একটা সময় লাভা, লোলেগাঁওয়ের এ সৌন্দর্যের কথা ভ্রমণপিপাসুদের মুখে মুখে। এখন এইসব জায়গা বহুল পরিচিত। কিন্তু লুংসেল-এর কথা সম্ভবত এখনও না-জানা নয়তো অল্প জানা। যেতে পারেন আপার লুংসেল। আছে লোয়ার লুংসেলও। কালিম্পংয়ের আপার লুংসেলে গেলে মন ভরে যাবেই। পুরো পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য অপূর্ব! চমৎকার একশান্ত, সুন্দর গ্রাম। গজলডোবা, ওদলাবাড়ি হয়ে আপার লুংসেল। পথের দু'ধারে শুধুই চা-বাগান। পাথরঝোড়া চা-বাগান থেকে কমবেশি ১২ কিমি চড়াই পাহাড়ি পথ। তার পরেই লুংসেন।

চারপাশে সবুজ এক নিরিবিলি,নির্জন গ্রাম। এলাচ বাগান। লুংসেলে রাত্রিবাস এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা! এখানথেকে তিন কিমি দূরত্বে আর। সুন্দর জায়গা অপেক্ষায় আছে ভ্রমণপ্রেমীদের। ঝান্ডি থেকে সূর্যোদয় দেখা সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে মনের ভিতর উথাল-পাতাল করবে।
লুংসেল চমৎকার এক গ্রাম। একপাশ দিয়ে বয়ে যায় ছোট্ট এক পাহাড়ি নদী গীত খোলা। এই গীত খোলা থেকে হয়েছে ঘিস নদী। একটা নদী যে-কোনও জায়গার বিউটি স্পট। লুংসেলেও তার অন্যথা হয়নি। বর্ষাকালে এই নদী অবশ্য অন্য রূপ ধারণ করে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানারকমের প্রচুর পাহাড়ি পাখি এই গ্রামে। বহুরকম রংবেরঙের ফুল গাছ পাহাড়ের চড়াই-উতরাইয়ে। লুংসেল গ্রামে আসবার পুরো পথটাই রূপকথার রাজ্যের মতো!
লুংসেল থেকে দেখা যায় লাভা, লোলেগাঁও। যাওয়াও যায় আশপাশের বহু জায়গায়। যেমন-
ঝান্ডি, সুনতালে, সামাভিয়ান চা-বাগান ইত্যাদি। তবে, যাঁরা হেঁটে ঘুরতে পছন্দ তাঁদের কাছে সেরা জায়গা নোকদাড়া ঝিল। পাঁচ কিমি হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন এই ঝিলে। গিয়ে বোটিং করুন। ভাল লাগবে। গাড়িও যাবে। গাড়িতে যেতে হবে ১৫ কিমি।

পাহাড়ি গ্রাম লুংসেলে মেঘেদের আনাগোনা লেগেই থাকে। লুংসেলের শান্ত, শীতল প্রকৃতিতে যেন স্বর্গীয় অনুভূতি। চা, প্রাতঃরাশ সেরে এই অনুভূতি সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়ুন থ্রি সিস্টার্স ওয়াটারফলস এর দিকে। হোমস্টে থেকে মাত্র দেড় কিমি। পাবেন ব্রিটিশদের তৈরি হেরিটেজ পুল। হোমস্টের ঠিক পাঁচশো মিটার।
ওপর দিকে মহাকাল মন্দির। এখানে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন প্রকৃতির মাঝে। ৩৬০ ভিউ পয়েন্ট থেকে নজরে দেখা যাবে ডুয়ার্সের রূপ-মাধুর্যে। বিস্মিত হবেন। ভাববেন এত সৌন্দর্য লুকিয়ে ছিল দৃষ্টির আড়ালে। এখানেই শেষ নয়, আরও অনেককিছু আছে লুংসেল গ্রামে। তার জন্য ভোরের বেলা লেপ-কম্বল ছেড়ে উঠতে হবে। আব বিকেলের চা-কফি পান করে যেতে হবে বাসনেটদাড়া কিংবা চাকুমদাড়া হেরিটেজ। এখান থেকে দেখা যায়। মনভুলানো সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত। সবমিলিয়ে লুংসেল অবসর যাপনের। এক অন্যতম সেরা ঠিকানা।

কীভাবে যাবেন: শিয়ালদা থেকে ট্রেনে এনজেপি নেমে লুংসেন। দূরত্ব ৭০ কিমি। হোমস্টেতে বললে গাড়ি পাঠিয়ে দেবে। ভাড়া- ৩০০০থেকে ৩৫০০টাকা। তবে সবচেয়ে ভাল শিয়ালদা থেকে কাঞ্চনকন্যায় যাওয়া। নিউমাল জংশনে নামুন। ওখান থেকে লুংসেল ৩৮ কিমি। গাড়ি ভাড়া- ২৫০০ থেকে ৩০০০টাকা।
কোথায় থাকবেন: প্রকৃতির মাঝে চমৎকার এক হোমস্টে সঞ্জীবনী হোমস্টে, আপার লুংসেল। যোগাযোগ-সঞ্জীব ছেত্রী, মোবাইল- 091261 94489. সঞ্জীবের ব্যবহার অতি চমৎকার। অত্যন্ত সুভদ্র। সঞ্জীবের জন্য লুংসেল আরও ভাল লাগে। ঝরঝরে বাংলাও বলেন।
হোমস্টের ভাড়া- প্রতিদিন মাথাপিছু থাকা-খাওয়া (প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাওয়া) ১৫০০টাকা। অফসিজনে ১৩০০ টাকা।
Comments