এমন জায়গা আর কোথায় পাওয়া যাবে, যেখানে চতুর্দিক ঘেরা পাহাড় আর অরণ্যে! তাহলে চলো লোলেগাঁও। কালিম্পংয়ের কাছেই। যাঁরা পাহাড়ের নিরিবিলি আর শান্ত পরিবেশে বসে প্রকৃতির রূপমাধুর্য উপভোগ করতে চান। যাঁরা একটু বিশ্রামের ফাঁকে ধূমায়িত পেয়ালায় চা বা কফিতে চুমুক দিয়ে প্রকৃতির সখ্য চান তাঁরা একবার ঘুরে দেখতে পারেন কালিম্পংয়ের কাছে লাভা, লোলেগাঁও। কালিম্পংয়ের অনতি দূরেই চারিদিকে পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা।

এখানে মানুষের কণ্ঠস্বর ছাপিয়ে শোনা যায় পাখির ডাক। মানুষ এখানে কম পাখি বেশি। গাছগাছালির ছায়ায় ছায়ায় আশ্রয় বড়ই মোহময়! যাঁরা পাখিপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী, অরণ্যের মাঝে গাছগাছালির ফাঁকে হাঁটতে ভালবাসেন, তাঁদের কাছে একান্ত আপন। হাঁটাহাঁটির মাঝে টুকি-উঁকি দেয় ছোট বড় ঝরনা, পাহাড়ি গ্রাম! যদি ভেবে থাকেন শুধুই অবসর, আর কিছু নয়, তাহলেও কোনও ব্যাপার নয়। এখানকার হোমস্টে থেকে চোখে পড়বে পাহাড়ি উপত্যকার মোহিনী রূপ!

আবহাওয়া পরিস্কার থাকলে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজকীয় সৌন্দর্য, যা বিস্মিত করবে! এখানকার জাদু হল পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা নিরিবিলি প্রকৃতি, নিস্তব্ধতা ভেঙে পাখিদের কলগুঞ্জন আর আকাশপথে রঙিন ডানা মেলার শব্দ। কখনও কখনও পাখিদের ডানা হতে খসে পড়ে রঙিন পালক! সেই রঙিন পালক কুড়িয়ে পকেটস্থ করার সময় মনে পড়বে শৈশব কিংবা কৈশোরের দিনগুলো।
চারিপাশ পাহাড় আর অরণ্য-ঘেরা এই অঞ্চলে পা-দিলেই মনে হবে এই তো পৌঁছে গেলাম প্রকৃতির হৃদমাঝারে! বিস্মিত হতে হয় প্রকৃতি যখন তার শুধু সৌন্দর্য দিয়ে নয়, ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখে ভ্রমণপিপাসুদের! এখানে এলেই শুনতে পাওয়া যায় কেবলই পাখির ডাক, নাসিকায় আসে অরণ্যের গন্ধ, চোখের আরাম পাহাড়ের স্নিগ্ধতা, প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মন! কয়েকটি দিন এই শান্ত পাহাড়ি আর অরণ্য পরিবেশে খুব সহজেই অতিবাহিত হবে। মনে হবে, এই তো গতকালই তো এলাম!

ইচ্ছে হলে আশপাশের কিছু জায়গা অনায়াসেই গাড়িতে ঘুরে নেওয়া যায়। যেমন,
কালিম্পং: কাছেই কালিম্পং শহর। তাই সারদিনের জন্য ঘুরে নেওয়া যায়। ভাল লাগবে।
ডেলো পার্ক: কালিম্পং ঘুরতে যাওয়ার পথে দেখে নেওয়া যেতে পারে ডেলো পার্ক। কিছুক্ষণ এখানে বসে সময় কাটানো যেতেই পারে। মন্দ লাগবে না।
লাভা: ঘণ্টা তিনেক গাড়িতে গেলেই পৌঁছে যাবেন লাভা। উজাড় করা সৌন্দর্যময় প্রকৃতি! পাইনের অরণ্যের অবিরত হাতছানি বড়ই মায়াময়। সুন্দর এখানে অপেক্ষায় ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য!
ফিক্কালে গাঁও: ফিক্কালে গাঁও, খুব অচেনা লাগছে, তাই না! অচেনাকে চিনে নিন ভাল লাগবে। কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ পাহাড়ের দর্শন অপূর্ব লাগে এখান থেকে। এমনকী হোমস্টের ঘরের বিছানায় শুয়েও এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। দেখা যায় পাহাড়ি উপত্যকার নীচ দিয়ে বয়ে চলা অপরূপ তিস্তা। দু'চোখ ভরে উপভোগ করা যায় প্রকৃতি। মুহূর্তের মধ্যে ক্লান্তি সাফ হয়ে যায় মনোলোভা প্রকৃতি দর্শনে! বিশেষ করে, যখন পাহাড়ের সঙ্গে চুম্বন-সহবাসে পড়ে থাকে মেঘমেঘালি! মনে হয়, প্রকৃতি যেন বিশাল এক ক্যানভাসে ছবি এঁকেছে!

রামধুরা: ছোট্ট শান্ত, নিরিবিলি এক গ্রাম। রামধুরার উচ্চতা প্রায় ছ'হাজার ফুট। বেশ ঠান্ডা। রামধুরার অর্থ রামের গ্রাম। রামের অর্থ আলাদা করে বলতে হবে না কিন্তু 'ধুরা' মানে গ্রাম। এখানকার মনকাড়া প্রাকৃতিক রূপসৌন্দর্য ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। চারিপাশ পাহাড় আর গাছগাছালি বেষ্টিত রামধুরা থেকে তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় তিনশোষাট ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলো চোখে পড়ে দূরে উপত্যকার ফাঁকে বয়ে যাওয়া তিস্তা। পাইন, ধুপি আর রংবেরঙের ফুল গাছের ফাঁকে উড়ে-ঘুরে বেড়ায় কতরকম প্রজাপতি আর পাহাড়ি পাখি! এ এক ভিন্ন আকর্ষণ!
ইচ্ছে গাঁও: ইচ্ছে আপনার বা আপনাদের পূরণ হবেই। কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর অপূর্ব সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখে। এছাড়াও সারাদিন মেঘমেঘালির আনাগোনা তো লেগেই থাকে পাহাড়-শরীর ঘিরে যা সৃষ্টি করে প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য! নানাধরনের রংবেরঙের ফুল, অর্কিড, পাখি দেখা এক বাড়তি পাওনা ইচ্ছে গাঁওয়ে। এখান থেকে রাত্রিবেলা সিকিমের পাহাড়ে আর দার্জিলিং শহর দেখা যায়। মনে হয় যেন, রাতের অন্ধকারে অসংখ্য জোনাকি জ্বলছে কিংবা পাহাড়ের আকাশে অগুনতি তারা ফুটে আছে।অন্ধকারের যে ভিন্ন একটা সৌন্দর্য আছে তা মালুম হয় ইচ্ছে গাঁওয়ে। তবে মূল আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা আর চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। গরম পানীয়তে চুমুক দিতে দিতে পাখির ডাক শুনতে শুনতে সময় চলে যায় অ-খেয়ালেই! পরিচয়পত্র হিসেবে আধার বা ভোটার কার্ড সঙ্গে রাখবেন। কিছু জরুরি ওষুধপত্র নিয়ে নেবেন। যেমন, জ্বর, পেটখারাপ, সর্দিকাশি ইত্যাদি। শুকনো খাবারও রাখলে ভাল।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে বাসে কিংবা ট্রেনে এনজেপি অথবা বিমানে বাগডোগরা পৌঁছে গাড়ি নিয়ে লোলেগাঁও।
কোথায় থাকবেন?
বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করুন ফিউশন স্টে'স এর 9163334396 এই নম্বরে। অথবা অনলাইন বুকিং এর জন্য ওয়েবসাইট: https://www.fusionstays.com

Comments