর্ষা শেষ হয়ে শরৎকাল সমাগত। তখন আকাশের নীল ক্যানভাসে পেঁজা তুলোর মত মেঘ ভেসে বেড়ায় ইতিউতি। ভাদ্রের থইথই পান্না পুকুরে শাপলা, শালুক উদ্ধত গ্রীবা তুলে জানান দিয়ে বলে, "শরৎ এসে গেছে"। সেইসঙ্গে ছড়িয়েছিটিয়ে শিউলি, কাশও। রাঢ়বাংলার ঘরে সারাটা ভাদ্রমাস জুড়ে ভাদুগানের মহড়ারও ইতি টানার ক্ষণ এগিয়ে আসে দিন কয়েকের মধ্যেই। ভাদুলক্ষ্মী বা ভাদুমণির বিসর্জন দেবে তারা। চাষীদের ঘরে ঘরে ভাদ্রের আউস ধান ওঠার খুশিতে ভাদ্রের সংক্রান্তিতে আবার লক্ষ্মী পুজোর ধুম।
প্রতিবছর ইংরেজী ক্যালেণ্ডারের ১৭ই সেপ্টেম্বর মানেই যন্ত্রের পুজো, স্বর্গীয় প্রযুক্তিবিদ, যন্ত্রের কারিগর বিশ্বকর্মার পুজো। সেদিনই ভাদ্রের সংক্রান্তি। সেদিনই আবার মনসাপুজোর অরন্ধন বা রান্নাপুজো।
জ্যোতিষশাস্ত্রের ১২টি রাশির প্রতি রাশিতে এক মাস করে অবস্থান করে সূর্যদেব। তাই বিভিন্ন রাশিতে সূর্যের গোচরের দিন মোটামুটি স্থির। এর নাম precession of the equinox। প্রায় প্রতি বছরই ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মার পুজোর দিন পড়ে। সেদিন ভাদ্র মাসের শেষ তারিখেই নির্ধারিত। বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা বিশ্বকর্মার জন্মদিন বলে সেদিনই বিশ্বকর্মা জয়ন্তী। সেটি কোনো তিথি নয়, ভাদ্র মাসের শেষ দিন।
তবে কোনোকোনো বারে ১৮ তারিখেও হয়। ঠিক যেমন এবছর পড়েছে। ভাদ্র সংক্রান্তির আগে বাংলা পঞ্জিকায় পাঁচটি মাসের দিন সংখ্যা ১৫৬। তা প্রায় বাঁধাধরাই। সেই হিসেবে বিশ্বকর্মা পুজোর ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৭ সেপ্টেম্বরেই পড়া উচিৎ। কোনও কোনও বছরে এই পাঁচটি বাংলা মাসের মধ্যে একটি মাসে যদি ২৯ বা ৩২ দিন হয় তখনই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পিছিয়ে বা এগিয়ে যায়। এবছরের বাংলা ক্যালেন্ডারে জ্যৈষ্ঠ মাস ছিল ৩২ দিনের।
হিন্দু ধর্মে সব দেব দেবীর পুজোর তারিখ প্রতি বছর পালটে গেলেও একমাত্র দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা পুজো প্রতিবছর একই তারিখে পড়ে। আসলে পঞ্জিকানুসারে দেবদেবীর পুজোর তিথি স্থির হয় সূর্য এবং চাঁদের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। কিন্তু বিশ্বকর্মার পুজোর তিথি স্থির হয় কেবলই সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। যখন সূর্য সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, তখনই সময় উত্তরায়ণের। দেবতারা নিদ্রিত থেকে জাগ্রত হন। বাংলার বাইরে কোনো কোনো প্রদেশে তাই বলা হয় কন্যা সংক্রান্তি।আসলে সূর্যের সঙ্গে বিশ্বকর্মার নিবিড় আত্মীয়তার বন্ধন। নিজকন্যা সংজ্ঞার বিবাহ দিয়েছিলেন তিনি সূর্যের সঙ্গে।
আবার তখনো ইউরোপে দূরবীন আবিষ্কার হয়নি।
মার্কণ্ডেয় পুরাণে রয়েছে
“তেজসঃ শাহনং চক্রে বিশ্বকর্মা শনৈঃশনৈঃ।
তেনাস্মিন শ্যামিকা জাতা শতনোর্চিষ স্তথা।
অর্থাৎ “বিশ্বকর্ম্মা, অল্প অল্প করিয়া সূর্য্যের তেজ কীর্ত্তন করিয়া লইলেন, যে যে অংশ কর্তিত হইল সেই অংশটি শ্যামিকা অর্থাৎ কলঙ্ক হইল।” মানে যাকে আমরা দূরবীন দিয়ে দেখে সোলার স্পট নামে অভিহিত করেছি।
তা এই ভাদ্রের সংক্রান্তিতেই বিশ্বকর্মার পুজোর আয়োজন।
যেহেতু একটানা বর্ষার প্রকোপে আকাশে এতদিন কালো মেঘের দাপটে বৃষ্টির ছিল অবারিত দ্বার তাই বুঝি মেঘমুক্ত নীল আকাশ রঙিন হয়ে ওঠে রঙবেরংয়ের ঘুড়ির সম্ভারে। আসন্ন উত্সবের সূচনার বার্তা নিয়ে আসছে তারা। কিছুটা কৃষিকাজের সাফল্যে, কিছুটা আসন্ন উৎসবের আগমন বার্তায়। শাস্ত্রে বলে সুপর্বা আসছে। মানে দেবলোক জাগ্রত হচ্ছেন। সেই খুশিতে। দুর্গার আগমনী আর শুভ উৎসবের ক্ষণ তাই সু-পরবের সূচনা যেন জনজীবনে।
বিশেষতঃ দক্ষিণবঙ্গে রান্নাপুজোর চল সেইদিনেই। কথায় বলে ভাদ্রে রান্না, আশ্বিনে পান্না অর্থাৎ ভাদ্রের সংক্রান্তিতে রান্না করে আশ্বিনের পয়লায় পান্তা খাওয়া। সেদিন তাদের ঘরে ঘরে মনসা পুজো। আসলে সারাটা শ্রাবণমাস জুড়ে সারাবাংলায় নদীনালা, খালবিলে সাপের বংশবৃদ্ধির কারণে মানুষ কিছুটা তঠস্থ থাকে। তাদের জীবনযাপনে অহোরাত্র এই সরীসৃপের সঙ্গে ওঠাবসা। তাই সর্পদংশন থেকে মুক্তিলাভের একমাত্র পথ দেখান যেন মনসা। অথচ দেবলোকের মূলস্রোতে ব্রাত্য শিবের অন্ত্যজ এই কন্যা মনসা।
একদিকে ঘরে ঘরে এই অরন্ধন যেমন ঋতু পরিবর্তনের কারণে "পান্তা" বা ঠাণ্ডা খাওয়ার মূলে এক শারীরিক রক্ষাকবচ তেমনি কৃষিপ্রধান বাংলার অন্যতম কৃষি উৎসবও বটে। মনসা পুজোর মাধ্যমে থ্যাংক্স গিভিং যেন। তাই ষোড়শপচারে এলাহি রান্নার আয়োজন এই অরন্ধনে। ভাদ্রে উঠেছে আউস ধান, ইলিশ মাছ সহ নানাপ্রকার মরশুমি আনাজপাতি। তাই রান্নাপুজো যেন আরেক নবান্ন। আর সেখানে বিশ্বকর্মার ভূমিকাও কম নয়।
পৌরাণিক দৃষ্টিভঙ্গী তে ‘ইন্দ্র’ ও ‘বিশ্বকর্মা’র মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। যদিও বিশ্বকর্মার পুত্র বিশ্বরূপ কে বধ করেছিলেন ইন্দ্র তবুও বলি এই দুই দেব নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বমহিমায় বলীয়ান। দেবরাজ ইন্দ্রও যেমন বর্ষণের দেবতা। আবার বিশ্বকর্মাও নাকি সূর্যের মধ্যে সোলার স্পট সৃষ্টি করে মেঘ এনে বৃষ্টি নামানোর মূলে।
জ্যোতির্বিদ বরাহমিহিরের বৃহৎসংহিতায় সূর্য্য-বিম্বের, অর্থাৎ সৌরকলঙ্কের কথা আরো স্পষ্টাক্ষরে রয়েছে। কেবল তাই নয়, অষ্টাদশ শতাব্দীতে হার্শেল সূর্য-বিম্বের সঙ্গে দুর্ভিক্ষের যে সম্বন্ধ দেখান বরাহমিহির বহুদিন পুর্ব্বেই তা বলেছেন...
“যস্মিন যস্মিন্দেশে দর্শনমায়াস্তি সূর্য্য বিস্বস্যাঃ।
এতসব তথ্য জেনে মনে হল ভাদ্রের সংক্রান্তিতে সূর্যের কন্যারাশিতে গমন, কৃষিকাজে সূর্যের অপরিহার্যতা আর বজ্রগর্ভ মেঘ ও তা থেকে বর্ষাকালীন বৃষ্টি সবের মূলে ইন্দ্রের পাশাপাশি, বিশ্বকর্মারও কিছু কেরামতি থাকলেও থাকতে পারে। সেইকারণেই কী তবে দেবলোকের এই স্থপতি তথা কারিগর বিশ্বকর্মার পুজোয় এত ধুম?
বৃহৎসংহিতা অনুসারে কৃষিজাত পণ্যের প্রতিভূ তিনি। কারণ তিনিই তো নিদাঘ গ্রীষ্মের শেষে সূর্যর মধ্যে কলঙ্ক সৃষ্টি করে সূর্যের দাপট কিঞ্চিৎ ম্লান করে দিয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টি করেন এবং অকৃপণ বর্ষণের মাধ্যমে কৃষিকাজের সুবিধে করে দেন। আগলে রাখেন চাষাবাদ।
আর তখনি মনসা পুজোর অরন্ধন, বিশ্বকর্মা পুজোয় ধন্যবাদ জ্ঞাপন...সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সেইসঙ্গে অরন্ধনের রান্না খাওয়া হয় পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন সবাই মিলে... সেও এক মিলনোৎসব বৈকি। কলকারখানায় বিশ্বকর্মাপুজোর মহা ধুম । চাষাবাদের যন্ত্রপাতি সেসবেরও ছুটি সেদিন। সবেতেই যেন বিশ্বকর্মার স্পর্শ। সেগুলির বছরে একটা মাত্র দিন নিরলস কর্ম বিরতিও চাই বটে।
তা এই যন্ত্রপাতির পুজো কেন? কারণ আজ যে সারা বিশ্ব জুড়ে এত প্রযুক্তির রমরমা, এত বিলাসিতার হাতছানি, এত যন্ত্রনির্ভরতা আমাদের জীবন তার মূলেও কিন্তু এই বিশ্বকর্মা। এত সব প্রাসাদোপম অট্টালিকা, বহুতল নির্মাণ... এসবের কৌশল, এমন কি বাস্তুতন্ত্র, সবকিছু সিভিল কন্সট্রাকশন, ইঞ্জিনিয়ারিং কারিগরি... বিশ্বকর্মাই এইসব যাবতীয় বিদ্যাকে প্রথম গ্রন্থিত এবং বাস্তবায়িত করে তুলেছিলেন। তাই বুঝি তাঁর পুজোয় তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানো।
পুরাকালের এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মা সেই ঋগবেদের আমল থেকেই সুপরিচিত এক শিল্পী, একজন ঐশ্বরিক কারিগর।
"কর্তা শিল্প সহস্রাণাম্" অর্থাৎ এই দেবশিল্পী সহস্র শিল্পের অধিকর্তা।
আর বিশ্বকর্মা পুজো মানেই আগমনীর ঘন্টা বেজে ওঠা। তার আগেভাগে অরন্ধনের পান্তা, ঠাণ্ডা খেয়ে ও খাইয়ে যেন গাঁয়ে ঘরে আবালবৃদ্ধবনিতার বাৎসরিক এক টীকাকরণ কর্মসূচী। জলবায়ু গত কারণে গ্রীষ্মপ্রধান রাজ্যাগুলিতে আষাঢ় মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বর্ষাকাল আসে ভরা বর্ষায় সাপেদের প্রাদুর্ভাবে গ্রামে গঞ্জে এখনো প্রচুর মানুষের প্রানাহানি হয়। তাই বুঝি মনসা পুজো সর্পকুল কে তুষ্ট রাখারও এক প্রয়াস।
মনসাপুজো অতি জনপ্রিয় লৌকিক উৎসব।
দক্ষিণবঙ্গে মানুষের জলে জঙ্গলে কাল কাটানো, সাপখোপেদের সঙ্গে তাদের অহোরাত্র ওঠাবসা।
তাদের বিশ্বাস তাদের প্রত্যেকের ঘরের নীচে যে বাস্তুসাপ আছে, যে সারাবছর তাদের বালবাচ্ছাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, যার নজরদারিতে তারা সম্বচ্ছর বেঁচেবর্তে রয়েছে তাকে বছরের একটা দিন মনে করে পুজো করা। মা মনসা তুষ্ট হলে তবেই সাপেরা উত্পাত করবেনা। গোবরছড়া দিয়ে রান্নাঘর, উঠোন নিকিয়ে, শুকনো করে, ধোয়ামোছা করে, ঘর রং করে ষোড়শ উপচারে সংক্রান্তির দিন রাতে তারা নতুন উনুনে রান্না করে।
ভাত, ডাল চচ্চড়ি, ছোলা দিয়ে কচুশাক, নারকোল দিয়ে কুমড়োর ঘন্ট, ইলিশমাছ, পোনা মাছ, চিংড়িমাছ, ডালবড়া, মাছভাজা, উচ্ছে-চিংড়ি, গাঁটিকচুর দম,শোলাকচু, নারকোল কোরা, সর্ষে-বাটা আর সর্ষের তেল দিয়ে মাখা ঘেঁটুফুল ও কচুপাতা বাটা, সর্ষে দিয়ে কচুর লতি আর শাপলা ডাঁটার ডাল, চালতার টক, পাঁচ বা সাত রকম ভাজা, পিঠেপুলি, পায়েস রেঁধে বেড়ে মনসাদেবীকে উত্সর্গ করে তারপর দিন সব ঠান্ডা খাবে তারা। যদি রান্নাবান্নায় কোনো অসঙ্গতি থাকে কিম্বা পরিচ্ছন্নতায় দোষত্রুটি থাকে তবে ঐ দিন মনসাদেবী সাপকে পাঠিয়ে সব খাবার বিষাক্ত করে দেন তাই এই পুজোর নিষ্ঠা চোখে দেখবার মত। মনসাপুজোয় ধূপধুনো নিষেধ। তবে মনসাগাছের ডাল, জল ঢালা পান্তার সঙ্গে পঞ্চব্যাঞ্জন এবং নৈবেদ্য তাঁর চাইই।
তারা কাঁটা মনসার ঝোঁপেঝাড়ে এখনো রেখে আসে দুধের বাটি আর কলা। ঘরের উঠোনের সামনের মাটিতে একটি মনসা গাছের ডাল পুঁতে রাখার রীতি।সেখানেও নিবেদন করা হয় কিছু রান্নাপুজোর ভোগদ্রব্য। পচা গরমে কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। তাই রান্না শুরু হয় মাঝরাত থেকে আর বাসিভাতে ঠান্ডা জল ঢেলে রাখার রেওয়াজ। অগাধ বিশ্বাস নিয়ে তারা সেই পঞ্চ ব্যঞ্জন নিবেদন করে মনসা ঠাকুরাণী আর তাঁর চ্যালা নাগনাগিনীদের। ঠিক রাঢ়বঙ্গের শ্রাবণ সংক্রান্তির অনুরূপ। ঘরের সামনে মাটির উনুন তৈরী করে প্রথমে তার সামনে খড়কুটো জ্বেলে শাঁখ, ঘন্টা, উলুধ্বনি দিয়ে মনসা কে আবাহন জানানোর রীতি। তারপর সেই উনুনে শুকনো তালপাতার আগুণে, নতুন মাটির হাঁড়িতে বসবে আতপচালের ভাত। বাকী সব রান্না হতে পারে কাঠকুটো আর কয়লার আঁচে। রান্না শেষ হলে উনুন ঠাণ্ডা হলে শাপলার মালা জড়িয়ে পরের দিনটিতে সারাদিনের মত বাড়ির রান্নাবান্নায় ইতি টানা হয়। মনসার ডালেও পরানো হয় শাপলার মালা।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাতৃতন্ত্রের ভেরী বাজিয়ে ওঠেন মনসার উপাসকরা। সেখানেই সার্থক মনসা পুজো। যিনি নিজের অধিকার একদিন মর্ত্যলোকে তথা স্বর্গে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিবের কন্যা হয়েও অন্ত্যজ দেবী বলে পুজো চেয়েও বারেবারে বিফল হন।
অন্ত্যজ, অবৈধ মেয়ের মেইনস্ট্রিম দেবলোকে জায়গা নেই। কিন্তু জেদের বশে দেবলোকে এন্ট্রি পেয়েই যেনতেনপ্রকারেণ বদলা নিয়েছিলেন এই মনসা। কেন পুজো পাবনা আমি? আর পুজো পাওয়া মানেই সমাজে এক্সেপটেন্স । একদিন সবাই মেনে নিল শিবের বিবাহ বহির্ভূত এই লড়াকু কন্যাকে। তাই আবারো মনসার জয়। মাতৃতন্ত্রের জয়।
তাই দোখনে কাজের পরিচারিকার কলার টিউনে যখন বেজে ওঠে
"জয় জয় মা মনসা, জয় বিষহরি গো, বন্দনা করি মাগো মা মনসার চরণে, তারপরে বন্দনা করি মহাদেবের চরণে..”
আমি তখন রবীন্দ্ররচনাবলীর পাতা উলটে চলি। আবারো আবিষ্কার করি পুতুল পুজোর বিপথে হাঁটা এক আদ্যন্ত দার্শনিককে।
আজীবন স্রষ্টা রবিঠাকুর তাঁর মুক্তধারা নাটকে বলেছিলেনই তো...
"নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র, নমো যন্ত্র।
তুমি চক্রমুখরমন্দ্রিত, তুমি বজ্রবহ্নিবন্দিত,
তব বস্তুবিশ্ববক্ষোদংশ, ধ্বংসবিকট দন্ত।
তব দীপ্ত অগ্নি শত শতঘ্নী, বিঘ্নবিজয় পন্থ।
তব লৌহগলন শৈলদলন, অচলচলন মন্ত্র।
কভু কাষ্ঠলোষ্ট্রইষ্টকদৃঢ়, ঘনপিনদ্ধ কায়া,
কভু ভুতলজল-অন্তরীক্ষ- লঙ্ঘন লঘুমায়া,
তব খনিখনিত্রনখবিদীর্ণ, ক্ষিতি বিকীর্ণ-অন্ত্র,
তব পঞ্চভূতবন্ধনকর, ইন্দ্রজালতন্ত্র।"
রবীন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালে রাশিয়ার কর্মোদ্যোগী ছাত্রসমাজকে লক্ষ্য করে ‘রাশিয়ার চিঠি’র সাত সংখ্যক পত্রে লিখেছিলেন,
“এঁরা ‘বিশ্বকর্মা’; অতএব, এঁদের বিশ্বমনা হওয়া চাই। অতএব এঁদের জন্যই যথার্থ বিশ্ববিদ্যালয়।” এখানে কবিগুরু ‘বিশ্বকর্মা’ শব্দটিকে একটি ব্যাপক অর্থে প্রয়োগ করেছিলেন, পৌরাণিক ‘বিশ্বকর্মা’কে তিনি আধুনিক মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেছিলেন। তাই দেখা যায় যে, কবির চোখে আধুনিক বিজ্ঞানও যেন বিশ্বকর্মা, যে কিনা মানবকল্যাণের সৃষ্টিযজ্ঞে আত্মমগ্ন। এই কারণে ‘জাভাযাত্রীর পত্রে’ (পত্র - ১) তিনি বলেছিলেন, “মানুষের অমরাবতী নির্মাণের বিশ্বকর্মা এই বিজ্ঞান।” পুরাণের বিশ্বকর্মাকে রবীন্দ্রনাথ কত বড় ও কত ব্যাপক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমাদের রবিঠাকুর! ‘শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের’ বিশ্বকর্মা “সদাজনানং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ” (৪/১৭); তাঁর কর্মক্ষেত্র শুধুই প্রাসাদ নির্মাণ, রাজধানী নির্মাণ বা দেবতাদের অস্ত্র নির্মাণেই সীমাবদ্ধ নয়, তাঁর কর্মক্ষেত্র বাহ্যলোক থেকে মানুষের অন্তরলোকেও প্রসারিত, তিনি মানুষের হৃদয়েরও অধিপতি। তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “বিশ্বকর্মা যে তোমার চৈতন্যাকাশকে এই মুহূর্তে একেবারে অরুণরাগে প্লাবিত করে দিলেন। চেয়ে দেখো তোমারই অন্তরে তরুণ সূর্য সোনার পদ্মের কুঁড়ির মত মাথা তুলে উঠছে, একটু একটু করে জ্যোতির পাপড়ি চারিদিকে ছড়িয়ে দেবার উপক্রম করছে - তোমারই অন্তরে। এই তো বিশ্বকর্মার আনন্দ।”
তথ্যঋণঃ
"বিশ্বকর্মা পূজার নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি"
পৌরাণিক অভিধান, সুধীরচন্দ্র সরকার
রবীন্দ্রনাথ এবং বিশ্বকর্মা বিষয়ক প্রবন্ধ - রাণা চক্রবর্তী
রান্নাপুজোর তথ্য – লেখকের প্রত্যক্ষ করা বিভিন্ন সূত্র
রান্নাপুজোয় ভাজা,ডাল চচ্চড়ি, কচুশাক, চালতার টকের সাথে থাকে বিভিন্ন ধরনের মাছের পদ। তার মধ্যে অন্যতম ইলিশের অসাধারণ সব রেসিপি আজ রইলো আপনাদের জন্য। রান্নাপুজোর নিয়ম থাক বা না থাক, ইলিশের এই রান্নাগুলো করলে প্রশংসার ঝড় উঠবেই....
মনোমিতা কুন্ডু
বেগুন ইলিশের তেল ঝোল
কী কী লাগবে
বেগুন ১টা বড় বা দুই তিনটি ছোট, নুন , হলুদ, ইলিশ মাছ ৪ টুকরো,কাঁচালঙ্কা, সর্ষের তেল, কালোজিরা, জিরে গুঁড়ো -১ চামচ
কীভাবে বানাবেন
ইলিশ মাছ নুন হলুদ মাখিয়ে হালকা করে ভেজে নিন।
সেই সর্ষের তেলেই কালোজিরে ও চেরা কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে বেগুনের টুকরো গুলো হালকা সাঁতলে নিন।
অল্প জল দিন। ফুটে উঠলে হলুদ , জিরে গুঁড়ো ও কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা, নুন , ও ইলিশ মাছ দিন।
আরেকটু ফুটিয়ে নিলেই রেডি বেগুন ইলিশ।
সর্ষে ভাপা ইলিশ
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ ৪ পিস
সাদা সর্ষে 2 চা চামচ
কালো সর্ষে ২ চা চামচ
হলুদ ১ চা চামচ
নুন স্বাদ মতো
সর্ষের তেল ৩ বড় চামচ
কাঁচা লঙ্কা ৬ টি
কালো জিরে ১/২ চা চামচ
কীভাবে বানাবেন
সর্ষে একটু নুন আর 2 টি কাঁচালঙ্কা সহ বেটে নিন। লঙ্কা বেশি ও নিতে পারেন। মাছে নুন ও হলুদ মাখিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। একটি টিফিনবক্স বাটিতে সর্ষের তেল, সর্ষে বাটা, হলুদ, নুন দিন।
মেখে রাখা মাছ সর্ষে বাটার মিশ্রণে দিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে ভালো করে মশলা মাখিয়ে নিন মাছের গায়ে। কয়েকটি চেরা কাঁচালঙ্কা আর একটু কালোজিরা ছড়িয়ে দিন। টিফিন বক্সের ঢাকা আটকে মাছ কে মাখানো অবস্থায় ১৫ মিনিট মতো রাখুন।
একটি গভীর পাত্র বা হাঁড়িতে জল গরম করুন। জল ফুটে ওঠার আগে মাছসহ টিফিনবক্স জলের মধ্যে একটা স্ট্যান্ড রেখে তার উপর বসিয়ে দিন। যেন বাটির উচ্চতার অর্ধেক অবধি জলে ডুবে থাকে। খেয়াল রাখবেন যেন টিফিনবক্স এর ঢাকনা টাইট হয়। ভালো হয় যদি একটা পাতলা কাপড় দিয়ে টিফিন বক্স মুড়ে দিতে পারেন।
মাঝারি আঁচে ১৫ থেকে ২০ মিনিট এভাবেই রাখুন।
তারপর বক্সের মুখ খুলে দেখুন উপরে তেল ভেসে উঠেছে কিনা। তেল ভেসে উঠলে, ইলিশের সুগন্ধ বেরোলে সর্ষে ভাপা ইলিশ রেডি । পরিবেশন করুন গরম ভাতের সঙ্গে।
ইলিশের আলু কাঁচকলার ঝোল
কী কী লাগবে
কাঁচকলা ১টা , আলু ১ টা, নুন , হলুদ, ইলিশ মাছ ৪ টুকরো,কাঁচালঙ্কা, সর্ষের তেল, কালোজিরা, জিরে গুঁড়ো -১ চামচ
কীভাবে বানাবেন
মাছের গায়ে নুন হলুদ মাখিয়ে হালকা করে ভেজে নিন।
সেই তেলেই আলু কাঁচকলার টুকরো গুলো সাঁতলে ভেজে নিন ।
এবার কালজিরে কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে অল্প জল দিন।
গরম হলে, জিরে গুঁড়ো, হলুদ, কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা, নুন , আলু , কাঁচকলা ভাজা ও সবশেষে ইলিশ মাছ দিন।
একটু ফুটতে দিন। রেডি ইলিশের আলু কাঁচকলার ঝোল।
শম্পা দাস
আম কাসুন্দি ইলিশ
কী কী লাগবে
৫ পিস মাছ
১ টেবিল চামচ সাদা ও কালো সরষে বাটা
১/২ চা চামচ পোস্ত বাটা
১ চা চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা
২ টেবিল চামচ আম কাসুন্দি
১ টেবিল চামচ নারকেল বাটা
১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
২ টেবিল চামচ সরষের তেল
২-৩ টে কাঁচা লঙ্কা
স্বাদ মত নুন ও মিষ্টি
কীভাবে বানাবেন
মাছের টুকরোগুলো নুন হলুদ মাখিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে ভেজে তুলতে হবে ।
একটা বাটিতে বাকি সব উপকরণ ( সরষের তেল ছাড়া ) নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে ।
এই বাটিতে ভাজা মাছের টুকরোগুলো দিয়ে সব মশলা মাছের গায়ে সুন্দর করে মিশিয়ে উপর থেকে সরষের তেল ও আস্ত কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বাটির মুখ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে আটকে নিতে হবে।
কড়াইতে জল দিয়ে একটা স্ট্যান্ড বসিয়ে মাছের বাটি বসিয়ে ১০ মিনিট মিডিয়াম ফ্লেমে ভাপিয়ে নিলেই রেডি আম কাসুন্দি ইলিশ ।
পুঁইপাতা ইলিশ
কী কী লাগবে
৪ টুকরো মাছ
৩ টেবিল চামচ সরষে বাটা
৩ টেবিল চামচ + ১ টেবিল চামচ সরষের তেল
১/২ চা চামচ কালো জিরা
১/২ চা চামচ + ১/২ চা চামচ হলুদ
১৫ টি পুঁই পাতা
১ চা চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা
৪ টে আস্ত কাঁচা লঙ্কা
পরিমাণ মত নুন ও মিষ্টি
কীভাবে বানাবেন
মাছের টুকরোগুলো নুন ও হলুদ মাখিয়ে হালকা করে ভেজে তুলতে হবে।
পুঁই পাতা অল্প ভাপিয়ে বরফ জলে কিছুক্ষণ রেখে কুচি করে নিতে হবে ।
কড়াইতে ৩ টেবিল চামচ সরষের তেল দিয়ে কালো জিরা ফোড়ন দিয়ে সরষে বাটা ও কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে ভালো করে কষে নিতে হবে ।
১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ও নুন দিয়ে মিশিয়ে নিয়ে ভাজা মাছ ও পুঁই পাতা দিয়ে সামান্য জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করতে হবে।
আস্ত কাঁচা লঙ্কা ও মিষ্টি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ রান্না করে নামিয়ে নিতে হবে ।
শেষে ১ চা চামচ সরষের তেল ছড়িয়ে পরিবেশন করতে হবে পুঁই ইলিশ ।
শম্পা দাস
গন্ধরাজ ইলিশ
কী কী লাগবে
৪ টি ইলিশ মাছের রিং পিস
১ টেবিল চামচ সাদা ও কালো সরষে বাটা
১ টেবিল চামচ পোস্ত বাটা
১ চা চামচ গন্ধরাজ লেবুর খোসা গ্রেট করা
১চা চামচ গন্ধরাজ লেবুর রস
২/৩ টে কাঁচা লঙ্কা
পরিমাণ মতো নুন মিষ্টি
১+২ টেবিল চামচ সরষের তেল
১/২ চা চামচ কালোজিরা
১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
কীভাবে বানাবেন
মাছের পিসগুলো সরষে পোস্ত বাটা, নুন মিষ্টি, গন্ধরাজ লেবু খোসা ও গন্ধরাজ লেবু রস, হলুদ গুড়ো ও ১ টেবিল চামচ সরষের তেল মাখিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে।
কড়াইতে ২ টেবিল চামচ সরষের তেল দিয়ে কালোজিরা ও কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ম্যারিনেশন থেকে মাছের পিসগুলো তুলে তেলে দিতে হবে।
একটু হাল্কা করে ভেজে ম্যারিনেশনটা দিয়ে ঢাকা দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে ঢাকা খুলে উল্টে দিতে হবে।
আরও কিছুক্ষণ রান্না করে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে হবে গন্ধরাজ ইলিশ।
পারমিতা নন্দী
ইলিশের দোপেঁয়াজা
কী কী লাগবে
মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছের পিস ৪টে
পেঁয়াজ কুচি ২টো
আদা বাটা ১/২ চামচ
রসুন বাটা ১/২ চামচ
জিরে গুঁড়ো ১/২ চামচ
হলুদগুঁড়ো ১চামচ
কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ১চামচ
তেজপাতা ১ টা
সর্ষের তেল ৪ চামচ
নুন স্বাদ মতো
কীভাবে বানাবেন
কড়াইতে তেল দিয়ে গরম করে ভাজলাম ।
মাছ ভাজা হলে আরো তেল দিয়ে তেজপাতা দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে অল্প ভাজলাম ।
তার পর একে একে সব মশালা নুন হলুদ,কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে অল্প জল দিয়ে কষলাম।
তার পর মাছ ছেড়ে দিলাম ২মিনিট মত গ্যাস বাড়িয়ে দিলাম ।
তার পর হাফ কাপ জল দিয়ে ঢেকে দিলাম ১০মিনিট এর জন্য ।
হয়ে গেলে নামিয়ে ইচ্ছা মতন সাজিয়ে পরিবেশন করিলাম ইলিশ দোপেঁয়াজা। কিছুটা পেঁয়াজ বেরেস্তা করে রেখে দিতে হবে পরিবেশনের সময় উপর থেকে ছড়িয়ে দিতে হবে পেঁয়াজ বারিস্তা করার সময় কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে পেঁয়াজের টুকরোগুলো ভেজে নিতে হবে।
ইলিশ ভাপা
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ এর পিস করে কাটা নুন হলুদ মাখানো
সরষে দু চামচ
পোস্ত এক চামচ
সরষে অবশ্যই সাদা সরষে হতে হবে
সর্ষের তেল
কাঁচা লঙ্কা
পরিমাণ মতো নুন হলুদ
সামান্য মিষ্টি
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে সরষে পোস্ত কাঁচালঙ্কা দিয়ে ম্যাক্সিতে বেটে নিতে হবে এরপর ইলিশ মাছ গুলো ধুয়ে নুন হলুদ মাখিয়ে একটি স্টিলের বাড়িতে রেখে তাতে চেরা কাঁচা লঙ্কা নুন হলুদ ও ( সামান্য মিষ্টি এটা অবশ্য অপশনাল যারা মিষ্টি পছন্দ করেন না দেবেন না প্লিজ) সরষের তেল মাখিয়ে সরষে পোস্ত বাটা ঢেলে সেই স্টিলের বাটির বা টিফিন কৌটোর চাপা টাইট করে বন্ধ করে প্রেসার কুকারে জল দিয়ে তার ওপর পোস্টার বসিয়ে এই টিফিন বক্স বসিয়ে দিতে হবে তিন চারটে সিটি বাজলেই নামিয়ে নিতে হবে তৈরি আমাদের ইলিশ ভাপা প্রেসার কুকারে না করে অনেকে করার মধ্যে জল দিয়ে করতে পারেন কোন অসুবিধা নেই।
সঞ্চিতা দাস
বাংলাদেশের আস্ত ইলিশের দম
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ একটি
ফেটানো টকদই ১ কাপ
বেরেস্তা ১/২কাপ
লবন স্বাদ মতো
হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ
সর্ষে বাটা ১/২কাপ
কাঁচা লঙ্কা ৫ টা
সরষের ও সাদা তেল ১/৪ কাপ + ১/৪ কাপ
পোস্তদানা ১ টেবিলচামচ
কীভাবে বানাবেন
মাছ সাবধানে ধুয়ে নিন যাতে না ভাঙ্গে। পছন্দমত ওভেনপ্রুফ পাত্রে তেল ব্রাশ করে মাছ বিছিয়ে দিন। আস্ত না রাখতে চাইলে পিস করেও নিতে পারেন।
টকদই, বেরেস্তা, কাঁচা লঙ্কা, পোস্তদানা একসাথে করে ব্লেন্ড করে নিয়ে এর সাথে তেল, সরষে বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লবন ও ১ কাপ জল মিশিয়ে মাছের উপর ঢেলে দিন।
মশলা পুরো মাছে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
ঢাকনা বা ফয়েল দিয়ে ঢেকে ২০ মিনিট ২০০° তে রান্না করুন। ২০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে উল্টে আরো ২০ মিনিট রান্না করুন।
দুধ ইলিশ
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ (৪-৫টি), কাঁচালঙ্কা (৩-৪টি), কালো জিরে (১/২ চা চামচ), হলুদ গুঁড়ো (১ চা চামচ), লঙ্কার গুঁড়ো (১/২ চা চামচ), দুধ (৫০০ মিলি), তেজপাতা (১টি), সরষের তেল (৩ টেবিল চামচ)
কীভাবে বানাবেন
প্রথমে মাছ গুলো ভালো করে ধুয়ে নুন, হলুদ ও লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখুন। এবার দুধ একটা প্যানে গরম করতে বসান। তাতে তেজপাতা দিয়ে দিন। ফোটাতে থাকুন যতক্ষণ না তা অর্ধেক হচ্ছে (৪ কাপ দুধ হলে ২ কাপ হয়ে যাবে ফুটে)। এবার একটা প্য়ান নিয়ে তাতে সরষের তেল দিন। মাছের টুকরো গুলো ভেজে তুলে নিন। তারপর ওই তেলে কালোজিরে ও কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিন। তারপর হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ১০ সেকেন্ড মতো নেড়ে নিন। আঁচ কমিয়ে জ্বাল দিয়ে রাখা দুধ দিন। ভালো করে নাড়তে থাকুন যাতে দুধ দলা পাকিয়ে না যায়। পরিমাণমতো নুন দিন। আঁচ কমিয়েই রাখবেন। ফুটে উঠলে মাছের টুকরোগুলো প্যানে দিয়ে দিন। ৫-৮ মিনিট পর নামিয়ে নিন।
তিলবাটা ইলিশ
কী কী লাগবে
ইলিশ মাছ- ৫ টুকরো
তিল বাটা- ৪ চা চামচ
সর্ষে বাটা- ১ চা চামচ
পোস্ত বাটা- ১ টেবিল চামচ
টমেটো- ১টা (বেটে রাখা)
কালোজিরা- আধা চা চামচ
কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো- ১ টেবিল চামচ
হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ
লবণ- স্বাদমত
সরষের তেল- প্রয়োজনমত
কীভাবে বানাবেন
ইলিশ মাছে লবণ আর হলুদ মাখিয়ে হালকা ভেজে নিন। ওই তেলেই কালোজিরা ফোড়ন দিয়ে একেএকে টমেটো, কাশ্মীরি লঙ্কা, হলুদ আর লবণ দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। এরপর সরষে, পোস্ত, তিল একসঙ্গে মিশিয়ে অল্প পানিতে গুলে মশলার মধ্যে দিন। আরও খানিকক্ষণ কষিয়ে নিন। এরপর তেল ছাড়তে শুরু করলে পরিমাণমত পানি দিয়ে ঢেকে রাখুন। ঝোল ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছ দিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিন। ঝোল ঘন হয়ে উঠলে ওপর থেকে কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে ঢাকা দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন।
খেতে অসম্ভব সুস্বাদু তিল ইলিশ এবার গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন!
留言