কোলাখাম, দার্জিলিং জেলার কালিম্পং এ অবস্থিত একটি পাহাড়ি গ্রাম, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,৫০০ ফুট (১৯৮০ মিটার) উচ্চতায় অবস্থান করছে। এটি নেউরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের পাশে অবস্থিত, যা এই অঞ্চলের পরিবেশগত ও ভৌগলিক গুরুত্ব বাড়ায়। কোলাখাম প্রকৃতি ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য। এটি শহরের কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝে এক স্বর্গরাজ্য, যেখানে পাহাড়, বন, জলপ্রপাত ও প্রাণীবৈচিত্র্যের অপূর্ব মিশ্রণ রয়েছে।

১. নেউরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের সংযোগস্থল:
কোলাখাম নেউরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশদ্বারের কাছাকাছি অবস্থিত, যা ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কেন্দ্র। এই পার্কে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী যেমন লাল পান্ডা, হিমালয়ান কালো ভাল্লুক, মুস রেড পান্ডা, বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড ও ঔষধি গাছ পাওয়া যায়।
২. কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্যমানতা ও পার্বত্য ভূপ্রকৃতি:
কোলাখাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮,৫৮৬ মিটার) এবং অন্যান্য হিমালয় পর্বতশ্রেণির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
এর পার্বত্য ভূপ্রকৃতি ট্রেকিং, অভিযাত্রীদের আকর্ষণ করে।
৩. আবহাওয়া ও জলবায়ুগত গুরুত্ব:
কোলাখামের আবহাওয়া সারা বছর শীতল এবং আর্দ্র থাকে, যা এই অঞ্চলের সুবজ বন ও চা-বাগান গঠনে সহায়ক।এটি ভারতের অন্যতম উচ্চ বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল, যা নদী-উৎপত্তিস্থল হিসেবে কাজ করে।
৪. নদী ও জলপ্রবাহের উৎস:
কোলাখাম অঞ্চলে প্রচুর ছোট ছোট ঝরনা ও নদীর প্রবাহ দেখা যায়, যা তিস্তা নদীর উপনদীগুলোর উৎস হিসেবে কাজ করে। এই নদীগুলো পার্বত্য অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষিকাজ ও পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫. পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ:
কোলাখামের চারপাশের বনাঞ্চল পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কার্বন শোষণকারী অঞ্চলের অংশ। এখানে হিমালয়ের দুর্লভ গাছপালা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা হয়, যা এই অঞ্চলের ইকোট্যুরিজম (Eco-tourism) বিকাশের সহায়ক।
কোলাখাম শুধুমাত্র একটি সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র নয়, এটি পরিবেশগত, ভূ-প্রাকৃতিক এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি হিমালয় অঞ্চলের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, নদী উৎপত্তি, বন সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কীভাবে যাবেন?
কোলাখাম যেতে হলে প্রথমে শিলিগুড়ি, এনজেপি (নিউ জলপাইগুড়ি) বা বাগডোগরা পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া করে কোলাখাম যাওয়া যায়।
দর্শনীয় স্থান
কোলাখাম প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি অসাধারণ জায়গা। এটি হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্দান্ত দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ দেয়। কোলাখাম ও তার আশপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ও অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি রয়েছে।

১. কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোরম দৃশ্য
কোলাখাম থেকে হিমালয়ের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা (8,586 মিটার) স্পষ্টভাবে দেখা যায়। ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সময় এর সৌন্দর্য আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে।
২. নেউরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক
কোলাখাম থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এই ন্যাশনাল পার্কটি অবস্থিত। এখানে লাল পান্ডা, হিমালয়ান কালো ভাল্লুক, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ ও দুর্লভ পাখি দেখা যায়। ট্রেকিং ও বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের জন্য এটি দারুণ স্থান।
৩. লাভা মনাস্টেরি
কোলাখামের কাছে লাভা শহরে অবস্থিত জাং ডগ পালরি ফো ব্রাং মনাস্টেরি। এটি একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ মঠ, যেখানে মনোরম পরিবেশ ও আধ্যাত্মিক শান্তি পাওয়া যায়। এখান থেকে লাভার পাহাড়ি দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
৪. রিশপ (Rishop)
লাভা থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে রিশপ অবস্থিত। এটি একটি ছোট পাহাড়ি গ্রাম, যেখানে ট্রেকিং করতে এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার আরও সুন্দর ভিউ উপভোগ করা যায়।
৫. ছাঙ্গে জলপ্রপাত (Changey Waterfall)
কোলাখাম থেকে ৪ কিমি দূরে অবস্থিত এটি অন্যতম সুন্দর জলপ্রপাত। এই ১৫০ ফুট উচ্চতার জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অপূর্ব। ট্রেকিং বা গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়।
৬. টিফিন দারা ভিউ পয়েন্ট
লাভা থেকে ৩ কিমি ট্রেকিং করে যেতে হয়। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তা নদীর উপত্যকা এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এটি দেখার জন্য সেরা জায়গা।
৭. সাইলেন্ট ভ্যালি (Silent Valley)
কোলাখামের কাছাকাছি অবস্থিত এই জায়গাটি তার নিস্তব্ধতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এটি ট্রেকিং ও ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ স্থান।
৮. বার্ড ওয়াচিং ও ফটোগ্রাফি
কোলাখাম ও নেউরা ভ্যালি অঞ্চলে বিরল প্রজাতির পাখি যেমন—
হিমালয়ান মোনাল (Himalayan Monal), স্কারলেট মিনিভেট (Scarlet Minivet), হোয়াইট-থ্রোটেড লাফিংথ্রাশ,
স্লেন্ডার-বিলড স্কিমিটার ব্যাবলার ইত্যাদি দেখা যায়। পাখিপ্রেমী ও ফটোগ্রাফারদের জন্য এটি এক স্বর্গীয় স্থান।
অ্যাডভেঞ্চার ও অন্যান্য কার্যকলাপ:
ট্রেকিং: লাভা, রিশপ, টিফিন দারা, নেউরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে ট্রেকিং করা যায়।
ক্যাম্পিং: পাহাড়ি পরিবেশে ক্যাম্পিং করতে চাইলে এটি দারুণ জায়গা।
স্টার গেজিং: রাতে আকাশে অসংখ্য তারা দেখা যায়, যা ফটোগ্রাফির জন্য অসাধারণ।
নেচারওয়াক: পাহাড়ি অরণ্যের মাঝে হাঁটা ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কোথায় থাকবেন?
থাকতে পারেন ফিউশন স্টে'স এর হোম স্টে এবং রিসর্ট এ। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন 9163334396 এই নম্বরে। অথবা অনলাইন বুকিং এর জন্য ওয়েবসাইট: https://www.fusionstays.com
Comments